আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একা এবং কষ্টের ধ্যান

তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না.....

কেউ নেই, তবু: কে যেন একবার বলেছিলোণ্ড মানুষ বর্তমানে একা, অতীতে একা, ভবিষ্যতে একা, মানুষ মূলত একা। একটা জীবনের চাষাবাদের ফসল “একা”। ফসলের বীজতলা, ফসলের বীজ, ফসলের সতেজতা একা। কে বলেছিলো কথাটা ..., না ... না কেউ বলেনিতো! তাহলে এমন সরস কথাটা এলো কোত্থেকে! আমি বাপু অমন দার্শনিক কথা কইতে পারিনে। একা মানুষ, ছাপোষা এই নিম্ন মধ্যবিত্তের টাইম টেবিলের ফান্দে হা- পিত্তেশে মরি!! দু’একটান ধোঁয়াতে পকেট বাবাজী ডাক ছাড়ে....।

শূন্য... শূন্য ... শূন্য। কাঁধের থলেটার ছেঁড়া ফাঁক বরাবর ঝুলে থাকে পুরাতন ডায়েরি ...। জিন্সের পকেটে টুঁই টুঁই করতে থাকে মোবাইলটা। ব্যাটারির অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি! একা ... একা ...। বর্তমানে একা।

অতীতে ...। যে কথাটি কেউ বলেনি সেই কথাটি মস্তিষ্কে অনুরণন ঘটায়। ঝামেলা ঝামেলা লাগে। ভবে একা আমি এলাম, ভবে একা তুমি এলে, ভবে একা সে এলো। ভবের হাটে আমরা সওদা করছি।

অথচ একার মিছিল। কবির হয়ত একাকীটাই বৈরাগ্য রোগ। আরোগ্যহীন। কিন্তু ছেলেটা! সে তো প্রতি উচ্চারণেই চিৎকারে সৎ কথাটি বলেণ্ডনা। আমার কেউ নেই।

বলছি তো, আমার কেউ নেই। ছেলেটা হন্তদন্ত হেঁটে যায়। না, আমার কেউ নেই বলে বলে। আজব ছেলে তো! এই শহরে তোমার কেউ নেই? না, কোন শহরেই আমার কেউ নেই। অতএব ... আমি একা।

আমার কেউ ছিলো না কোনকালে। ছেলেটাকে দেখে অবাকই হলাম। গত পরশুই তো! সে হেঁটেছিলো তার পরিবার নিয়ে। গতকালইতো! সে পার্কে ঘুরেছিলো তার সুন্দরিতমা নিয়ে। আজ সে হাঁটছে একা।

আশ্চর্য! সে তো আমার বাবা, সে তো আমার মা, সে তো প্রিয়তমা। ওরা তো ওরাই। মা একটা, বাবা একটা, একটা প্রিয়তমা। একটা আমি। একা।

একা। একা। একা। অতএব আমার একা আমিই। গ্যাছে।

ব্যাটা। পড়তে পড়তে মাথা খেয়েছে। একা একা এতো পড়াশুনা! মাথায় হেভী গন্ডগোল। স্ক্রু নড় বড়ে। পাগল টাইপ হাবভাব।

একাকার হয়ে থাকা যায় একার সাথে, একলা থাকাটাই সত্যণ্ড জীবনের চাষাবাদের ফসল একা। আমরা আসলে যৌথ থাকার অভিনয় করি। সবাই আসলে একাই থাকে, একাই ঘুমোয় একই ঘরে, ... একই বিছানায়। আমি ব্যর্থ। আমি অভিনয়ের অ বুঝিনে।

যৌথ থাকবার অভিনয়ে ফেল মেরেছি। অতএব হে মা দুর্গা, কৃপা করো আমাকে, দেখে রেখো, যেভাবে একা এনেছো .... একা রেখো। চিৎকার করে সবাইকে বলে দিতে ইচ্ছে করে যে অভিনয়ের যবনিকা নেই সে অভিনয় নিজেকে ঠকানো। তুমি একা বন্ধু। ধরা পড়ে যাবে।

যতই নিখুঁত করো অভিনয়। যে কথা কেউ বলেনি। সেই কথাটার ভিত্তি সত্যের উপর। একা। মানুষ মূলত একা।

