আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

করণীয়/বর্জনীয় - ২

Real knowledge is the knowledge about "The Real", or at least, that which leads to "The Real" - rest is just conjecture!

[লেখাটি আগে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। ......আগের লেখার ধারাবাহিকতায়] ’খুতবাতুল হা’জার’ পরবর্তী কথাগুলো আমাদের বর্তমান দুঃসময়ে বোধকরি আরো বেশী প্রয়োজনীয় ও ভাববার বিষয়। কিন্তু সরাসরি সে অংশের বক্তব্যে যাবার আগে আমার মনে হয় পাঠকের কাছে, এবং, সেই সুবাদে আমার নিজের কাছেও, ব্যাপারগুলোকে সহজে বোধগম্য করার জন্য একটু ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে। বিদায় হজ্জ্বের সময় নাযিলকৃত সূরা মায়িদার ৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন : “......আজকের এই দিনে আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম (সবদিক দিয়ে নিখুঁত করে দিলাম), তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম...। ” এই আয়াত নাযিল হবার পর রাসূল (সা.) মাত্র ৮১/৮২ দিন বেঁচে ছিলেন এবং এই সময়ের ভিতর দ্বীনের বিধান, আইন বা নতুন কোন অনুশাসন সমেত কোন আয়াত যে নাযিল হয়নি, সে ব্যাপারে তফসীরকারগণ একমত।

আমাদের দ্বীনের বিধি-বিধানের অপর যে সূত্র — অর্থাৎ রাসূল (সা.) — তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে, শরীয়াহ্ তথা ইবাদতের বিধি-বিধান, নিয়মকানুন, করণীয়/বর্জনীয় ইত্যাদির ব্যাপারে নতুন কোন মাত্রা যোগ হবার আর কোন উপায়ই রইলো না। সুতরাং রাসূল (সা.)-এঁর মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে কিয়ামত অবধি সকল মুসলিমের দিক নির্দেশনার জন্য কেবল দু’টো সূত্র রইলো — আল্লাহর ভাষ্যমতে, 'সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ কুর’আন’ আর রাসূল (সা.)-এঁর সুন্নাহ্ — ব্যস্। আর কোন নবী, নতুন কোন বাণী নিয়ে -বা- আমাদের নতুন করে কোন শিক্ষা দিতে, কখনো আমাদের মাঝে আসবেন না । জীবনের পার্থিব ব্যপারে নতুন নতুন যে সব সমস্যা আসবে, সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে ফুকাহা বা ফিকাহ শাস্ত্রবিদরা শরীয়াহর উপর ভিত্তি করে বাছ-বিচার করবেন এবং ফতোয়া দেবেন — যা সাধারণেরা অনুসরণ করবেন — কিন্তু শরীয়াহ্ অপরিবর্তিত থাকবে। যে নীতির উপর ভিত্তি করে নতুন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা অপরিবর্তনীয়।

উদাহরণস্বরূপ ধূমপান যে মানুষের মৃত্যুর কারণ বা বিষপানের সমতুল্য - এই ব্যপারটা না জানা পর্যন্ত অপচয়, বাহুল্য বা কূটগন্ধ উদ্রেককারী ইত্যাদির জন্য প্রযোজ্য নীতির উপর ভিত্তি করে, ধূমপানকে ’মাকরুহ্’ বলা হতো — কিন্তু আজ জীবন হরণকারী ক্ষতিকারক বস্তু হিসেবে সিগারেট চিহ্নিত হবার পর, ধূমপানকে অধিকাংশ ফিকাহ শাস্ত্রবিদই ’হারাম’ বলে রায় দিয়ে থাকেন। এখানে দেখুন "শরীয়াহ্-principle"-এর কোন পরিবর্তন হয় নি, কিন্তু ফতোয়া পরিবর্তিত হয়েছে। আজ ধরুন যদি অপর একটি বস্তু ‘X’ আবিষ্কৃত হয়, যা মানুষের জন্য পান করা একেবারেই বাহুল্য এবং কূট গন্ধ ছড়িয়ে যা অন্যের বিরক্তির উদ্রেক করে, তবে হয়তো শরীয়াহর ঐ একই নিয়মের আলোকে সেটাকে “মাকরুহ্” বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু ধরুন দৈবাৎ কোন কারণে দেখা গেল যে, সিগারেটের উপর গবেষণাসমূহ সব ভুল ছিল এবং সিগারেট আদৌ ক্ষতিকর কোন বস্তু নয় বরং তা সেবন করলে মানুষের মঙ্গল হয় — তবে শরীয়াহর যে নীতির আলোকে সেটাকে “হারাম” বলা হচ্ছিল, সেই নীতি আর সিগারেটের বেলায় প্রযোজ্য থাকবে না। এভাবে একটু বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ভেবে দেখলে সহজেই বোঝা যাবে যে, কিয়ামত পর্যন্ত শরীয়াহর মূল যে কাঠামো তা কিছুতেই পরিবর্তন হবার নয় — জীবনে নতুন নতুন পরিস্থিতির বা বস্তুভিত্তিক আয়োজনের প্রেক্ষিতে শরীয়াহ্ ভিত্তিক রুলিং বা ফতোয়া হয়তো পরিবর্তিত হবে।

