অনুভুতিহীন জীবনের অপেক্ষায়... http://www.raatmojur.com/
প্রথমা, তুমি যখন এসেছিলে, তুমি তখন আহত, তোমার ভাষায় ডানাভাঙা পাখী। আমি তখনো ভাঙিনি কোন ভাবেই, তাই ডানাভাঙার কষ্টের তীব্রতা বুঝিনি। তবু পাশে থেকেছি, সুশ্রুষা করেছি, সারিয়ে তুলেছি আহত ডানা।
আমাদের দিন গুলো ছিলো অনেক রঙীন, অনেক স্বপ্ন মাখা। তারপর যখন দূরে চলে আসতে হলো, জীবনে প্রথম সবকিছু থেকে দূরে থাকবার সারাদিনের কষ্ট দূর হয়ে যেতো তোমার একটা একলাইনের এসএমএস পেলেই।
আউট অব সাইট, আউট অভ মাইন্ড - কথাটা বলেছিলে শেষ দিনে। বলেছিলে আমি দায়মুক্ত, আমার কোন দায় নেই। সেই প্রথম নিজে ভেঙে গিয়ে বুঝেছিলাম, ডানা ভাঙার কি সুতীব্র কষ্ট নিয়ে এসেছিলে আমার কাছে। জানতে চাইতে পারিনি, ভাঙার কষ্ট যদি বোঝোই, তবে কেন ভাঙলে আমাকে? কষ্টের তীব্রতায় জানতে চাইতে পারিনি, আমাকে দায় মুক্ত বলে গেলেও, তুমি নিজে দায়মুক্ত কি না।
দ্বিতীয়া, তুমি এসেছিলে প্রথমার চলে যাবার দেড় বছর পরে, যখন আমি নিজেকে কোনমতে জুড়তে পেরেছি।
তোমার চুম্বন ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, আমি ভাঙা মানুষ, আর ভাঙতে রাজী নই, কেন এসেছো?
তুমি বলেছিলে, আমার সারাদিনের ফুর্তিবাজ চেহারার পেছনে কষ্টের একটা অতল খাদ তুমি ঠিকই দেখতে পাও, তুমি সেই খাদ পরিপূর্ন করতে চাও ভালোবাসায়। বলেছিলে, তুমি কষ্ট পাওনি কোনদিন, তবু বুঝতে পারো কষ্টের তীব্রতা।
আমরা কিন্তু ভালোই ছিলাম, স্বল্প চাহিদা আর সবরকম উচ্চাকাংখা ছাড়া মানুষ দুজনেই। একসাথে হাত ধরে ঢুঁড়ে বেড়িয়েছি ছুটির দিনের ঢাকা। কেনাকাটা করতে গিয়ে নিজেদের মিলিত তহবিলের ক্ষুদ্রতা দেখে কষ্ট পাইনি, বরং হেসে ফেলেছি কোন নিদারুন কৌতুকে।
কারন জানতাম, দুজনেই চাকরী করি আর এভাবেই চলবে ছোট্ট সংসার।
শেষ দিনে তোমার নাকে নথ দেখেই বুকের ভেতরে খামচি দিয়েছিলো কিছু একটা।
আমি কিছু বলার আগেই বলেছিলে, আরো ভালো অপশন ছাড়তে চাওনি তুমি, তাই হুট করেই গত সন্ধেয় "কবুল" বলেছিলে তিনবার, কোন এক গ্রীনকার্ডধারীর গ্রীনকার্ডকে।
তুমিও বলেছিলে আমি দায়মুক্ত, মনে যেন কোন অভিযোগ না রাখি নিজের ওপর।
তোমাকেও প্রশ্ন করা হয়নি, তুমি নিজে কি দায়মুক্ত?
প্রথমা, আবার ফিরেছিলে তুমি, এবারে ডানাভাঙা নয়, পূর্ন বিদ্ধস্ত।
কেঁদেছিলে, ঝরঝর করে কেঁদেছিলে। আমার শুধু মনে আছে, একরাশ স্বপ্ন দেখিয়েছিলে তুমি।
অটবির বিছানা ভালো হবে নাকি রট আয়রনের?