ছিমছাম একা একা ভেতরে ছিলাম, মানুষের কাছে এসে নতুন মুদ্রায় আমি নির্জন হলাম, মিলনের নামে যেন আলাদা হলাম, একাই ছিলাম আমি পুনরায় একলা হলাম। ণ্ডশামুক। হেলাল হাফিজ। একলা থাকাটাকে এতো ভয় কেন বাপু। বরং অনেক নিয়ে থাকাটাই ভয়ের।

ভয়ংকর! “একা-”কে নিয়ে কিছুই লিখতে পারি না। প্রিয়তমার কথা ভাবলেই একা হয়ে পড়ি। একাকীত্ব এসে ভর করে দানবের মতো। কবির একাকাল ঃ আগুনে আর দগ্ধ হবার কিছু নেই, দেহ পুড়েছে বিরহে সমান- প্রেম আমাকে ভেঙেছে কতটা আমার কবিতা তারই প্রমাণ। কবি কখনোই প্রিয়তমার প্রতি রুক্ষ ছিলেন না।

কবির ছিল মায়াভর্তি মন, যার সবটুকুন প্রিয়তমার জন্য ছিল চঞ্চল, লাবণ্য। বিভোর ছিলেন স্বপ্নের ভেতর। কবির কোন অভিযোগও নেই। কবির কেবল কান্না ছিল নিজের ভেতর। দাহ সময় বয়ে বেড়ানো উদাসীন কবি তাই চুরমার হয়ে যেতে যেতে বলেন- ভালো থেকো।

কবিতার পরতে পরতে দুঃখ প্রকাশ। কবিতার ভাঁজে ভাঁজে কেবল হাহাকার। কবি এমনই। নাগরিক চৌরাস্তার নিয়ন আলোয় একটু জিরিয়ে নেয়া কবি এ মধ্যরাতে খুব ক্লান্ত। অথচ হাঁটছেন না।

বইছে হাওয়া? অথচ ক্ষিধে নেই, তৃষ্ণাও না। তবুও কবি ক্লান্ত। কুপি জ্বালানো ঝুপড়ি চা-দোকানে উঁকি দিয়ে হাঁক দেন কবি- কাগা, আছিস নাকি? : হু .. আছি : চা- হবে? : নাস্তা নাই কিন্তু : রং চা দে, একটা ধোঁয়ার লাটিও দিস চা বানাতে বানাতে কাগা বললো- আপনার কোন কাম নাই? এত্তো রাতে চা-বিড়ি খান! : কাম আছে। রাত জেগে থাকা। আর কোথাকার ব্যবসায়ী অথর্ব পাইকারী হারে টেস্টটিউব কবিতা-জনমদাতা কবির বইয়ের প্রচ্ছদ করছি।

আজ ফাইন্যাল করতে হবে। : টেস্টটিউব কবিতা মানে? : যে সত্যিকারের কবি সেই জানে কবিতা জন্মদানের “প্রসব বেদনা” কি। ইদানিং দেখছি চাটুকার মার্কা ধাড়িবাজরা লাইন চুরি করে, মাথামুন্ডুহীন ইয়া সাইজ প্রেম চুক্‌ চুক্‌ কি সব লেখে সাহিত্য পাতার শাহী ভাবকে “থ” বানিয়ে বাদামের ঠোঙা তৈরি করছে। কয়েকটা সাহিত্যবাসরেও সামনের আসরে বসে লোক দেখানো ভাব ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছে ‘জনাব, আমি কবি’। ঐ রকম এক হাস্যকর কবির কবিতার বই প্রকাশিত হবে আদর প্রকাশনী থেকে।

আমি একটা প্রচ্ছদ করছি। : আপনেতো ভাই ঐ কাম করনের লোক না! এমন ধড়িবাজ কবির বইয়ের প্রচ্ছদ কেন করছেন? : টাকা। একটা প্রচ্ছদ, পাবো পনেরো হাজার টাকা। এ চাঁটগা শহরে এতো দামে কেউ প্রচ্ছদ করায় না। নেট থেকে, অথবা একটা গ্রাফিক্স মেরে বই বের করে ফেলে।

