আলম খোরশেদের বিশদ বাঙলা
নুশেরা
(বিশিষ্ট লেখক আলম খোরশেদ । দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন মন্ট্রিয়লে । একসময় সেই আবাস গুটিয়ে ফিরে গেছেন নিজ ঢেরায়- চট্টগ্রামে। সৃষ্টিশীল মানুষেরা সৃষ্টিহীন সময় কাটাতে পারেন না বলেই বোধ হয় আলম খোরশেদ সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন এক মাধ্যম। চট্টগ্রামে তিনি গড়ে তুলেছেন বিশদ বাঙলা।
আলম খোরশেদের নতুন সৃষ্টি নিয়ে এই লেখাটি পাঠকদের আগ্রহ বিবেচনায় একটি ব্লগ থেকে পূণ:প্রকাশিত হলো । বি.স.)
১.
চট্টগ্রাম শহরে পঠন-পাঠনে শিল্প-সংস্কৃতিতে আগ্রহী সবার কাছে খুব পরিচিত একটি নাম বিশদ বাঙলা। শহরের মেহেদীবাগ এলাকায় রাস্তার ধারের একটি বাড়ীর দোতলায় সব বয়সী পাঠকের আনাগোনা চলে সারা বছর। অর্থবহ ও সুন্দর সময় কাটাতে চাইলে সে এক দারুণ জায়গা।
অপরিসর সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই কিছুটা আঁচ পাবেন কী আছে অথবা কী হয় এখানে।
প্রবেশ দরোজা। এখানে পৌঁছুলেই শুনতে পাবেন, মন ভালো করা আবহসঙ্গীত বেজে চলেছে। রিকশা পেইন্টিংএর বর্ণিল রূপ পুরো বিশদ বাঙলা জুড়ে। অফিসঘরের নাম মায়ের দোয়া।
আলীবাবার গুহার চমক নিয়ে "খাজাবাবা"।
খাজাবাবার ভেতরে আছে সারা দেশ থেকে সংগৃহীত চারু ও কারু কর্ম, কুটির ও হস্তশিল্পের বিশাল সম্ভার। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উতপাদিত বিশেষ কিছু পণ্য (রসমালাই, কাঁচাগোল্লা, ঘি, চাল, মশলা)। এই অংশটি পার হয়ে বিশদ বাংলার প্রধান আকর্ষণ তার লাইব্রেরি। ছবিতে দেখুন বইপুস্তক, পোস্টার আর সঙ্গীত সম্ভারের একাংশ; সিডির সংগ্রহশালাটির নাম "কোমলগান্ধার"।
পেটপূজা করতে চাইলে আছে "চাতক"।
মুড়িচানাচুর মাখা থেকে শুরু করে ব্ল্যাক টি পর্যন্ত কুড়ির অধিক মেনু থেকে বাছাই করা একটু কঠিন। চাতকের অন্দরেও চে থেকে প্রীতিলতা সবাই আছেন পোস্টারে।
বৃহস্পতিবারে থাকে নানান আয়োজন; শিল্প-সন্ধ্যা, সংস্কৃতি-সন্ধ্যা ইত্যাদি। স্বল্পশ্রুত রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর অথবা ধ্রুপদী সঙ্গীতের জলসা; পুস্তকালোচনা থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী-- রকমারি আয়োজন থাকে "পরম্পরা" নামের ঘরটিতে। এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত।
যে কেউ আসন নিতে পারেন দর্শকসারিতে, বিনা দর্শনীতে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী দর্শককে এখানে নিয়মিত আসতে দেখা যায়। অন্য সময়ের "পরম্পরা"র ছবি দেখুন।
পেছনের বারান্দায় চলে একটু কমবয়সীদের উচ্ছল আড্ডা। সেখানকার নামটি খেয়াল করা হয়নি, তবে দেখেছি টয়লেটের নাম "প্রক্ষালন" ।
বেরিয়ে যাবার আগে দেখে নিতে ভুলবেন না পরবর্তী বৃহস্পতিবারের আয়োজন-সংবাদ।
২.
বিশদ বাঙলার বিশাল মানুষটিকে চলুন জানি এইবার। তিনি আলম খোরশেদ। নিজের কথায় নিজেকে চিনিয়েছেন এভাবে: আশৈশব পড়ুয়া, সর্বভূক পাঠক। প্রকাশিত ১৭টি গ্রন্থ মূলত প্রবন্ধ, অনুবাদকর্ম ও সম্পাদনাভিত্তিক।
ক্যাডেট কলেজ এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রটি নির্বিচার পাঠেই জীবনের বেশীরভাগ সময় ব্যয় করেছেন। সত্তর দশকের শেষ এবং আশির দশকের গোড়ার দিকে বুয়েটে তাঁর হলজীবনের বন্ধুদের মুখে শোনা যায়, কীভাবে পরীক্ষার আগের রাতেও নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে নিশ্চিন্তে ফিরতেন আলম খোরশেদ। চেহারা এবং গৌরবর্ণের কারণে নুরলদীনের সারা জীবনসহ মঞ্চের বিভিন্ন নাটকে ইংরেজের চরিত্র ছিলো তাঁর জন্য বাঁধা । শুধু লেখালেখি করবেন বলে বহু বিচিত্র জায়গায় ঘুরেছেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য; প্রায় দেড় যুগের মতো প্রবাসে কাটিয়েছেন। কিন্তু প্রথমত পঠন-পাঠনের চাপে, এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিশদ বাঙলার বিশাল আয়োজন সামাল দিতে, লেখার সময় পেয়েছেন কম।
আলম খোরশেদ এবং তাঁর বিশদ বাঙলার জন্য সর্বান্তঃকরণ শুভকামনা রইলো।
http://www.notundesh.com/onnoghor.html
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।