অনাগত “জীবন”-কে হত্যা করা যাবে না — এটা হচ্ছে গর্ভধারণ সংক্রান্ত ব্যাপারে শরীয়াহর সাধারণ দিক নির্দেশনা — এর অন্যথা হতে পারে, মার জীবনের উপর যদি কেবল ঝুঁকি আসে তবে। গর্ভধারণের কোন পর্যায়-কে “জীবন” বলবো আমরা, সে নিয়ে মতান্তর থাকতে পারে (যেমন ধরুন কেউ কেউ শুরু থেকেই নিষিক্ত ডিম্বাণুকে ’জীবন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ’কপার-টি’ জাতীয় জন্মনিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থাকে হারাম বলতে চান। আবার কেউ কেউ বলতে চান যে ভ্রুণের বয়স ৪০ দিন হবার পূর্বে কেউ যদি "এম.আর" জাতীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তবে তা ’জীবন’ নষ্ট করার পর্যায়ে পড়বে না) এবং তার উপর ভিত্তি করে রুলিং বা ফতোয়াও ফকীহ্ ভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু শরীয়াহর ঐ নিয়ম অর্থাৎ: “জীবন” নষ্ট করা চলবে না — সেটার কোন হেরফের হবার নয়। এবার আসুন রাসূল (সা.)-এঁর আরেকটি হাদীসের প্রসঙ্গে, যেখানে তিনি বলেছেন যে, যেভাবে ইহুদীরা ৭১ ভাগে এবং খৃষ্টানরা ৭২ ভাগে বিভক্ত হয়েছিল, সেভাবে তাঁর উম্মাহ্ ৭৩ ভাগে বিভক্ত হবে।

আরেক বর্ণনায়, মাটিতে কয়েকটি বাঁকা দাগ এবং মাঝখানে একটা সরলরেখা এঁকে তিনি বলেন যে, সেগুলোর মাঝে একটি, অর্থাৎ ঐ সরল রেখাটি হচ্ছে সঠিক — আর বাকীগুলো জাহান্নামমুখী। ঐ সরল রেখাকে তিনি তাঁর পথ বলে বর্ণনা করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় দৈবাৎ কোন পন্থায় ধরুন যদি আজ রাসূল (সা.)-এঁর কাছের সাহাবা যারা ছিলেন, তাদের — বিশেষত যারা দ্বীনের জ্ঞানে বিশেষভাবে জ্ঞানী ছিলেন, তাদের কাউকে নিয়ে এসে আমাদের এতদঞ্চলের মুসলিমদের জীবনযাত্রা দেখানো যেতো, তবে তাঁরা হয়তো প্রশ্ন করতেন, "এরা কোন দ্বীনের অনুসারী?” মাননীয় পাঠক! বিশ্বাস করুন আমি এক বিন্দু বাড়িয়ে বলছি না। বাংলাদেশের নিরিখে আমি বেশ কম বয়সে হজ্জ করেছি (আলহামদুলিল্লাহ্!) এবং তারও বেশ ক'বছর হয়ে গেলো। কিন্তু দ্বীন ইসলামের সত্যিকার রূপ কি? - রাসূল (সা.) বর্ণিত ৭২টি জাহান্নামমুখী পথের নিরিখে সত্যিকার সরলপথ এবং তাঁর পথ কোনটি? “আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আহ্”-এর পথ কোনটি? এই ব্যাপারগুলো মাত্র গত কয়েক বছর ধরে বুঝতে শুরু করেছি এবং বহুবারই এমন অনুভূতি নিজের হৃদয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে যে, আমার বিগত জীবনের সকল কর্মকাণ্ড, যেগুলোকে অত্যন্ত ভক্তিভরে, পুণ্য জ্ঞান করে বিশ্বস্ততার সাথে সমাধা করেছি, তার অধিকাংশই যোগ করলে, বিশাল এক ’অশ্ব-ডিম্ব’ হয়ে দাঁড়াবে।