ড্রেসিং টেবিলটা কেমন হবে? রাখবোই বা কোথায়?
তুমি রাঁধতে পারবে না।
চাকরী করতে পারবে না।
একটাই মেয়ে দেবে আমাকে, দুটো না।
আরো কত কি!
সবাই যখন খুশি, আমি নতুন করে শেঁকড় ছড়াতে উপড়ে ফেলেছি পুরানো শেঁকড়- জানলাম, ডানাকাটা পরীরাই স্থির হয়, ডানা ওলা পরীরা উড়ে যাবেই।
প্রানে ধরে কাটতে পারিনি ডানাজোড়া।
এটাই শাস্তি সেই অপরাধের।
এবারে আমাকে দায়মুক্ত বলে যাওনি। তবু নিজেকে দায়মুক্ত মনে হয়েছিলো এবং হয়।
তুমি কি দায়মুক্ত? উড়ে গেলে চলে যায় সব দায়?
তৃতীয়া, তুমি এসেছিলে, তোমার ভাষায় প্রানহীন মৃতা। আমি সেই মৃতদেহে প্রান ফিরিয়েছিলাম।
প্রথমা দ্বিতীয়বার উড়ে যাবার প্রায় পরপরই এসেছিলে তুমি। দুজনেই ছিলাম অসংখ্যবার ভেঙে টুকরো হওয়া মানুষ। দুজনেই এবারে জুড়ে নিয়েছিলাম নিজেদের টুকরোগুলো।
এরপরে দুজনেই মুখ ঘুরিয়েছি, আবার দুজনেই ফিরে আঁকড়ে ধরেছি নিজেদেরকে অসংখ্যবার। তবে সম্পর্কের শেষটার শুরু হয়েছিলো সেই কেতাবের আর সুশিল সমাজের নারীবাদ-পুরুষতান্ত্রীকতা আর পরিচিতদের অযাচিত নাকগলানোকে প্রশ্রয় দেওয়াতে।
যেদিন থেকে তোমার সেলফোনটা বন্ধ হয়েছিলো, সেদিন থাকেই শেষ হয়েছিলো আমাদের সবকিছু।
তুমি বলোনি আমি দায়মুক্ত কি না। আমিও ভাবতে চেষ্টা করিনি তুমি দায়মুক্ত কি না।
তবে অনেক মাস বাদে আমাকে করা ইমেইলটায় তুমি মুক্ত বলেছিলে আমাকে।
তোমরা কেন বোঝনা আমি কোন দায়মুক্তির সনদ নিয়ে আগ্রহী নই? দায়মুক্তির কোন সনদ তো আমাকে আমার হারানো সময় আর স্বপ্ন ফিরিয়ে দেবে না কোনদিন!
আজ রাতে অবশ্য আমি তোমাদের সবাইকে দায়মুক্ত করছি, আদৌ যদি কোন দায় থেকে থাকে তবে তা থেকে। আর দায়মুক্তি আমাকে তো দিয়েছো সবাইই।
আমাকে ভালোবেসে মেয়েটা যখন আমার বুকের ওপর ফেলে তপ্ত নিঃশ্বাস, গভীর নিরাপত্তার আশ্বাস মাখা শ্যামলা মুখটা যখন বুকে মাথা রাখে, শক্ত হাতের বেষ্টনিতে বাঁধে শরীরটা, তার ঘন কালো চুলে মুখ ডুবিয়ে, পিঠে আলতো হাত রেখে ঐশ্বরিক অনুভুতিতে শিখি ভালোবাসার সংঙ্গা, তখন তোমাদের সবাইকে আমার দায়মুক্ত মনে হয়।
আজ আমার সবকিছু ভুলে যাবার রাত...
আজ তোমাদের দায়মুক্তির রাত...
ব্যাকআপ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।