কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!
২৪
নিশু শুয়ে আছে। তার হাতে দেয়া হচ্ছে ইনজেকশন, আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে তার শরীর। একটু পরেই মাথার পিছনে ঘ্যাঁচ করে কিছু একটা ঢোকানোর সেই যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি টের পেল নিশু।
নিশু ভেবেছিল সে অজ্ঞান হবে। কিন্তু হল না।
বরং অতি শীঘ্রই আবার স্বাভাবিক হয়ে এল তার হার্টবিট। তবে কি সে সিমুলেশনে প্রবেশ করে নি? তবে কি সিমুলেশনের ডেট পেছানো হয়েছে?
নিশু উঠে গিয়ে তার ইন্টারফেসটা দেখল। মাথার পিছনে যে চোখা জিনিসটা ঢুকানো হয় সেটা খোলা। সামনে একটি কম্পিউটার মনিটরে কি সব হিজিবিজি লেখা।
নিশু দেখল, কম্পিউটারে তার নামেই আলাদা একটা ফাইল আছে, ফাইলটা ওপেন করল সে।
অনেকগুলো ফাইল ওটায়। একেকটার একেক নাম। নামগুলো দেখে মনে হল নিশুর টুকরো টুকরো স্মৃতি আলাদা আলাদা ফাইল করে এই কম্পিউটারে সেভ করা হয়েছে।
নিশু নিজে নিজে তার ইন্টারফেসটা মাথার পিছনে ঢুকিয়ে দিল। জ্ঞান হারাবার আগে Darkest memories of Nishu নামের ফাইলটার ডবল ক্লিক করে গেল সে।
***
গভীর রাত। একা ঘরে ঘুমিয়ে আছে নিশু। হঠাৎ দরজায় টক টক করে শব্দ। “নিশু মা, দরজা খোল। দরজা খোল মা”।
নিশু খুলল। নিশুর নিঃসন্তান বড় মামা তার ঘরে প্রবেশ করল। তিনি নিশুর মুখ বাঁধলেন। ব্যাপক ধস্তাধস্তির সাথে যা করার তা-ই করলেন। তারপর কাউকে কিছু বললে নিশুকে গলা টিপে হত্যা করার হুমকি দিয়ে ভেজা পাজামার ফিতা বেঁধে চলে গেলেন তিনি।
***
নিশুর বয়স তখন পাঁচ। সে ঘুমাচ্ছে মায়ের পাশে। বাবা তখনও বাসায় ফেরেন নি।
হঠাৎ দরজার শব্দ।
কে?
আমরা পুলিশ।
দরজা খুলুন।
দরজা খোলা হল। পুলিশ মা-কে ডেকে নিয়ে গেল কাকে যেন শনাক্ত করার জন্য। পাঁচ বছরের নিশু এত কিছু বুঝল না অবশ্য।
তার শুধু মনে আছে, ফিরে আসার পর মা তাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল।
মায়ের কান্না দেখে অকারণে কেঁদেছিল সে-ও।
***
ডাক্তারের চেম্বার। নিশু স্বামীর হাতটা শক্ত করে চেপে বসে আছে।
ডাক্তার বললেন, “ভেঙ্গে পড়বেন না। শুনুন, আপনার স্বামীর মস্তিষ্কের কোষ আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাই তার স্মৃতি দিন দিন লোপ পাচ্ছে। অবস্থা আরও খারাপ হবে সামনে। তবে এখনই শিওর হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না”।
“এটার কি কোন ট্রিটমেন্ট নেই? ” বলল নিশু।
“ডাক্তারীতে নেই।
এটা সাধারণত বুড়ো বয়সে হয়। আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে সেটা হয়েছে জোয়ান বয়সে। এর কোন ওষুধ নেই। তবে মিরাকল তো হতেই পারে, তাই না? নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন”।
নিশু শক্ত করে তার স্বামী সালেহ তিয়ামের হাতটা চেপে ধরে।
***
বেড রুম। কামলীলায় মত্ত সালেহ তিয়াস ও তার বেশ্যা বান্ধবী।
নিশু আস্তে করে বিছানার নিচ থেকে বের হয়ে আসল। তার হাতে ধরা একটা বটি। সে বটি উঁচু করে...আ-হ-হ-হ...প্রচণ্ড ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল নিশু।
২৫
“কি করছ তুমি? এখন এগুলো করার টাইম আছে? ”
নিশু দেখল সে তার বেডে শুয়ে, ইন্টারফেসটা খোলা। তার সামনে দাঁড়ানো এক সুদর্শন তরুণ, সম্ভবত সে-ই খুলেছে ইন্টারফেস।
“কে আপনি? ”
“আমি? আমার পরিচয় তো এখানে ইম্পরট্যান্ট না। যেটা ইম্পরট্যান্ট সেটা হচ্ছে এখন তোমাকে পালাতে হবে”।
“পালাতে হবে? কেন? ”
“ওরা তোমাকে যেতে দেবে না।