আল্লাহর দয়ায় নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন আল্লাহ্, সে জন্য আশা করছি যে তিনি দয়া করে আমাকে মাফ করবেন এবং আমার এখনকার চেষ্টাকে কবুল করবেন — তা না হলে নামাজ, রোজা থেকে শুরু করে বিগত জীবনে ধর্ম-কর্ম পালন করতে গিয়ে যা কিছু করেছি, তার প্রতিটির পরতে পরতে ভ্রান্তি এবং “বিদ’আত” এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, জীবনের ষোল আনাই মিছে বলে মনে হবার কথা। আমি জানি আমার যেমন বোধোদয় হবার পরে প্রথম প্রথম মনে হতো যে, "আমার কিই বা করার ছিল? দেশে শত-সহস্র মাদ্রাসা থেকে প্রতি নিয়ত যে সব 'আলেম'/'উলামা' তৈরী হচ্ছেন, এসব তো তাদের দায়-দায়িত্ব। আমার পক্ষে কি এসব জানা সম্ভব ছিল?" আপনাকে আজ আমি যে সব বলছি, সে সব নিয়ে চিন্তা করতে বসলে হয়তো আপনারও তেমন মনে হবে, কিন্তু পাঠক! আমার মতই, আপনি যদি জীবনে শত শত বই পড়ে তবে একজন প্রকৌশলী, ডাক্তার বা আমলা হয়ে থাকেন - তাহলে কি আপনি এই অজুহাতে পার পাবেন যে, "আমার কি-ই বা করার ছিল? তারা আমাকে যে ’বিদ'আত’-পূর্ণ বাংলাদেশী ইসলাম, সিলেটি ইসলাম বা নোয়াখালী ইসলাম শিখিয়েছেন আমি তাই শিখেছি। পরীক্ষা পাসের পর হয়তো মিলাদ পড়িয়েছি। স্ত্রীর গর্ভধারণের জন্য হয়তো শাহপরানের মাজারে মানত করেছি, ভালো চাকুরীর জন্য হয়তো নারিন্দার পীর সাহেবের দ্বারস্থ হয়েছি, শাহ্ জালালের মাজারে গিয়েছি বিয়ের পর পর সস্ত্রীক পুণ্য অর্জন করতে এবং বে-আদবী হয় মনে করে উল্টো দিকে হেঁটে সেখান থেকে প্রস্থান করেছি, পুণ্য মৌসুমে হুজুর প্রতি তিন পারা হিসেবে একসাথে দশ জনকে গিয়ে 10x স্পীডে কুর’আন খতম করিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি”।

