আমরা অহরহই বিভিন্ন বইপত্র,খবরের কাগজ কিংবা ম্যাগাজিনে ইলিউশন,হ্যালুছিনেশন এবং ডিল্যুশন- সাইকিয়াট্রির এই তিনটি টার্ম পেয়ে থাকি। এছাড়া যারা ইংলিশ মুভি দেখতে ভালোবাসেন,তারাও নিশ্চয় স্বীকার করবেন মুভিতে এই কথা তিনটি মুড়িমুড়কির মত ইউজ হয়। প্রকৃতার্থে শব্দ তিনটি দিয়ে কি বুঝায় কিংবা তাদের মধ্যে পার্থক্যটা আসলে কি এটা ব্যাখ্যা করাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
ইলিউশন-হ্যালুছিনেশন-ডিল্যুশন বুঝার আগে উপলব্ধি বা perception জিনিসটা কি সেটা বুঝতে হবে। ধরুন,আপনি একটি বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছেন।
আপনার কানে আসছে অসংখ্য বাসের প্যা পোঁ,মানুষের হট্টগোল। খেয়াল করে ভাবুন,শব্দ যতই হোক,এইসময়ে যদি আপনাকে কেউ আপনার নাম ধরে ডাকে,আপনি কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে ওই ডাকের প্রতিই রেসপন্স করবেন।
অর্থাৎ কি দাড়ালো?পারিপার্শ্বিকতা থেকে আমাদের যতই ইন্দ্রিয় অনুভূতি(sensory stimulation) আসুক না কেন,আমরা মনোযোগী হই নির্দিষ্ট কিছু অনুভূতির দিকে। বাকিগুলোকে মস্তিষ্ক সচেতনভাবে ইগনোর করে। এই ব্যাপারটাকেই বলা হয় উপলব্ধি(perception)।
১. ইলিউশন(illusion)
ইলিউশন এবং হ্যালুছিনেশন মূলত উপলব্ধিজনিত(perception) সমস্যা। ভ্রান্ত উপলব্ধি(misperception) কিংবা অনুভূতির গঠনগত বিকৃতির(physical distorsion of stimuli) কারনে আমাদের মস্তিষ্ক ইন্দ্রিয় অনুভূতির যে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে,সেটাই ইলিউশন। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হবে। ধরুন আপনি জ্যোৎস্না রাতে একা একা কোন নির্জন এলাকা দিয়ে যাচ্ছেন। হালকা চাদের আলোয় রাস্তার পাশে থাকা একটা ঝোপ দেখে আপনার মনে হল,সাদা কাপড় পরা একটা বুড়ি বসে আছে।
বাতাসে ঝোপের পাতা একটু নড়ে উঠল,আপনার মনে হল বুড়ি আপনাকে হাত নেড়ে ডাকছে। আপনি ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন।
ভাবুন,আপনি কিছু একটা দেখছেন,সেটা হয় ঝোপ নয় বুড়ি,তার মানে আপনার দর্শন অনুভূতির কোন সমস্যা নেই। এবং যা দেখছেন সেখানেও কিছু আছে,সেটাহয় গাছ নয় বুড়ি,অর্থাৎ স্টিমুলাসেরও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আলোর স্বল্পতার কারণে ব্যাপারটা আপনার কাছে ভ্রান্ত উপলব্ধি হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
এটাই ইলিউশন।
ইলিউশন সাধারণত কোন মানসিক রোগের সাথে সম্পর্কিত নয়। পারিপার্শ্বিকতার বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে ইলিউশনের সৃষ্টি হয়।
২। হ্যালুছিনেশন(hallucination)
হ্যালুছিনেশনকে ভ্রান্ত উপলব্ধি বলা যায় না,বরং বলা যায় মিথ্যা উপলব্ধি।
অর্থাৎ উপরের উদাহরণে যদি আপনি ঝোপের অনুপস্থিতিতে বুড়ি দেখতেন,সেটা হত হ্যালুছিনেশন। এটাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে,"উদ্দিপকের(stimulus) অনুপস্থিতিতে ভ্রান্ত উপলব্ধি। "
হ্যালুছিনেশন বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- শ্রবণ সম্পর্কিত(auditory),দর্শন সম্পর্কিত(visual),ঘ্রাণ সম্পর্কিত(olfactory),শারীরিক(somatic)।
অডিটরি হ্যালুছিনেশন - এক্ষেত্রে রোগীরা বিভিন্ন ধরণের আওয়াজ,গান অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কথাবার্তা শুনতে পায়,অথচ তার আশেপাশের কেউ এগুলো শুনতে পায় না।
অডিটরি হ্যালুছিনেশনকে খাটি বাংলায় গায়েবী আওয়াজ বলা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে রোগী বিভিন্ন ধরনের কমপ্লেইন্ট নিয়ে আসে। যেমন-সে শুনতে পাচ্ছে,দু। জন তার দোষত্রুটি নিয়ে আলাপ করছে। এটাকে বলে থার্ড পারসন হ্যালুছিনেশন।
আবার কেউ কেউ বলে,কেউ একজন তাকে সবসময় গালমন্দ করে যাচ্ছে। এটা হল কমেন্টারি হ্যালুছিনেশন।
ভিজুয়াল হ্যালুছিনেশন - রোগী সাধারণত কোন অবজেক্ট বা কোন মানুষকে দেখতে পায় যেটার আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই কিংবা যা ওই মুহূর্তে সেখানে ছিল না।
হ্যালুছিনেশন মোটামুটি সবসময়ই মানসিক রোগের সাথে জড়িত। সিজোফ্রেনিয়া(schizophrenia) রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল হ্যালুছিনেশন।
আরো ভাল ভাবে জানতে চাইলে
Psychiatry for Medical Students
পরবর্তী পর্বে থাকছে সাইকিয়াট্রির আরেকটি ইন্টারেস্টিং টপিক- ডিল্যুশন(delusion)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।