আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস ঃ আবারো আলোচনায়

আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা ।

দেশে বিদেশে আন্তর্জাতিক মহলে বর্তমানে যে কয়টি নাম ঝড় তুলেছে, তাদের একজন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। আন্তর্জাতিক অংগনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা এই নোবেল বিজয়ী বর্তমানে ফাপড়ে পড়েছেন।

আর তাতে আন্তর্জাতিক কিছু লোক/ সংস্থা অনেক খুশি হয়েছেন, তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছেন বাংলাদেশের অনেক লোক, বিশেষ করে অনেক ব্লগার রীতিমত সুদখোরের সাজা হয়েছে এরকম একটা জটিল মন্তব্য করে আলোচনার টেবিলে ঝড় তুলতে ব্যতিব্যস্ত হয়েছেন । আমাদের দেশের কিছু স্বনামধন্য পত্রিকা ইউনুস সাহেবে ভালো কীর্তির খবর যেন তেন ভাবে ছাপালেও অথবা কোন কোন খবর না ছাপালেও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পত্রিকার প্রথম পাতায় দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন । এসব দেখে আমি বুঝার চেষ্টা করলাম যে ইউনুস সাহেব আসলে জনগণের জন্য ভালো করছেন না খারাপ করছেন ? উনি সুদখোর ? না গরীবের ব্যাংকার ? উনি বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল রাখবেন না কলংক লেপন করবেন ? সত্যি কথা বলতে আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই। তাই যদি কেউ আমার এই লেখাটা পড়ে একটু ব্যাখ্যা সহকারে বুঝাতেন, তাহলে আমি খুব ই বাধিত হতাম। অনেক ওয়েবসাইট ঘেটে আমি যা বুঝতে পারলাম, বা আমি জানি তা হলো উনি মাইক্রোক্রেডিটের নামের একটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা দিয়েছেন, যা উনার মতানুযায়ী বাংলাদেশের অগণিত নারীকে সাহায্য করেছে তাদের সংসারের উন্নতি করতে।

এই তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যঙ্ক থেকে অল্প পরিমাণে লোন দেয়া হয়া নারীদের যা তারা সুদের মাধ্যামে ফেরত দিতে থাকেন ব্যাঙ্কে। এর মাধ্যমে তারা লাভবান হতে থাকেন। এ প্রজেক্ট সফল হওয়ার কারণে উনাকে নোবেল দেয়া হয় । এখানে উল্লেখযোগ্য যে উনি নোবেল পেয়েছেন শান্তি তে। অর্থনীতিতে।

শান্তিতে উনাকে এজন্যি দেয়া হলো যে উনি স্নগসারের উন্নতি করার মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনে শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন। উল্লেখযোগ্য এসময় অনেক রাজনৈতিক নেতা তাকে প্রথমে অভিবাদন জানালেও তিনি পরবর্তীতে ক্ষমতায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে তারা সুদখো বানিয়ে ছাড়ে। এ ডামাডোলে হারিয়ে যায় কিছু সাধারণ মানুষের কথা। যারা দাবী করেছিল যে গ্রামীন বাঙ্কের কারণে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এখবরটা তখন চাপা পড়ে গিয়েছিল।

সম্প্রতি গামীন ব্যাঙ্কের অনেক শাখা সারা বিশ্বে চালু হয়েছে। মাইক্রোক্রেডিট নাকি এখন অবশ্য পাঠ্য একটা ব্যাপার। নিউ ইউর্কে থাকার সময় দেখেছি ইউনুস সাহেবের যেদিন যে ভার্সিটিতে লেকচার দেয়ার কথা সেখানে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর প্রতীক্ষা। অতি সম্প্রতি ইউনুস সাহেব নতুন আরেকটা ধারণার কথা বলেছেন। সেটি হচ্ছে সামাজিক ব্যবসা সংক্রান্ত।

উনার লেকচারটা শুনলাম মনোযোগ দিয়ে। আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। উনি যা বলতে চায়েছেন তা বর্তমানের পুঁজিবাদী আন্তর্জাতিক সরকার , সংস্থা র মতের বিরুদ্ধাচরণ। উনি বলতে চেয়েছেন এমন এক ব্যবসার কথা যেখানে মুনাফা হবে বিনিয়োগের সমান। বিনিয়োগ এর সমান মুনাফা উঠে আসলেই মুনাফা নেয়া বন্ধ হবে।