মাননীয় পাঠক! যে কোন শিক্ষিত মানুষ মাত্রেরই জানা উচিত যে, অতি সাম্প্রতিক কালের কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, আমাদের দেশের মাদ্রাসাতে যারা পড়তে যান, তারা দেশের দরিদ্রতম অংশের সদস্য — অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভাব, রোগ-শোক ও অপুষ্টিজনিত কারণে, তাদের স্বাভাবিক কোন উপার্জনের যোগ্য করে তোলা অসম্ভব জ্ঞান করে, তাদের বাবা-মা তাদের মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। কখনো বা, ’অন্তত উপাস তো থাকবে না’ - এই যুক্তিটুকুই, ভর্তি করার চালিকা-শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গত কারণেই নকলের মহামারীর যুগে মাদ্রাসাসমূহের অবস্থা সাধারণ স্কুল কলেজের চেয়ে আরো করুণ হয়ে থাকে। আন্ডার ওয়্যারের ভিতরে কুর’আনের আয়াত বা হাদীসের পাতা ভরে নকলের ব্যবস্থা করতে একটুও প্রাণে বাধে না এসব হবু ইসলামজীবীদের। কয়েক বছর আগে পত্রিকায় ছাপা হওয়া একটি ছবির কথা যতদিন বেঁচে থাকবো, ততোদিন মনে থাকবে বলে মনে হয় ইনশাল্লাহ্! ছবিটি আমাদের দেশের প্রগতিশীল একটি পত্রিকায় (খুব সম্ভবত প্রথম পাতায়, আর তা না হলে শেষ পাতায়) ছাপা হয়েছিল বিরাট আকারে।

স্মার্ট ও ’ক্রিস্প’ সামার-সুট পরিহিত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন, আর তার পা জড়িয়ে ধরে রয়েছেন বিশাল দাড়িওয়ালা জোব্বা পরা মাদ্রাসার দুই “হুজুর” সদৃশ ছাত্র। ছবিটি খুবই সিম্বলিক বলা যায় — পশ্চিমা সভ্যতার প্রতীক বলা যায়, এক সময়ের মার্কিন নাগরিক আমাদের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে — আর মধ্যযুগীয়, অশিক্ষিত, সেকেলে, জবুথবু বর্বর মুসলিম ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি যেন ঐ দুই মাদ্রাসা ছাত্র। তারা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরে রয়েছেন, যাতে নকলে ধরা পড়ার অপরাধে তাদের যে বহিষ্কার করা হচ্ছে, তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন। ঘটনাটা সত্যি, আর তাই খবর হিসেবে যে কোন পত্রিকারই ঐ ছবিটি ছাপার অধিকার রয়েছে। তবু ঐ ছবিটি যেন “খবর+” একটা ব্যাপার ছিল।

দেশের অধিকাংশ খবরের কাগজই - অন্তত প্রগতিশীলগুলো(!), সংস্কৃতমনা উদারপন্থী ইসলাম বিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত - যারা গর্বভরে হুমায়ুন আজাদের ‘পাক-সার-জমিন-সাদ-বাদ’ বা তসলিমা নাসরিনের ’নষ্ট কলাম’ ছেপেছে। সুতরাং ইসলামজীবীদের হেয় প্রতিপন্ন করার এমন একটা সুযোগ আজ তারা হাত ছাড়া করবে কেন? তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু মাননীয় পাঠক! আপনি-আমি যারা এখনো নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্, রাসূল (সা.), ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, শেষ বিচার এবং অদৃষ্টে বিশ্বাস করি, তারা কি ভেবে দেখেছি যে আমরা আমাদের ঈমান/আকীদা সংক্রান্ত বিষয়াবলী কাদের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে আছি এবং ভাবছি যে, ওরা যা বলবে তা করলেই তো চলে যাবে। এধরনের চরিত্রের লোকজন, যারা নকল করতে পারে এবং তার শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে আরেকজন মানুষের পায়ে ধরতে পারে, তাদের হেফাজতে আপনার এক জোড়া জুতা রাখাও তো সঙ্গত নয়, সে ক্ষেত্রে যে কোন মুসলিমের সবচেয়ে দামী যে সম্পদ “ঈমান” - তা কিভাবে আমরা এদের কথা-বার্তার variable বলে মেনে নিতে পারি — অর্থাৎ এরা মিলাদ পড়তে বললে আমরা পড়বো, এদের কথায় বাবা-মা মারা গেলে তাদের শ্রাদ্ধের আয়োজন করবো ৪ দিন বা ৪০ দিনের “সিন্নীর” নামে? ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং, আমরা যেভাবে শত শত বই পড়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি, তেমনিভাবে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপার, সে ব্যাপারে যেন কেউ আমাদের বিপথে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ন্যূনতম জ্ঞান লাভ করার জন্য নিজেদের সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হলে, করবো ইনশা'আল্লাহ! ভেবে দেখবেন: ইসলামে (শিক্ষক, স্কলার বা ‘আলেমদের উচ্চ অবস্থান থাকলেও,) priesthood বা 'ধর্ম-যাজকের’ কোন স্থান নেই বলে যে আমরা গর্ব করে বলে থাকি - অথবা, আমরা যেখানে বলতে পছন্দ করি যে, আমরা সরাসরি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি এবং আমাদের কোন intercessor-এর বা 'মধ্যবর্তী ব্যক্তির’ প্রয়োজন নেই - আজ সে কথাগুলো কেমন হাস্যকর বা অর্থহীন শোনাবে!! আমাদের অজ্ঞতার সুযোগে বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, অচিরেই নিজের মুরগী জবাই করতে না জানার জন্য, হয়তো সে কাজের জন্যও আমাদের একজন 'মোল্লা’ ডাকতে হবে (বিশেষত এই ব্রয়লার চিকেনের যুগে, যখন বাসায়/বাড়ীতে মুরগী জবাই করার পাট একপ্রকার চুকেই গেছে বলা যায় )।

