"বাউল মানুষ"
চলচ্চিত্রের খলনায়ক ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে ধরতে ঢাকা মহানগর, গোয়েন্দা ও ঢাকা জেলা পুলিশের একাধিক দল ছয় দিনে ১৫ জন নায়ক-নায়িকার বাড়িতে হানা দিয়েছে। সর্বশেষ রবিবার রাতে পুলিশের একটি দল উত্তরায় এক নায়িকার বাসায় অভিযান চালালেও ডিপজলকে তারা গ্রেফতার করতে পারেনি।
মঙ্গলবার সকালে গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকায় ট্রাফিক কনস্টেবল আলতাফউদ্দিনকে মারধর এবং অস্ত্র উঁচিয়ে ভয়ভীতি দেখান বিএনপি নেতা ডিপজল। ওইদিন বিকালে এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে যান তিনি।
মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুবই ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ ডিপজল।
তার পাঁচটি মোবাইল ফোনের সব কটিই বন্ধ আছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অবৈধ কাজ করার অভিযোগে ডিপজলের নামে ইস্যু করা অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। বিধি অনুযায়ী একজন ব্যক্তি তার নিরাপত্তার জন্য দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ডিপজল কোন প্রক্রিয়ায় চারটি অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন এবং তার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কারা সুপারিশ করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডিপজলের নামে একটি শটগান, একটি পিস্তল, একটি রাইফেল ও একটি দোনালা বন্দুকের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, ডিপজলকে রক্ষায় মিরপুর ও সাভার ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার অন্তত পাঁচজন সংসদ সদস্য তদবির করছেন। তারা ঘটনাটিকে বড় না করে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও দেনদরবার শুরু করেছেন। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইউনিফর্মধারী একজন পুলিশ সদস্যের গায়ে হাত দেওয়ার ফল ডিপজলকে ভোগ করতেই হবে।
এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় দারুস সালাম থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা ভবনের দোতলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে তালা ঝুলছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বিভিন্ন বয়সের সাত-আটজন নারী ও পুরুষ। সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তারা জানান, ডিপজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার জন্য তারা থানায় এসেছেন। থানা ভবনের ফটকে দায়িত্বরত একজন কনস্টেবল এই প্রতিবেদককে বলেন, অতীতে যারা ডিপজলের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পেতেন, তারা নামে-বেনামে অভিযোগ দেওয়ার জন্য থানায় আসছেন।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৩ সালে আইনশৃক্সখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা ডিপজলকে গ্রেফতার করেন। ওই সময় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে 'ভয়ঙ্কর হাজতি' উল্লেখ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে স্থানান্তর করে। ২০০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর র্যাব আদাবরের একটি ফ্ল্যাট থেকে ডিপজলকে গ্রেফতার করে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় কারাগারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় চলচ্চিত্রের অনেক নায়ক-নায়িকা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী অবৈধভাবে ডিপজলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। মিরপুর ও দারুস সালাম থানা সূত্র জানায়, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী পশুরহাট এবং মিরপুরে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ডিপজলের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে।
এরই মধ্যে ১১টি মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন এবং আরও কয়েকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। সাজা হওয়া মামলাগুলোতে ডিপজল উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
র্যাব-৪ সূত্র জানিয়েছে, ডিপজলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ৫০টি জিডি রয়েছে। ২০০২ সালের ১৯ অক্টোবর অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় যৌথবাহিনী ডিপজলের বাসা থেকে সাতটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল তাজা গুলি জব্দ করে। ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ডিপজলের বাসায় দুই দফা অভিযান চালিয়ে ছয়টি অস্ত্র, ৪৮৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এ সময় ডিপজলকে না পেয়ে তার ভাই আফজালকে গ্রেফতার করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।