আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০ নভেম্বরের হরতাল[



আবার আমরা হরতালের যুগে ফিরে এলাম। বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ধন্যবাদ। বহু দিন হরতালের জরাজকতা থেকে এদেশ বন্চিত ছিল। হরতালের সময় স্কুলে যেতে হয়না, রাজপথে ক্রিকেট খেলা যায় এসব কথা এ প্রজন্ম ভুলতে বসেছিল। তবে আমাদের মাননীয় নেত্রী ইতিহাস বিমূখ নন।

ইতিহাস থেকে নিজে শিক্ষা নেন আর না নেন। তরুনদের কে ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি দেখাবেন। যে দেশের দয়ায় তাঁর এক ছেলে বিদেশে লেখা পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, আর এক ছেলে পেয়েছেন রাজপুত্রের সম্মান, যে জনগণের বদান্যতায় গত ৩০ বছর ধরে দুই দুটি বাড়ির মালিক হয়ে তিনি রাজকীয় জীবন যাপন করেছেন সেই দেশের প্রতি তার কর্তব্য আছেনা ! এ দেশের শিশুরা স্কুলে যেতে পছন্দ করেন না, সে খবর তিনি রাখেন বলেই তাঁর নাতনি বিদেশে লেখা পড়া করে। তাঁর পুত্র বিদেশ থেকে কি ডিগ্রী এনেছেন তা আমরা আম জনতা জানি না। তবে অর্থনীতির যে একটা কালো দিক আছে এবং সে বিষয়ে তাদের পান্ডিত্য যে অগাধ সে ব্যাপারটা জনগণ ঢের বুঝতে পেরেছে।

এ দেশে গনতন্ত্রের সাথে স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে ফেলা যায় অতি সহযেই। গণতন্ত্র মানে জনগণ কে কষ্ট দিয়ে হরতাল ডাকা নয়। একথা মানলেও ম্যাডামের কথায় জানবাজি রেখে গণরিরোধী ভূমিকায় ঝাপিয়ে পড়ার লোকের অভাব নেই। থাকবেই বা কি করে ? মানুষ ই তো এ দেশের সবচে বড় সম্পদ। তাদের ব্যবস্থাপনায় যদি সাকা চৌধুরীর মত চিন্হিত রাজাকার, দেলোয়ার হোসেনের মত পোঁ ধরা লোক আর মওদুদ আহমেদের মত কূট উকিল থাকে তাহলে আপনি অনেক কিছুই আশা করতে পারেন।

হরতালের জন্যে জোট নেতৃত্বের ব্যাকুলতা আমাকে ভীষণ হতাশ করেছে। ২০০৭ এর জানুয়ারির পর এদেশের রাজনীতি থেকে হরতাল প্রায় উঠে গিয়েছিল। অনেকে বলতে পারেন তাতে কি ?আমরা কি তত্বাবধায়ক আমলে খুব ভালো ছিলাম? চালের দাম সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছিল। মঈন সাহেবে কে তেল মারা সহয হলেও ভোজ্য তেল দুষ্প্রাপ্য হয়ে গিয়েছিল ( বুদ্ধিজীবি এবং রাজনীতিক দের প্রভাবশালী একটি অংশ মঈন সাহেবের মন পাবার জন্যে ব্যকুল ছিলেন। )।

যে শাকসব্জির উপর ভরসা করে নিম্ন মধ্যবিত্ত বেঁচে থাকে তার দামেও আভিজাত্যের ছোঁয়া লেগেছিল। আলুর বাম্পার ফলনের পর জনগনকে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার নসিহত করা হয়েছিল। পাঁচ তারকা হোটেলের শেফদের সে সব স্পেশাল ডিস বড় লোকদের খারাপ লাগেনি। যারা ভাত খাওয়ার জন্যে আলু ফলান বিপদ হয়েছিল তাদের। আমরা প্রায় সবাই এসব কথা জানি।

তার পরও একটা কথা সত্যি। হরতাল এবং অরাহকতা না থাকায় অর্থনীতি সবল হয়েছিল। আর এ কারনেই নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রীকে বাজেট ঘোষণার সময় অনেক কনফিডেন্ট লেগেছিল। ২০০৬ এর পর এদেশের হরতাল নিয়ে খুব বড় ধরনের কাজ হয়নি। ২০০৫ এর ইউ এন ডিপি রিপোর্টে জানা যায় হরতালে দেশের গড় প্রবৃদ্ধির ৩ থেকে ৪ পার্সেন্ট স্রেফ উবে যায়।