অথচ, আমাদের নিজেদের ধর্মীয় জ্ঞান এমন হওয়া বাঞ্ছণীয় ছিল যে, নিজের কুরবানীর পশু নিজেই জবাই করাতে পারার কথা, বাবা মারা গেলে নিজেই তাঁকে গোসল করানোর এবং তাঁর জানাজার নামাজ পড়ানোর কথা - সম্প্রদায়ের যে কোন একজন হাফিজ ভাইয়ের (অতি অবশ্যই বিনা পয়সায়) তারাবীর নামাজ পড়ানোর কথা। এভাবেই তাহলে, আমরা দ্বীন পরিত্যাগ করাতে আমাদের মাঝে বিশাল ইসলামজীবী একটা শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে - নিজেদের চূড়ান্ত জাহিলিয়াতবশত এমনকি তারা কি শেখাচ্ছেন আমাদের, তা ভেবে দেখারও বোধশক্তি হারিয়েছি আমরা - সত্যাসত্য জানার চেষ্টার কথা না হয় বাদই দিলাম। অথচ, নিরঙ্কুশ সত্য হচ্ছে, মুসলিমদের জন্য কেবল মাত্র একজন ব্যক্তি প্রশ্নের উর্ধ্বে — যিনি আমাদের প্রতি কোন আদেশ বা নির্দেশ দিয়ে থাকলে আমাদের জন্য তা প্রশ্নাতীতভাবে শিরোধার্য — আমরা সে আদেশের বা নির্দেশের মঙ্গলময়তা অনুধাবন করতে পারি বা না পারি - আর, তাঁর প্রতি এই আনুগত্যের দাবী রেখেছেন স্বয়ং আল্লাহ্ সুবাহানাহু তা’লা - সেই ব্যক্তি হচ্ছেন রাসূল (সা.)। প্রথমত, আপনি যখন নিজেকে মুসলমান বলে ঘোষণা করছেন তখন যে ‘শাহাদা’ উচ্চারণ করছেন, সে শাহাদাতে আপনি সাক্ষী দিচ্ছেন যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বাণীবাহক রাসূল। সুতরাং আপনার ঈমানের সাথে, আপনার মুসলিমত্বের সাথে, সূচনালগ্ন থেকেই ঐ মহান ব্যক্তির সম্পৃক্ততা অপরিহার্য এবং অবশ্যম্ভাবী।