সবই চুরি। : ভাইজান। আপনি কোন অফিসে চাকরি করেন, সাংবাদিক টাংবাদিকের কোন লাইফ নাই। লিপোর্টার হয়ে কি করতে পারছেন? পাঁচ বছর ধরে দেখছি, চেরাগী মোড়, জামাল খান রোড ... হাঁটছেন। : তুই আমার জন্য এতো চিন্তা করিস কেন? : চিন্তা না, এমনি বললাম।

: চিন্তা না চিন্তা না, চিতার মতো মনের দাহ, চিন তা না নদী, চোখের জলে না যদি দেখিতে প্রবাহ। হা: হা: হা: হা: : বাহ! সুন্দর তো। নদী চেনা হতো না, যদি চোখের ..... : যাই। কত হলো। : আগের ছিলো ৩৭।

এখন ১১। : ১১ টাকা রাখ। : আচ্ছা। চিন্তা না চিন্তা না ... : হা: হা: হা: কবি তারা গুনে গুনে হাঁটছেন। এ তারা হো তারা হার তারা ... এ তারা ... হো ... এতো এতো তারা।

অথচ সব তারাই একা একা। কবিতো চিরকাল একা। ছেলেটার কথা মনে পড়ে আবার। আমার কেউ নেই। আমি কেবলই আমি।

একা। একাকীত্বের উপর ভর করেই জীবনের এতো পথ অতিক্রান্ত করি সৃজনের, বিনির্মাণের বিভোরতায়। মানুষ তাই মহাশূন্যের ভেতরও প্রাণ খুঁজে। কবিতার ধ্যান, কষ্টের ঘ্রাণে: জিন্সের পকেটে রাখা মোবাইলটা বের করলাম। কীতে চাপ দিই।

কাকে ফোন করি! কয়েকটা পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিকের নাম্বার; শিল্পকলার ডালিয়া ম্যাম, সনজিত স্যারের নাম্বার, চারুদা, বাবুদা, নরেনের রাসেল ভাই, এদের বিরক্ত করা যাবে না এতো রাতে। বন্ধু ক’জনের নাম্বারেও না। ওয়েটিং থাকে। ইশ! ইচ্ছে করছে তার সাথে কথা বলি। বলতে ইচ্ছে করে- হ্যালো, “বলো না কথা ঐ দীপের সাথে কি কথা তাহার সাথে, তার সাথে”।

এমন পূর্ণিমায় যদি তার সাথে কথা বলতে পারতাম। মুখোমুখি। ফোনে না। ফোনে বহুদূরের মনে হয়। অন্য গ্রহের মনে হয়।

এই পূর্ণিমায় ... আহা! কি মধুময়! আমি কি পূর্ণিমার কবি! আমি কি কেবলই কবি! হয়তো তাই আমারই ভেতর থেকে বারংবার ধ্বনি উঠে- মানুষ মূলত একা ...। ফানুসের মতো একা, চাষাবাদে একা, ছেলেটার মতো একা, ওয়েটিং-এ থাকা অপর প্রান্তের লোকটার মতো একা। একা থাকতে আসলেই কোন ভয় নেই। একা থাকলেই কবিতা হয়, পেইন্টিং হয়, সুর হয়। যোগীর মতো তাই কবির ধ্যান একাকী কবিতা।

কষ্ট কিন্তু নিজেই। আমিই কষ্ট। কবিতাই কষ্ট। তবুও আমি একা, তুমি একা, সেও। বসে তাই আজ ভূমিষ্ঠ করি একাকী কষ্টের কবিতা।

মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ অপশনে টাইপ করি ... কষ্ট চেনো? চেনো না? ভাল্লাগে না, মন বসে না একা একা এই উদাসীন, ক্ষ্যাপা ক্ষ্যাপ। এক পা দুপা ব্যথা চিন চিন। কাগজ ছেঁড়া, ত্যাঁড়া ব্যাঁড়া হাঁটা, শুয়ে বসে দেখছো জোয়ার ভাটা। কম্প্যুটারে আঁকিবুকি, ধুত্তুরী ছাই, দু’একটান ধোঁয়া খুব অসহায়। ভাল্লাগেনা মন বসে না এই উদাসীন মরতে মরতে হাঁপাচ্ছোতো রাত্রি দিন।

