ঘরেও নহে পারেও নহে,যে জন আছে মাঝখানে...............
সেবার সবার মধ্যে শীত-কাতর রাতের মতো ভাব জমে এল। আমাদের কারও ঘরে বাতি জ্বলে নাই ।
যখন তখন মনে হতে লাগল এবারের মতো হয়ে ওঠা সম্ভব না। তবু শুধু আমি , নয়তো অন্য কোন একজন জানতে শুরু করল এমনটা আগেও হতো । গতরাতেও হল প্রায়।
বছরখানেক আগে ঘটেছিল এমন।
পাঁচ বছর আগে ঘটে থাকলেও থাকবে হয়তো। অসম্ভব,ব্যতিক্রম আর অভিনব বলি কোন মুখে।
একশ' ,তিনশ' বছর আগে কি এমনি ভাবের কোন কিছু নতুন ছিল?
দু'টো তীব্র গোছের আম গাছের ফাঁক গলে আমাদের একটি জামগাছ নজরে আসার ফলাফল তেমন কিছু নয়, তবে কারণটা অনেকক্ষণের ধরে নেওয়া যায়। আমি ছাড়া অন্য যে একজন আমাকে বুঝতে পারে বলে আশা বোধ করি ,আমি তার দৃষ্টি অনুসরণ করি বরাবর।
আমার প্রথম ভালোবাসার মতো
স্হুল কিছু কৌতুহল আছে একে ঘিরে । জাম গাছটার সবচেয়ে দাবিদার ডালটা ঘিরে আছে মালার মতো ঘর,ঘর ভরে আছে জীবনের অসংখ্য চলাফেরা। বিরল নাম নিয়ে টিকে থাকা কিছু পোকামাকড়ের ঘর।
এরপর আমাদের সবাইকে পার করে নিয়ে যায় নদী। পার করার মতো কয়েকটা নৌকা চলে তার বুকে।
নৌকা আমাদের জন্য না। তবু আমাদের অনেকের চোখ পড়ে যায় চরে। অস্পষ্ট দেখি । সেখানের বাদামগাছের বিশাল বিশাল ক্ষেতগুলোকে মনে হতে থাকে খেলার মাঠের ঘাসের মতো।
মাঝের পায়ে চলার ফলে যেসব পথ,তাতে একের গায়ে পা বসানো অন্যজনের পায়ের ছাপ এখান থেকে বুঝতে পারাটা অসাধ্যের ;দূর থেকে ,নাদেখা মানুষের হাসি শুনলে তাকে যেমন কেবল আনন্দের শব্দ মনে হয়।
চোখে হয়তো ,তবু ,কোন বিদ্রুপ,বেদনা,জিঞ্জাসা বা অন্যকিছু আভাসের মতো ঝুলে থাকে।
হতে পারে অভিনব। নাহলে বানোয়াট,মিথ্যা আর গল্পের মতো।
কেবল আমি আর সাথে খুব সম্ভব সেই একজন,আমরা মাত্র দু'জন চর অবধি স্পষ্ট হয়ে উঠি। আমাদের পায়ের ছাপ যেন লাল-নীলে চিহ্নিত করা আছে।
যেন আর কারও পা এসে সমান্তরাল যে দু'জোড়া পা ফেলে চলেছিলাম তা মুছে দিতে পারে নাই।
আশ্চর্যের হতেই পারে,আমাদের কেউ তবু বিস্মিত হই নাই সে রাতে। শীতের ঠিক একই রাতে আমাদের দুইটা আলাদা ঘরের আলো দুইটা নেভানো ছিল। দরজার খিল দুইটা বসানো ছিল একই উপায়ে। দুই ঘরের চালে ঠাণ্ডা জমানো ছিল মধুর মতো।
আর তা গলে গলে পড়ছিল সিলিংগুলো বুকের রুক্ষতায়। রাত তখন দুইটা নয়তো তিনটা। কিন্তু দুইজনের ঠিক এক সময়ে বের হতে হল।
দুইটা দখলি আমগাছের ফাঁক গলে মাথা বাঁচিয়ে রাখা জামগাছের এই ডালটার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পোকাগুলোর অন্যধরণের এই বসতি তখনও মালার মতো জড়ানো ছিল?
