আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্ল্যাকওয়াটার-মনস্যান্টো-বিল গেটস



ব্ল্যাকওয়াটার-মনস্যান্টো-বিল গেটস বাগদাদের শেষ অস্তিত্বটুকুকে নিশ্চিহ্ন করতে ২০০৯-এ আমেরিকা ইরাকের মাটিতে নামিয়ে ছিলো দুনিয়ার সর্ববৃহৎ বেতনভোগী আত্মঘাতী স্কোয়াডকে। পেন্টাগণের নিজস্ব ঠিকাদার সংস্থা এই আত্মঘাতী স্কোয়াড রক্তে ভাসিয়ে ছিলো বসরার মাটিও। কী নৃশংসতায় মার্কিন টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, অ্যাপাচে হেলিকপ্টার গানশিপ, স্মার্ট বোমার অহরহ আঘাতে দ্রুত নিশ্চিহ্ন করেছিলো ইরাকের জনপদ। আগুন জ্বালিয়েছিল সাদ্দামের সাম্রাজ্যে। খুন করেছিলো হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে।

ঠিক যেমনটা চেয়েছে ওয়াশিংটন। সংবাদমাধ্যমের কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে নৃশংস সংস্থা হিসেবেই ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর খ্যাতি। যখন উৎপাদনশীল সবল সামাজিক পুঁজির প্রাণশক্তিকে পৃথিবীর কোনো প্রান্ত থেকে নি:শেষে মুছে ফেলা হয়, তখন অন্য কোনো প্রান্তে ব্যক্তি মালিকানার পুঁজি স্ফীত হয়ে বিপুলায়তন পেতে থাকে, বিশেষ করে যখন পুঁজিবাদ অতি উৎপাদন আর অতি সক্ষমতার রুগ্নতায় রোগাক্রান্ত। ইরাকে এই প্রাণশক্তি মুছে ফেলার কাজটা দ্রুত সেরে ছিল এরিক প্রিন্সের সংস্থা ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর আত্মঘাতী স্কোয়াড। ফুলে ফেঁপে উঠেছিলো একটা কদর্য মার্কিন বেসরকারী সংস্থা।

যদিও পেন্টাগণের এই বেসরকারী হিংস্র আড়কাঠিদের নৃশংসতার কোনো দায় নিতে হয় নি হোয়াইট হাউসের মাতব্বরদের। ইরাককে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এখন নিজেদের রক্তাক্ত হাত মুছতে চাইছে এরিক প্রিন্সের সংস্থা। খুনের ব্যবসার চরিত্র বদলেছে দ্রুত। ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর রাতারাতি নাম বদলে হয়েছে ‘জি সার্ভিসেস’। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন সি আই এ অফিসাররাও নেমে পড়েছেন কীভাবে ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর কুখ্যাতি মোছা যায়।

কোম্পানির নাম বদলে এরিক প্রিন্স বেশ কিছুদিন ধরেই গোয়েন্দাগিরি, আধা সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ কিংবা বহুজাতিক কোনো কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার চেষ্টা করছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত জোট গড়েছে বহুজাতিক কোম্পানি মনস্যান্টোর সঙ্গে। জোট গড়া ভুল হবে, বরং বলা ভালো গোটা ‘জি সার্ভিসেস’ কোম্পানি কিনে ফেলেছে মনস্যান্টো। সম্প্রতি ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধে এই খবর ফাঁস করেছেন জেরিমি স্কাহিল। স্কাহিল লিখছেন, মনস্যান্টো কিংবা শেভরনের মতো মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাগুলি নৃশংস গোয়েন্দাদের তাদের সংস্থায় যুক্ত করছে।

ধরুন, সি আই এ-র প্রাক্তন এক ডিরেক্টর কাফের ব্ল্যাকের কথা। নিজেদের সংস্থার গোয়েন্দাগিরির জন্য এই কাফেরের সঙ্গে মনস্যান্টো চুক্তি করেছিলো ২০০৮সালে। এই কাফেরের কাজ মনস্যান্টোর হয়ে গোয়েন্দাগিরি করা, পশুপ্রেমী সংস্থা কিংবা জি এম বিরোধী আন্দোলন দমন করা। যদিও মনস্যান্টোর অধিকর্তা কেভিন উইলসন তা অস্বীকার করেন। কিন্তু স্কাহিলের কাছে কাফের ব্ল্যাকের পাঠানো কিছু ই-মেলের কপি মনস্যান্টোর গোয়েন্দাগিরির কথা ফাঁস করে দিয়েছে।