দ্বিতীয়ত, পবিত্র কুর’আনে বহু আয়াতে আল্লাহ্ আপনাকে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন রাসূল(সা.)-কে মেনে চলতে - তাঁর আদেশ মেনে চলতে। আপনার হাতের কাছে পবিত্র কুর’আন থাকলে, তা টেনে নিয়ে পরখ করার জন্য আমি মাত্র কয়েকটি আয়াতের পরিচয় বলে দিচ্ছি - আপনি ৪:৪৯, ৫:৯২, ৮:১, ২৪:৫২, ২৪:৫৪, ২৪:৫৬, ৪৭:৩৩ — ইত্যাদির যে কোন একটি বা সব ক’টি দেখে নিন। এরপর সবচেয়ে কঠোরভাবে তাঁকে মেনে চলার কথা বলা হয়েছে মত একটা আয়াতের উদাহরণ দিচ্ছি, যেখানে আল্লাহ্ বলছেন যে, 'কেউ রাসূল (সা.)-এঁর আদেশ যে মেনে চললো, তার অর্থ হচ্ছে সে আল্লাহরই আদেশ মানলো’। একথাটি পৃথিবীর একজন এবং কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির বেলায়ই প্রযোজ্য। ৪:৮০ আয়াতে আপনাকে আল্লাহ্ এই জ্ঞান দান করেছেন।

আর কাউকে, এই মহাবিশ্বের কোন প্রাণীকে এই স্ট্যাটাস্ দেয়া হয়নি — আপনার পিতা-মাতা, ইমাম আবু হানিফা, মাও সেতুং, লেনিন, মৌলানা মৌদুদী, মৌলানা ইলিয়াস, দেওয়ানবাগী বা আপনার পাড়ার মসজিদের ৩ নং হুজুর - যিনি বাকী নামাজের পরে মিলাদের ঘোষণা দেন — কাউকেই নয়। সুতরাং মনে রাখবেন যে অমুক হুজুর বলেছেন বলে আপনি সারাজীবন বিদ’আতপূর্ণ কর্মকান্ডে ডুবে ছিলেন, একথা বলে আপনি শেষ বিচারের দিনে 'পার পাবার’ কোন উপায় নেই — কারণ, কুর’আন বা সুন্নাহর কোথাও একথা বলা হয়নি যে, “অমুক” হুজুর আপনাকে যা খুশী তাই বলবেন, আর আপনি চতুষ্পদ জন্তু বা পালের ভেড়ার মত চলমান সগোত্রীয়দের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেবেন। হ্যাঁ, সিলেটের জয়ন্তিয়াপুরের দুর্গম এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র, নিরক্ষর বর্গাচাষী সুরমান আলী, যিনি তার ৩৫ বছরের জীবনে কখনো সিলেট শহরও দেখেননি, তিনি যদি তার স্ত্রীর বিলম্বিত প্রসব বেদনার জন্য মাইল দু’য়েক হেঁটে গিয়ে, (একটু আগে বলা) শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরা ঐ দুই হুজুরের সমগোত্রীয় কোন হুজুরের কাছ থেকে দোয়া পড়া “ফুঁ” চোঙায় ভরে বা বোতলে করে ভরে নিয়ে এসে স্ত্রীর গায়ে ভক্তিভরে ঢেলে দেন, আল্লাহ্ তাকে তার নিরক্ষরতার জন্য ও অক্ষমতার জন্য ক্ষমা করলেও করতে পারেন। কিন্তু আপনি বা আমি যদি কোন হুজুরের কথায় অন্ধভাবে বিদ’আতপূর্ণ আচরণে নিজেদের নিমজ্জিত করি — কখনো সত্যাসত্য জানতে চেষ্টাও না করি — তবে আমাদের বেলায় আমরা কি আশা করতে পারি যে, আমরা অজ্ঞতার অজুহাতে পার পেয়ে যাবো? আমার তো মনে হয় তা হবার কোন সম্ভাবনা নেই — কারণ রাসূল (সা.)-এর মুখ থেকে মিথ্যা কথা নিঃসৃত হয়নি — এটা আমাদের একটা মৌলিক বিশ্বাস — আর তিনি তো ’খুতবাতুল হা’জায়’ বলেছেন “ওয়াকুল্লা বিদ্’আতীন দালালা, ওয়াকুল্লা দালালতীন ফিন্নার!” (চলবে ........ইনশা'আল্লাহ! আগামী পর্বে সমাপ্য!!)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।