নদীর পাড় ধরে আমাদের গ্রাম শেষ করে এরপর গেলাম দূরে।
সেখানের গলা চিপে বসে থাকা নদী লাফ দিয়ে পার হওয়া যায়। এরপর পথ্ । নিচে বালু। বালুর মাঝে সবুজ মেশাবার বাদাম ক্ষেত। উপরে মাথা আলো করে রোদের মতো জ্বলছিল চাঁদের পূর্ণিমা।
পরস্পরকে ঘিরে নিল কেবল প্রকৃতি। আমরা দেখতে লাগলাম একে অপরের চারপাশ,রূপ। নিচে আশ্চর্য উর্বরতা তবু যেটুকু স্বাভাবিক,চার পাশ সুন্দর করে দিয়ে দিগন্ত বারবার সরে সরে যাচ্ছিল।
এরপরও আমরা একসাথে কথা বলি নাই। একটু পরে গান গেয়ে উঠলে দেখি একই সুর,সুরকার একজন,শুধু ভিন্ন দুইটার কথা।
'শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণিবায়' একজনকে দোলা দিয়ে গেল তো একই সুরে 'ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মাদ'নিয়ে মাতল আর জনের আওয়াজ।
একজন প্রেমের প্রকাশের মতো কিছু একটা দেখতে পাই প্রকৃতিতে অথবা নির্জনতায়। আরেক জনের মন যেন সৃষ্টির আদিমতায় মুগ্ধ। হয়তো মাত্রই কোন স্বর্গপ্রেরিত মানুষ নেমে এল জায়গাটায়। আপ্লুত হয়ে থাকার সময় তখন।
ভালোবাসার চোখ নিয়ে আদর করা যায় যেন একই সাথে। আমার হাতে তার ঠোঁট এলে এমন মনে হল
যেন দুজনের আগ্রহের প্রকাশ দুইটা ভিন্ন পথ ধরে।
বিস্মিত হলাম হয়ত সেরাতে সেই প্রথম। বৈপরিত্যের খেলাকে আগুনের মতো উষ্ঞতার কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলাম?
আজকে যখন আমাদের কারও ঘরেই বাতি জ্বলে নাই। সবার মাঝে সমানমতো দুইজন আছি।
সবার থেকেও আমার একজনকে বেশি বুঝতে চাওয়ার কৌতুহল। আমাকেও সে বুঝতে চায় মনে করে আশার কাছাকাছি সুখগুলোকে অনুভব করি। আমাদের সমান বয়সের মন,প্রায় সমান দেহ;
সমান রাত,সমান দৈর্ঘ্যের দিনের পরে আরও দিন। এসবে কোন বিস্ময়ের মুহুর্তের শুরু হয় না।
আমি যদি তার সব অনুভূতি জানার লোভে চোখকে ক্ষুধার্ত জিহ্বা করে তুলি ,তবে তার কান হয়তো পাতা থাকে আমার হৃদযন্ত্র কিংবা মস্তিষ্ক বরাবর।
একে অন্যকে জানতে চাই,একই জনকে না কখনওই।
এমন বিপরীত মনে হলে কোন দুঃখ জাগে না। আমাদের মনের সামনে চমক লাগে।
যেন একই সাথে শুরু করেও,একই ভাবনা ভাবতে গিয়ে আলাদা হয়ে যাই।
একই চাঁদের আলোকে কখনও ককনও ভোরের ফুটতে চাওয়া আলো আর বিকেলের পড়ে আসা রোদ বলে মনে হতে থাকে...............................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।