ই-মেলে কাফের স্বীকার করেছেন, উইলসনের সঙ্গে যে প্রাক্তন সি আই এ কর্তাদের কথোপকথন হয় তা ব্ল্যাকওয়াটারের নিজস্ব ই-মেলের মাধ্যমেই। শুধু তাই নয়, কাফের বলেই ফেলেছেন, গোয়েন্দাগিরি কিংবা ষড়যন্ত্রের জন্য মনস্যান্টো ২০০৮-এ ১লক্ষ ২৭হাজার মার্কিন ডলার খরচ করেছিলো। ২০০৯-এ ১লক্ষ ৫হাজার মার্কিন ডলার। হালফিলের বিশ্ব কৃষি বাজারের একচেটিয়া বা প্রায়-একচেটিয়া কারবারকে কব্জা করে রেখেছে এই মনস্যান্টোসহ ছয় সংস্থা। এরাই নিয়ন্ত্রণ করে দানাশস্যের বিশ্ব বানিজ্যের ৮৫শতাংশকে।

এই একচেটিয়াকরনের মধ্যে দিয়েই বহুজাতিক সংস্থাগুলি এখন নিয়ন্ত্রন করছে তাবৎ বিশ্বের খাদ্যপণ্যের দামকে। তাদের ক্ষমতা এতটাই যে, কেনার সময় তৃতীয় দুনিয়ার কৃষককে দাম দিচ্ছে নামমাত্র। আর বিশ্ব বাজারে তা বিকোচ্ছে চড়ামূল্যে। আর এভাবেই বানাচ্ছে মুনাফার পাহাড়। তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো মুনাফা করেছে বীজ প্রস্তুতকারক মনসান্টো।

ভাবতে পারেন, তাদের মুনাফার বৃদ্ধির হার ৫৪শতাংশ। মনসান্টো,কার্গিলরা এখানেই থেমে থাকে নি। এই সময়েই তারা গরিব দেশগুলিকে বুঝিয়ে ছেড়েছে দেশীয় চাহিদার কথা মনে রেখে উৎপাদনের বদলে রপ্তানিমুখি কৃষিনীতি নেওয়ার জন্য। বিশ্ব পুঁজিবাদের মুখপত্র ‘দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল’-এ পাতাজোড়া শিরোনাম, ‘বিশ্বায়িত খাদ্য সঙ্কট যত বাড়ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যশস্য কোম্পানিগুলির মুনাফা’। প্রতিবেদনে অসহায় স্বীকারোক্তি,‘এই মুহূর্তে বিশ্ব যখন খাবারের জন্য দাঙ্গার মুখোমুখি, তখন ডাকসাইটে কৃষি সংস্থাগুলি এক ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে—এই চ্যালেঞ্জ বিপুল মুনাফার চ্যালেঞ্জ’।

আর এসবের জন্যই মনস্যান্টোর প্রয়োজন নৃশংস গোয়েন্দাগিরি! স্কাহিল এখানেই শেষ করেন নি। ফাঁস করেছেন আরো ভয়াবহ তথ্য। ‘দ্য নেশনস্‌’-এ প্রকাশিত খবর বলছে, মনস্যান্টোর ৫লক্ষ শেয়ার কিনে নিয়েছে বিল গেটস এবং মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশন। যার মূল্য ২কোটি ৩০লক্ষ মার্কিন ডলারেরও বেশি। ভাবুন, দুই বহুজাতিক কোম্পানির মিলনের কথা।

বিল গেটস এখন কম্পিউটার দুনিয়ার ৯০শতাংশের নিয়ন্ত্রক। আর মনস্যান্টো কৃষিক্ষেত্রে বীজ প্রস্তুতকারক সংস্থা হিসেবে বিশ্বের ৯০শতাংশ বাজারের নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের একচেটিয়া কারবার ফুলে ফেঁপে ওঠার পেছনে রয়েছে কতো রক্তাক্ত ইতিহাস! বিল গেটস অবশ্য বলার চেষ্টা করেছেন, ফাউন্ডেশনে তাঁদের আর্থিক সাহায্য থাকলেও, তাঁর কোম্পানির সঙ্গে ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিল গেটস যাই বলুন, একথা ঠিক মনস্যান্টোর সঙ্গে তাঁর জোট যে আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে তা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাছে অজানা নয়। আরও দ্রুততার সঙ্গে ধ্বংস হবে বিশ্বের গ্রামীণ জীবন-জীবিকা।

গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে তাদের চিরাচরিত বীজ উৎপাদনের অধিকার। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে জিন প্রযুক্তির বীজ। ফলে বিল গেটস-মনস্যান্টো ঠিক করে দেবে কোথায় কি চাষ হবে। কোন্‌ দেশে কোন্‌ খাদ্য কতোটা সরবরাহ হবে। খাদ্যের মূল্য কি হবে কিংবা মানুষ কি খাবে।

মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চাবি কাঠি চলে যাবে এই নৃশংস বহুজাতিক সংস্থার জোটের হাতে। আর তাতে বাধা এলে মনস্যান্টোর অনুগত ‘ব্ল্যাকওয়াটার’-এর খুনে বাহিনী তো আছেই!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।