আজীবন এখানে বন্দী করে রাখবে”।
“কি বলছ তুমি এসব? ”
“নিউরাল স্টেম সেল রিসার্চ সফল হয়েছে। ওরা এখন একই প্রতিযোগী বছরের পর বছর ব্যবহার করবে। CNS disorder ছাড়াই। আর যাদের ব্রেইন স্টেম সেল রিজেক্ট করবে তাদের মেরে ফেলবে।
প্রমাণ নষ্ট করার জন্য। তুমি পালাও”।
“তুমি এমন কোন ভাবে মারা যাও যেটার কথা এর আগে কেউ কখনো চিন্তাও করে নি”।
“হোয়াট? তুমি আমাকে সুইসাইড করতে বলছ? ”
“না। শুধু সিমুলেশনে ওভাররাইড করে বের হবার উপায়টা বাতলে দিলাম”।
“হোয়াট! ” এবার নিশুর বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা থাকল না, “এটা কি একটি সিমুলেশন? ”
“ইয়েস”।
তখন জোরে জোরে শব্দ করে কে বা কারা দরজা ধাক্কাতে লাগল। নিশু প্রশ্ন করল, “তুমি কে? ”
“আমি? দ্যা শ্যাডো। আর হ্যাঁ, আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখ”।
হঠাৎ দরজা ভেঙ্গে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ল একগাদা সামরিক পোশাক পরিহিত পুলিশ।
এসেই যুবকের দিকে গুলি ছুড়ল তারা। যুবক পড়ে গেল।
“হ্যান্ডস আপ! ”
নিশু হাত তুলে দাঁড়াল। পুলিশ বলল, “আর ইউ মিস নিশু? ”
“ইয়েস”।
“আপনি আমাদের সাথে চলুন, মিস নিশু, এখন আপনি মুক্ত”।
নিশুর হঠাৎ করেই মনে হল এটাই সত্যি। সত্যিই পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে এসেছে। এখন সে মুক্ত, স্বাধীন।
পুলিশের সাথে সাথে নিশু করিডোরে হাঁটতে লাগল। নিশু দেখল, আশেপাশের রুমগুলো থেকে প্রতিযোগীদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অনেক গলি ঘুপচি পার হয়ে অবশেষে নিশুরা মেইন গেটের সামনে এসে উপস্থিত হল। পুলিশ প্রধান বললেন, “এটাই হচ্ছে সিমুলেশনের শেষ দরজা। এটা পার হলেই তোমাদের মুক্তি”।
প্রতিযোগীরা স্পষ্টতই দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল। একভাগ বলল, সিমুলেশনের লাভের টাকা না নিয়ে তারা যাবে না।
অন্য দল পুলিশের কাজকে স্বাগত জানাল”।
প্রতিযোগীদের সংখ্যা গুণে দেখা হল। মাত্র ছেচল্লিশ জন। তখনই সেই অস্ট্রিয়ান তরুণ চেঁচিয়ে উঠল, “আমার বোন! ”
পুলিশ অফিসার বললেন, “কোথায় তোমার বোন? ”
তরুণ বলল, ওদের মগজ স্টেম সেল রিজেক্ট করেছে। এখন ওরা কিছুই মনে করতে পারছে না।
ওদের হয়তো প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোথাও বন্দী করে রাখা হয়েছে। হয়তো ওদের মেরে ফেলা হবে”।
পুলিশ অফিসার বললেন, “তাহলে চল, ওদের খুঁজে বের করি”।
ঠিক এই সময় নিশুর মনে পড়ল দ্যা শ্যাডোর শেষ কথা। সে তার বুকে হাত দিল।
এবং একটু পরে চমকে উঠল সে।
***
সিমুলেশনের গার্ডদের সাথে ব্যাপক গোলাগুলি হল পুলিশদের। শেষ পর্যন্ত পুলিশরাই জয়ী হল। বিভিন্ন রুমের দরজা ভেঙে নার্ভাস ডিজেনারেশনে আক্রান্ত প্রতিযোগীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হতে লাগল।
একে একে উদ্ধার হল অনেকেই।
কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সবাই একত্রিত হল বড় হলরুমে।
পুলিশ বলল, “এখন আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাব। তারপর সিমুলেশনের পুরো স্থাপনাটা ডায়নামাইট দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে”।
প্রায় সবাই তাকে হই হই করে স্বাগত জানাল।
ঠিক তখনই নিশু সামনে এগিয়ে গেল। এতক্ষণ তার লেগেছে শুধু চিন্তা করতে।
বুকে হাত দিয়ে নিশু দেখেছিল তার হার্টবিট বুকের ডান পাশে।
অথচ স্বাভাবিকভাবেই তার হার্টবিট থাকার কথা বাম দিকে। তার অর্থ...
