আমি বিধাতার রঙ্গে আঁকা এক অস্পষ্ট ছবি।
গত আড়াই মাসে আমাদের অনেক গুলো অনুষ্ঠান পালিত হলো। মুসলমানদের দুটো ঈদ আর হিন্দুদের পূজা। এতো কিছুর পরে সবাই খুব খোশমেজাজেই আছে। ঘরমুখী মানুষ শহরে ফিরতে শুরু করেছে।
২ কোটি মানুষের ঢাকা ফিরে পাচ্ছে পুরোনো রূপ। যেমন লোডশেডিং, যানজট, দূষণ, ব্যস্ততা, খোলা মাঠে ময়দানে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমালাপ বা কখনো কখনো হালকা পাতলা নোংরামী, নষ্টামী-ভ্রষ্টামী।
যাইহোক, আমাদের আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। মানুষ বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট। সাধারণ মানুষদের তো প্রতিদিন বাসে চড়তেই হয়, সাথে সাথে অসাধারণ সব মানুষদেরকেও মাঝে মাঝে বাসে চড়তে হয়।
অসাধারণ মানুষ বলতে, যাদের প্রাইভেট গাড়ি আছে, কারো কারো হেলিকপ্টার বা ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও থাকতে পারে। তাদের সবাইকেই বাসে চড়তে হয়। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন বাসে যাতায়াত করে তেমনি চাকুরীজীবি নারী-পুরুষরাও বাসে যাতায়াত করেন। সেই কারণে বাসের উপর অনেক চাপ থাকে। বাসে ভিড় হয়।
এইসব বাসে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকে ৯ টি। বাকি আসনসমূহ পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বরাদ্ধকৃত থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসনগুলো পুরুষদের দখলে থাকে। কারণ, শক্তির বিচারে তারা এগিয়ে। লাফালাফি করে তারাই আগে বাসে উঠে আসন দখল করতে পারেন।
আর নারীরা আস্তে ধীরে বাসে উঠে বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাদের কেউ বা ছাত্রী, আবার কেউ বা চাকুরীজীবি নারী। যাইহোক, সকালবেলা বা সারাদিন পরিশ্রমের পর এতো রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই অনাকাংখিত। তার সাথে আছে বিরক্তিকর যানজট আর গরমের কষ্ট। কোনো কোনো সময় দেখা যায় বাসে একবারে ২০/২৫ বা তারো বেশি মহিলা যাত্রী উঠেছেন।
তাদের বেশিরভাগই দাঁড়িয়ে থাকেন সিট খালি না পেয়ে। একহাত জায়গায় একজন মেয়ে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকা যতটা না কষ্টকর, তারচেয়ে বহুগুনে দৃষ্টিকটু। তার বয়স ১৬ থেকে ৬০, যাই হোকনা কেনো। আর আমরা তাকে দাঁড়ানো দেখে চুপ করে সিটে বসে থাকি। আমাদের যুক্তি, নারী পুরুষের মাঝে পরিষ্কার বৈষম্য “মহিলাদের সংরক্ষিত আসন” লাইনটি।
তাদের সংরক্ষিত আসনের পর যদি আর কোনো আসন খালি না পায় তবে তারা বাধ্য দাঁড়িয়ে থাকতে। নীতি অনুযায়ী হয়তো ব্যাপারটা ঠিক কিন্তু মানবিক ভাবে ভাবার একটা বিষয় থেকেই যায়। আসুন আমরা সবাই আজ থেকে নিজেকে বদলানোর একটা চেষ্টা করি। নারীদের তার প্রাপ্য সম্মান দেই। দরকার হলে নিজের আসনটা ছেড়ে দেই একজন মহিলার জন্য।
পত্রপত্রিকার লোকদেখানো ভন্ডামী পরিহার করি। নিজের মানসিকতা না বদল হলে ঢোল পিটিয়ে তা বদলানো যাবে না।
অনেকে হয়তো ভাবছেন, মহিলাদের প্রতি আমার এতো সমবেদনার কারণ খানি কি? কোনো কারণ নাইরে ভাই। আমি আমার মা কে দেখেছি, বোন কে দেখেছি কতো কষ্ট করে তারা বাসে যাতায়াত করে। আমি আমার বান্ধবী কে দেখেছি, কি পরিমান কষ্ট হয় তার দিনশেষে বাড়ি ফিরতে।
আপনারাও না হয় তাদেরকে মা, বোন কিংবা বান্ধবী ভেবেই সম্মান করুন।
আসছে বিজয়ের মাস। চলুন চেষ্টা করে দেখি, এই বিজয়ের মাসে আমরা নীতিগত ও মানবিক ভাবে কতটুকু বিজয় লাভ করতে পারি। একটু একটু করে চেষ্টা করে দেখি, আশা করি নতুন বছরে আমরা নতুন মানুষ হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবো। ধন্যবাদ।
সৌজন্যেঃ কী চমৎকার দেখা গেলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।