আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কথা বলা হয়নি //

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

প্রীতিলতার১১৯,খুব মন দিয়েই ম্যাট্রিক্স মেলানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু কিছুতেই যেন মিলছিল না । এরি মধ্যে কানে এসে ঠেকলো-আমার নাম ধরে খালা ডাকছে। তখনতো মুঠোফোন এতোটা সহজবোধ্য ছিল না, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টি এন টি থেকে কথা বলতে হতো। সারাদিনে যদি একটা ফোন পেতাম তবে মনে হতো- মাত্র বিশ্ব জয় করলাম। কিন্তু এই ভোরে খালার কন্ঠে ফোন এসেছে শুনে বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল ।

আমার রুম থেকে ফোন পর্যন্ত যেতে খুব সময় লাগে না,তবু আমার পা দুখানা যেন কিছুতেই নড়ছিল না। ভয়ে ভয়ে রিসিভারটা কানে ছোঁয়ালাম,ওপাশ থেকে মেঝখালুর কন্ঠ “তুমি এখনি আসো তোমার বাবার শরীর খুব খারাপ । ” ব্যস এইটুকুই,তারপর খালু আর কি কি বলছিল আমার মনে নেই। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, খুব কাছের বন্ধু কনা ; আমার হাত ধরে বলল - ”তাড়াতাড়ি চল,আমিও যাব তোর সঙ্গে ”। বাবা অসুস্থ তা বেশ কয়েক মাস,পি জি তে ভর্তি।

আমিও সাথেই ছিলাম;দুদিন হয় হলে ফিরেছি ফার্র্স্ট ইয়ার ফাইনাল দেব বলে ;বাবার কি অসুখ তা অবশ্য আমাকে কেউ জানায় নি,কিন্তু এমন কি হলো যে খালু ব্যকুল হয়ে ফোন দিল। আমি কিছু মেলাতেই পারছিলাম না। টেনশনে কনার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে ছিলাম। সকাল বেলা হওয়াতে সাভারের রাস্তা ফাঁকাই ছিল ,তাই ঢাকায় পৌঁছাতে খুব সময় লাগল না। তিন তলা বাড়ীর সামনে সাদা পান্জাবীতে ঢাকা মানুষগুলোকে দূর থেকেই দেখতে পেয়েছিলাম;তখন থেকেই আমি ঘামতে শুরু করেছি।

রিক্সা থেকে নামার সময় খেয়াল করলাম অনেক গুলো চোখ আমাকে অনুসরন করছে । সদর দরজা খোলাই ছিল;আমি ভেতরে পা রাখলাম। সহসা দুলে উঠল আমার পুরো পৃথিবী। বাবাকে সাদা চাদরে ঢেকে গ্যারেজে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আমি একটানে চাদরটা সরিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ডাকতে লাগলাম্ত”আব্বা, ওঠো; তুমি বাইরে ঘুমাও কেন , ভিতরে চলো।

”না,আমার বাবা আর কোন দিন বাড়ীর ভেতরে যায় নি। দাদীর কবরের পাশেই ঘুমিয়ে আছে। বাবা নেই আজ এগার বছর। তবু মনে হয়,এইতো সে দিন বাবার হাত ধরে পদ্মার পার ঘেষে হেঁটে চলেছি। বাবা আমার মতোই সমুদ্র ভালোবাসত খুব ।

বাবা ট্যুরে গেলে সঙ্গী হতাম আমি। একবার সিলেট যাবার পথে রাতের ট্রেনে উঠে পড়লাম, প্রচন্ড ঝড় ছিল সে রাতে । সুবর্ণর জানালা দিয়ে বাতাস আসছিল খুব; বাবাকে বললাম-”জানালাটা লাগাও তো,ভীষন ঠান্ডা লাগছে। ”ঘুমে বাবার চোখটা লেগে এসেছিল ,সহজে ওটা লাগাতে পারছিল না, হঠাৎ স্টিলের পাতটা হাতের উপর এসে পড়ল। অমনি থেতলে গেল ডান হাতের তর্জনী ,সেই ব্যথা নিয়ে বাবা আমাকে নিয়ে উঠল পরিচিত এক বাসায়।

রাতে আমাদেন জন্য খাবার ব্যবস্থা ছিল ,কিন্তু জ্বর মুখে কিছুই মুখে দিতে পারলনা বাবা। রাতে ঘুমানোর জন্যে মশারী দিলেও তা টানানোর কোন ব্যবস্‌হা ছিল না। বাবা আমাকে মশারীতে ঢেকে দিল,তারপর সারা রাত বসে থাকল পাশে; একটা মশা যেন আমার গায়ে বসতে না পারে । পরদিন জ্বর শরীরেই সারাদিন কাজ করে আমাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে এল। এই ছিল আমার বাবা।

বাবা যখন হাসপাতালের বেডে একা শুয়ে থাকত তখন আমি কেবল খাবারের বক্সটা পাশে রেখে চলে আসতাম। মুখে তুলে খাওয়াইনি কোন দিন। স্বপ্নেও ভাবিনি সে সুযোগ আমার কোন দিন হবে না। তাইতো বাবা আমাকে কিছু না বলেই অভিমান করে এমন জায়গায় লুকাল ,যেখান থেকে হাজার কাঁদলেও বাবা কোন দিন আর ফিরে আসবে না। যদি আর একটা জনম পেতাম; তবে বুকটি ভরে তোমায় আমি শুধুই ভালোবেসে যেতাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।