একদিনের হরতালে দেশের লোকসান হয় ৪৩৭ কোটি টাকা। সে ই বিবেচনায় বি এনপি.র হরতালের যথেষ্ট যুক্তি আছে। আমাদের বাঙ্গালীদের বিশেষ চরিত্র বৈশিষ্ট পরশ্রী কাতরতা (শুনেছি এই শব্দটিই নাকি অন্য ভাষায় নেই। ইংরেজরা প্রায়শঃ পরস্ত্রী কাতর হন পরের শ্রী'র ব্যপারে তাদের মাথাব্যথা কম) আওয়ামীলীগের শামনামলে দেশের উন্নতি হলে বি এন পি নেতাদের কি? বিষয়টি আওয়ামীলীগের ক্ষেত্রেও এক হবে হলফ করে বলা যায়না । কারন তাদের নেত্রী হরতাল বিরোধী চুক্তি করার জন্যে প্রতিপক্ষ কে আহবান জানাবার সাহস দেখিয়ে ছিলেন।

ইউ এন ডিপির ২০০৫ এর রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে দেশের ৯৫ শতাংশ জনগণ মনে করে অর্থ নীতি ও সামাজিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৬৩ শতাংশ জনগণ মনে করে হরতাল প্রতিবাদের একটি হাতিয়ার তবে ৭০ শতাংশ মনে করে হরতালের বিকল্প খোঁজা উচিৎ। বর্তমান সরকারের প্রথম ১৬ মাসে বিএনপির আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছিল ৭০ শতাংশ জনমতকে শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপি এতদিন নিশ্চয় প্রতিবাদের নতুন ভাষা খুঁজে পেয়েছে । মে মাসে পল্টনের সমাবেশের পর আমার সে ভুল ভেঙেযায়। বি এন পি এখন যারা চালায় তারা জনগনের ভাষা বোঝে না।

আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম সাকা চৌধুরির মত চিন্হিত যুদ্ধাপরাধীরাও বিএনপির নীতি নির্ধারণে শক্ত ভূমিকা রাখেন। ২৭শে জুনের ব্যর্থ হরতালের পর ভেবেছিরাম এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষানিয়ে বিএনপি আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করবে। বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। বাড়ি ছাড়ার পর দেশনেত্রীর অশ্রুসজল সাক্ষাৎকারও ১৩ নভেম্বরের হরতাল জমাতে পারেনি। বরং ঈদে বাড়ি ফেরার ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ায় বেগম জিয়ার ভক্তকুলও সমালোচনা মুখর হয়েছে।

যাত্রীছাউনিতে আটকে পড়া ঘরমুখো এসব মানুষ মঈনুল রোডের বাড়ির ব্যাপারে সরকারের ভূমিকার যত না নিন্দা করেছে তার চেয়ে ঢেরবেশি শাপ-শাপান্ত করেছে বিএনপির হরতালের সিদ্ধান্তের। সম্ভবত এ কারনেই, ৩০ নভেম্বরের হরতালে বাড়ির প্রসঙ্গ উহ্য রেখে বিএনপি জনগণের ইস্যুকে সামনে আনতে চাইছে। তবে ২৯ তারিখের মঈনুল রোডের আপিলের শুনানির পর দিনই হরতালের দিন ধার্য্য করায় হরতালের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনমনে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। অনেকেরে মতে এই হরতালের লক্ষ জন কল্যাণ নয়, সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনও নয় এর একমাত্র উদ্দেশ্য যে কোন উদ্দেশ্য সরকার ও জনগনকে যে কোন বিষয়ে মুখো মুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া। আর আমার মনে হয়েছে বিষয়টি অগোছালো বিএনপির শক্তি পরীক্ষার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হলেও হতে পারে, জনতার জন্যে নয়।

হরতালের ঘোষণার পর আমার ব্যাঙ রাজার কথা খুব মনে পড়ছে। বালকদের ঢিল ছোড়া বন্ধ করার জন্যে যে বলেছিল তোমাদের জন্যে যাহা ক্রীড়া আমদের জন্যে তাহা মরণ। এ কথায় ভুল বুঝতে পেরে বালকেরা ঢিল ছোড়া ঠিকই বন্ধ করেছিল। আমাদের সাকা- খোকারা আমার কথাটা বুঝতে পারবেন বলে মনে হয়না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।