তাই বলে কি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে ? না, ব্যবসা নিজের মত চলতে থাকবে । লাভ কি ? লাভ হবে এ ব্যবসার মূল লক্ষ্য হলো সমাজের উন্নয়ন, কেননা মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য অবশ্যি খালি মুনাফা অর্জন হওয়া উচিত না। মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আরো বড়। আর তা হচ্ছে সমাজের কল্যাণ। উদাহরণ হিসেবে ডানোন কোম্পানির সাথে তারা আইস্ক্রিম বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে, এই আইস্ক্রিমের সাথে মিলিয়ে দেয়া হলো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা ওইসব বাচ্চাদের শরীরের কাজে লাগবে।

তেমনি আরেকটা ব্যবসা দাড় করানোর চেষ্টা চলতেছে বিনিয়োগ= মুনাফা দর্শন কে সামনে রেখে , আর তা হলো যাতে সবার পায়ে জুতা থাকে, অর্থাৎ কেউ যেন খালি পায়ে না থাকে, এজন্য খুব কম দামে জুতা বিক্রি করার প্রচেষ্টা। লাভ ? যাতে এর মাধ্যমে নিকেটর এমেরিকানা বা এনকাইলোস্টমা ডিউডেনালি বাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সম্প্রতি নরওয়ের সাথে ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হলে তারা একে একে অনেক অভিযোগ আনতে থাকে। যা একিসাথে বাংলাদেশের একজন নোবেল বিজয়ীকে অপদস্থ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কে ও ছোট করার সামিল , অন্তত আমার কাছে। তাদের একটা অভিযোগ ছিল , যে গ্রামীণ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক অনেক শাখা প্রশাখা হওয়ার পরে এ ব্যাপারে আসলেই কাজ হচ্ছে কিনা তা দেখতে গিয়ে তারা গিইয়েছিলেন ভারতে ।

তারা সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, যে ক্ষুদ্র লোন সুদসহ ফেরত দিতে না পারায় অনেক কৃষক আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। আবার অনেকে পথে বসেছে। তাহলে যে গরীবের ব্যাঙ্ক বলা হলো। তাহলে কি নোবেল কমিটি আগে যাচাই করে নাই। কারণ বাংলাদেশে তো এই অভিযোগ আগে থেকেই ছিল।

আরো একটা ব্যাপার দেখা যায় , যা লোন দেয়া হয়েছিল, তার সিঙ্ঘভাগ ই আর ফেরত আসে নাই । তাহলে রহস্য টা কোথায় ? আরেকটা অভিযোগ হলো এই , গ্রামীণ ব্যাংক কে দেয়া দাতাদের ১০ কোটি ডলার উনি সরিয়েছেন । উনি সরিয়েছেন কোথায় ? গ্রামীণ কল্যাণ নামের আরেকটা সংস্থায় । যেটা তে কোন মুনাফার কিছু নেই, যতদূর আমি জানি। আর এটাকে এমন ভাবে ফোকাস করা হলো যেন উনি চুরি করেছেন।

আমার মতে যদি উনি মহৎ উদ্দেশ্যে ও কাজটা করে থাকেন , তাও উনি ভুল করছেন শর্তের বরখেলাপ করে। তারপরেও অনেক প্রশ্ন থাকে। একটা ব্যাংক কই তার সিস্টার কোম্পানিকে দিতে বা লোন দিতে পারে না? সময় ই সব বলবে কি সঠিক না কি ভুল ? ডঃ ইউনুস হয়তো ভুল করে থাকতে পারেন, কিন্তু উনি সামাজিক ব্যন্সা সম্পর্কে যা বলতে চেয়েছেন, তা হয়ত উনি ভালোমত বুঝাতে পারেন নি, অথবা স্ত্যিকার ভাবে বুঝতে আমাদের আরো সময় লাগবে। কিন্তু নতুন যে ধারণা টা উনি দিয়েছেন, তা নিয়ে অনেক চিন্তার সুযোগ আছে। সবশেষে এক্টাই কথা, অন্যের সমালোচনা করার আগে আত্মসমালোচনা করা উচিত।

নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত আমি কি করছি। আর অন্যের সমালোচনার চেয়ে প্রশংসা করলে কিন্তু ভাল বই খারাপ লাগে না। ড; ইউনুস দোষী হন, বা নির্দোষ হন, উনি কিছু নতুন ধারণার প্রবর্তন করেছেন। সেসব ধারণার দুর্বল দিকগুলো সংশোধন করে আমাদের আরো নিত্য নতুন যুগোপযোগী ধারণা নিয়ে সামনে আগানো উচিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।