এক গ্লাস জল, ঘুমের বড়ি, ঘুম আসে না, দু’চোখে জল প্রিয়তমা আর ভাসে না। স্বপ্ন মরে পাতা ঝরে আগুন জ্বলে জল, খুব হাহাকার এই চারিধার বিষাদ সম্ভল। ভাল্লাগে না মন বসে না কষ্টটা অদ্ভুত চিনে রাখো, কষ্টটারও ডাক আছে - কষ্টের পরিচিতি একাকী মানুষের কষ্টগুলো খুব পরিচিত। নিজের কাছে। একলা থাকলে চেনা হয় যে কষ্টের কোন ভাগ হয় না।

শেয়ার হয় না। যে কষ্ট কল্যাণ, ধ্যান, ভালোবাসার নির্যাসের মতো নিজের কাছে জমাট বাঁধে। একা মানুষের কষ্টগুলো তাই চিরকাল গোপন কবিতার পান্ডুলিপিতে উর্বরতা বাড়ায়। যে ছেলেটি খুব একা, সে জানে- কষ্টের ভেতর একাকী জীবনের উদ্বোধনের মানে, যে পূর্ণিমা খুব একা, সে পূর্ণিমার দ্যূতি অপূর্ব। যে কবি আসলেই একা, সে কবির কবিতা স্বপ্ন নির্মাণে পাঠকের দ্বারে কড়া নাড়ে অথবা মিছিলের অগ্রভাগে বজ্রধ্বনি োগান হয়ে উঠে।

একা থাকলেই জয়ের স্বাদ, কষ্ট জয় অথবা শূন্যতা। স্বপ্নের ভেতর বুঁদ হয়ে জয় যুদ্ধের গান ধরে একা মানুষ। সব মানুষই জীবনের পথে ছুটছে। সব মানুষই বাজি ধরে। বাঁচার।

সব মানুষই সহযাত্রী খুঁজে। মূলত মানুষ একা বলেই এতো সব কোলাজ, এতো সব রং। এতো এতো সৃজন-সংলাপ, নির্মাণ। হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায় না। হাত বাড়ালেই শূন্যতারই স্পর্শ আসে।

ভাগ্যরেখা টান টান। একা। কেবল একা। হেঁটে যেতে হয় একা। “পৃথিবীতে পড়ে আদম একা হেঁটেছেন।

দুজনের পরস্পরকে খুঁজতে কত সহস্র বছর হেঁটেছেন। কত সহস্রমাইল পথ একা একা হেঁটেছেন। এই ছোট বালিকাটির একা হাঁটার সঙ্গে মানুষের সূচনা পর্বের হাঁটাহাঁটি ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। একা হাঁটার ভরসা একটাই। গন্তব্যে পৌঁছলে মানুষ আর একা থাকে না।

... পৃথিবীতে আদমের পতন একাকী এবং ঈভের পতনও একাকী। মানব সমাজের ঊষালগ্নেই এই একাকীত্বের অন্ধকার ছিল। এটা আবার একাকীত্বের অহংকারও। ণ্ড (খোলা জানালায় গোপন সুন্দরবন, ৩৬ পৃ:। সিদ্দিক আহমেদ) বাঁচো কিংবা মরো, মানতেই হবে তুমি একা।

আমি বাঁচি কি মরি, আমি জানি, আমি একা। একটুকরো সংলাপ ঃ : যাও : ঈশ্বর, আমি একা যাবো? : প্রত্যেককেই আমি একা পাঠিয়েছি। : ঈশ্বর, ওখানে আমি কিভাবে থাকবো? : মূলত একাই। মানব চিন্তায় থাকে সঙ্গীর সাথে সে থাকে। আসলে একাই থাকে।

: ঈশ্বর, তারপর ... : একা একা ফিরে আসবে। : সাথে কেউ আসবে না? : কেউ কখনো কারো সাথে আসে না। একা একাই শুরু ... একা একাই যবনিকাপাত। মধ্যখানে মনুষ্যসৃষ্ট কষ্ট-আনন্দের অনূভূতিক চাষবাস, এরই নাম জীবন, এরই মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।