তার অর্থ এই মুহূর্তে সে একটা প্রোগ্রামের মধ্যে আছে।
এই জগতটা তার প্রকৃত জগৎ নয়।
সাথে সাথে নিকটস্থ পুলিশ অফিসারের পিস্তলটা চকিতে তুলে নিয়ে ঠিক নিজের বাম চোখের উপর গুলি করল নিশু।
২৬
অফিসার ডেভিড সিমকক্স গোপন একটা অভিযানের পরিকল্পনা করেছেন। সিমুলেশনের স্থাপনা কোথায়, সেখানে কে বা কারা আছে, সেখানে মূলত কি হয় - সবকিছু বের করার জন্যই তার এ অভিযান।
বুড়োর দেখানো পথে গভীর রাতে দুই জীপ ভর্তি পুলিশ নিয়ে সিমুলেশন বিল্ডিংয়ের দিকে রওনা হলেন সিমকক্স।
অনেক পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি যে জায়গাটায় পৌঁছুলেন সেটা শহরের প্রধান নদীর পাড়।
সিমকক্স হা করে তাকিয়ে রইলেন। কোথায় সিমুলেশন? চারদিকে অথৈ পানি।
২৭
বাস্তবে জেগে উঠল নিশু। মাথায় তার প্রচণ্ড ব্যথা।
নিজের হাতে টেনে ইন্টারফেসটা বিচ্ছিন্ন করে দিল সে। তারপর সন্তর্পণে গিয়ে দরজার নব ঘোরাল নিশু।
না, এবার আর কোন কারেন্ট শক হল না। নিশু নিঃশব্দে বাইরে বেরিয়ে এল।
বাইরে বেরিয়ে রাকিবিল হাসানাতকে খুঁজে বেড়াতে লাগল সে।
কিন্তু কোথাও পেল না তাকে।
পরাবাস্তবে দেখা অস্ট্রিয়ান তরুণের কামরায় হুট করে ঢুকে পড়ল সে। নার্সরা তাকে দেখে চমকে উঠল, কিন্তু কিছু বলল না। সরে দাঁড়াল তারা।
অস্ট্রিয়ান তরুণের ইন্টারফেস ঘ্যাঁচ করে টেনে বার করল নিশু।
তরুণ আর্তনাদ করে উঠে বসল।
নিশু বলল, “চলো”।
তরুণ বলল, “কোথায়? ”
“অন্যদের মুক্ত করতে হবে”।
নিশু যখন অস্ট্রিয়ান তরুণের হাত ধরে বের হয়ে আসছে, তখনই হঠাৎ হলরুমে শুরু হল প্রচণ্ড চেঁচামেচি। দর্শকদের মধ্যেও গুজব ছড়িয়ে গেছে যে স্টেম সেল রিসার্চ সফল হয়েছে, এখন একই প্রতিযোগী সিমুলেশনে থাকবে বছরের পর বছর।
আর যারা রিজেক্ট করবে তাদের হয় বাকি জীবন ভেজিটেবল হয়ে কাটাতে হবে নয়তো নিশ্চিত মৃত্যু।
দর্শকরা রাগে ফেটে পড়ছে। প্রক্রিয়াটা এত অমানবিক সেটা তো তাদের আগে জানানো হয় নি। তারা এখন সবাই টাকা ফেরত চাচ্ছে। সিমুলেশন ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে তারা সবাই।
একটু পরেই কর্তৃপক্ষে নির্দেশে দর্শকদের উপর শুরু হল এলোপাতাড়ি গুলি।
***
দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন প্রাণপনে এক্সিটের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। এই এক্সিটটা পানির নিচে, এটা খুললে সাথে সাথে সরসর করে পানি ঢোকা শুরু করবে সিমুলেশনের মধ্যে।
কিন্তু তারা এক্সিটের কাছে পৌঁছাতে পারলেন না। তার আগেই গার্ডদের গুলি তাদের ধরাশায়ী করল।
আর ঠিক তখনই ডায়নামাইট ব্লাস্টে বিস্ফোরিত হল এক্সিট। ওখান দিয়ে প্রবেশ করলেন ডুবুরির পোশাক পরিহিত অফিসার ডেভিড সিমকক্স, তার দল ও গ্যালন গ্যালন পানি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।