আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক মুঠো আলোর খোজে

আজও আমি খুজে ফিরি সেই পুরাতন আমাকে
আমার চারপাশে নিকষ অন্ধকার। হঠাৎ চোখ খোলায় প্রগাড় অন্ধকারে ধাক্কার মত লাগে, মনে হয় গহীন কোন অরন্যের মাঝে আমি একা, চারিদিকে বন্য জানোয়ার গুলো পায়চারি করছে। পিঠের নিচে মেঝের হালকা ঠান্ডা অনুভুত হওয়ায় বুঝতে পারি এটা কোন জঙ্গল না, একটা রুম এবং সেই সাথে মনে পড়ে যায় আমার বন্ধিত্তের কথা । অন্ধকারটাকে সহনীয় করতে চোখ বন্ধ করে ফেলি। কিছু সময় পর যখন চোখ খুলি তখন অন্ধকার পাশ কাটিয়ে ঘরের বিভিষিকা আমার কাছে আরো অসহ্য মনে হয়।

মৃদু ভয়ের ঠান্ডা স্রোত আমার শরীরকে শীতল করে ফেলে। আমি আবারও আমার চোখ বন্ধ করি, ভয়টাকে পাশ কাটানোর জন্য। বিভিষিকাটা আবার দেখার অদম্য কৌতুহল অথবা পুনরায় ভয়পাওয়ার একটা তীব্র ইচ্ছা আমাকে পেয়ে বসে। আমি দ্বিধান্নিত হয়ে পড়ি। আমার মনে হয় চোখ না খোলা উচিৎ পরক্ষনে মনে হয়- না খুলেই ফেলি।

আমার দু স্বত্ত্বা আমাকে দুই রকম নির্দেশ দেয়। আমার ইচ্ছাটা, আমার কৌতুহলটা জয়ী হয়। আমি চোখ খুলি, বিভিষিকার দিকে আবার চোখ আটকে যায়। সাথে থাকা ঝোলার দিকে হাত বাড়ায়। হিসাব মত ছোট্ট দুই ব্যাটারির পেন্সিল লাইট টা পেয়ে যাই।

পেন্সিল টর্চের আলো ক্ষত- বিক্ষত, বিভৎস লাশটার উপরে ফেলি, একটা ভয়, রাগ, ক্ষোভ এবং ঘৃনা মিশ্রিত অনুভূতি তৈরি হয়। কোন এক কালে জীব বিঞ্ঝানের বইএ পড়া, প্রায় ভুলতে যাওয়া জু'লজির সামান্য বিদ্যা নিয়ে, বিবেকের তাড়নায় লাশটার দিকে এগোয়। দুরে দাড়িয়ে লাশের উপর আলো ফেলি। বড় বড় দুটো ক্ষত চিন্হ আমার নজরে পড়ে যা বিদ্যামন অন্যান্য ক্ষত থেকে অনেক বড়। আমার সামান্য বিদ্যায় বুঝতে পারি আঘাত দুটো কাটিয়ে মানুষটার অনেক কষ্ট সহ্য করা লেগেছিল- বেচে থাকার জন্য।

এই সংগ্রামি আর ত্যাগি মানুষটার প্রতি একটা মায়া, বা অনুভুতির জন্ম হয় আমার ভিতর। আরো ভালো ভাবে দেখার অথবা মৃত্যুর কারন জানার একটা ইচ্ছা বা তাগিদ অনুভব করি। আমার কম পাওয়ারের চশমাটা চোখে দিয়ে পিছ মোড়া করে হাত বাধা লাশটার কাছে বসি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করি। লাশটার শরীরে ছোট ছোট অসংখ্য প্রচন্ড হিংস্র পিপড়া, কালো, ছাইরঙ্গা, সাদা, সবুজ, খয়েরি রঙের অসংখ্য পিপড়া দেখতে পাই।

আর দেখতে পাই লাশটার মাথায় পিপড়াদের একটা বাসা যা দখলে রাখার জন্য কালো ও ছাইরঙা পিপড়া গুলো আক্রমণ ও প্রতি আক্রমনে ব্যস্ত। আমি ডাক্তার না হয়েও বুঝতে পারি লাশের শরীরের দগদগে ঘা গুলো পিপড়াদের সৃষ্টি আর মৃত্যুর কারনও ঐ দগদগে ঘা গুলোই। আমি আরো ভালো ভাবে, উল্টায়ে দেখার জন্য লাশের শরীরে হাত রাখি। শরীরটা হালকা গরম মনে হয় এবং উল্টানোর সময় হালকা গোঙ্গানির শব্দ কানে ঢোকে। মানুষটা এখনও লাশ হয়নি, জীবিত।

আমি দ্রুত ডাক্তারের খোজে বেরোনোর জন্য দরজার দিকে পা বাড়ায়। আমাকে নিরাশ হতে হয়, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ থাকায়। অগ্যাতা চিৎকার দিয়ে লোক জড়ো করার জন্য জানালা খুলি। বাইরের হালকা তারার আলো ঘরে ঢোকে। বুঝতে পারি এই নিকষ অন্ধকারে কেউ আসবেনা সাহায্যের জন্য।

আমি অপেক্ষায় থাকি কোন এক জ্যোতির্ময় স্বপ্ন পুরুষের অথবা এক মুঠো আলো যা দুর করবে সমস্ত ভয়কে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।