স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে চলতে চাই.......
মা আমি আর স্কুলে যাবো না। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে আর ফিরে যেতে দেবে না তোমার কোলে। আমি সারা দিন তোমার কাছে থাকবো। তোমার আঁচলে আমাকে লুকিয়ে রাখবে।
এভাবেই কথাগুলো আত্যহত্যা করার আগে বলে গেলেন নবম শ্রেনী পড়ুয়া মায়া। মায়া, হ্যাঁ আমি আমাদের মায়ার কথা বলছি। এই সমাজের মায়ার কথাই বলছি। আমার আপনার বোন মায়ার কথাই বলছি। যিনি এই সমাজ থেকে বিদায় নিয়ে বখাটেদের শিকারে চলে গেছে ওপারে।
মাত্র ৮ম শ্রেনীতে ভালো রেজাল্ট করে সদ্য নবম শ্রেনীতে ভর্তি হল মায়া। আশা ছিল ভালো লেখাপড়া করে একটা চাকরি করে দু:খি বাবা মায়ের সারা জীবন কষ্টের সংসারটাকে একটু উজ্জল করবে। কারন তার পরিবারে মায়া ছাড়া আর কেউ নাই পরিবারটাকে দাঁড় করানোর মত। আছে কেবল ছোট ৭ বছরের বোন আর ৪ বছরের ছোট ভাই। অনেক কষ্টই না পরিবারটার।
যে দিনে এক বেলা ভাত মুখে পড়লে ২য় বার আর মুখে পড়ে না।
তাই তো মায়ার এত বড় সংগ্রাম। তার জন্য একটু সমস্য হয় স্কুল টা নিয়ে। কারন তার বাড়ি থেকে স্কুল টা প্রায় ৩ কি.মি.। অভাবি সংসারে টাকা না থাকায় ভ্যান রিক্সার কথা ভুলে মায়া কষ্ট করে পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়।
যত কষ্ট হোক না কেন তাকে স্কুলে যেতেই হবে। কারন তার কাছে কষ্টের চেয়ে সংসার টা গোছানো অনেক বড়।
এভাবেই চলতে থাকে মায়ার জীবন সংগ্রাম। হটাৎ একদিন তাদের পাশের গ্রামের এক মাতবরের ছেলে তাকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে খারাপ একটা মন্তব্য করে চলে গেল। সে দিন মায়ার খুব খারাপ লাগলো।
তার পরও সে এটা নিয়ে কোন চিন্তা করেনি। আরেক দিন স্কুলে যাওয়ার সময় ছেলেটার দেখা, মায়া তখন হালকা ভয় পেয়ে রাস্তার একে বারে শেষ সীমানা দিয়ে তাকে অতিক্রম করলো। যা হোক স্কুলে গিয়ে মায়া ভাবলো ছেলেটা কেন তাকে বার বার ফলো করে। ঐ দিনই স্কুল থেকে ফেরার পথে নির্জন রাস্তার মাঝখানে ছেলেটা আরো ২/৩ জন বন্ধুদের নিয়ে মায়ার রাস্তা আটকালো। ছেলেটা বললো কি নাম তোমার? মায়া ভয়ে ভয়ে বলল তার নামটা।
ছেলেটা তখন তার পুরো ঠিকানা জেনে নিল। আর বলল তার নাম নাকি লতিফ। এই ফাঁকে মায়া দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে মায়া সারা রাত ভয়ে ভয়ে কাটালো। পরের দিন স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো মায়া।
হটাৎ করে ছলেটার কথা মনে পড়লো তার। আর মনে মনে ভাবলো ছেলেটা আজকে আবার তার পথ আটকাবে না তো? নাকি আটকাবে? না থাক আজকে স্কুলে যাবো না। একটু পরে দেখরো তার বাবা বাড়ির দিকে আসতাছে। কি ব্যপার এই সময়ে বাবা? ওতো এখন মিয়া বাড়ির জমিতে কাজ করার কথা। মায়া এগিয়ে বাবাকে বললো কি হল বাবা তুমি এই সময় বাড়িতে? তখন বললো মারে আজকে কাজ নেই তাই ফিরে চলে এলাম।
এটা দেখে মায়া সাহস করে স্কুলের দিকে আবার রওনা হল। কিছু দূর গেলে লতিফ ছেলেটা আবারও তার সামনে। বললো কি ব্যপার মায়া তোমার আজ এত দেরি? মায়া বললো আমার দেরিতে আপনার কি আসে যায়? লতিফ বলল চলো মায়া আজকে তোমাকে নিয় আমি বাজারে ছিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবো। মায়া সরাসরি বলে ফেললো এ যাবে না। তার ক্লাস আছে।
লতিফ এবার জোর করলো মায়া উপর। মায়া চিৎকার দিবে বললে লতিফ চলে যায়। তার পর সে স্কুলে পোঁছেও ভালবাভে ক্লাস করতে পারলো না। এখন সে কিভাবে বাড়িতে যাবে সেটাই চিন্তার বিষয়। পথে যদি তাকে আবার আটকায়? স্কুল ছুটির পর মায়া ১ ঘন্টা দেরি করে রওনা দিল।
ভাবলো ছেলেটা এতক্ষন থাকবে না। কিন্তু যখন একটু যাওয়ার পর দেখলো ছেলেটা আরো ৫/৬ জন ছেলে নিয়ে তার রাস্তা আটকালো। আর এই ফাঁকেই মায়াকে সে বললো তুমি আমার সাথে সকালে ছবি দেখলে না, এখন আমার তোমার ছবি দেখবে এরা। মায়া তো ভয়ে অস্থির। কিছু বুঝতে পারছে না।
সেই। বিকেল ঘনিয়ে নেমে আসতাছে সন্ধ্যা। এরপর রাত। ও তখন জোর গলায় বললো আপনারা আমাকে যেতে দিন। কিন্তু না লতিফ তখন তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলো।
এরপর ওর প্রবল চিৎকার দিতে চেষ্টা করলো। এক সময় তার মুখ চেপে ধরলো অন্য একটা ছেলে। প্রায় ২০ মিনিট তাদের সাথে এভাবে জোর করে মায়া বই পেলে কোন ভাবে পালিয়ে আসলো। মায়া বাড়িতে এসে কান্নায় জড়িয়ে মা বাবা কে সব বললো। এর পর মায়া স্কুল যাওয়া আর হয় না।
তার স্বপ্নগুলোও শেষ। একদিন রাতে মায়া প্রাকৃতিক বাহির হলো একা। এই সময় লতিফ তার বন্ধুদের নিয়া মায়াকে ঘিরে ফেললো। মায়া চিৎকার দেওয়ার আগেই মুখে একটা কাপড় বেধে দিল। এরপর হাত পা সব বাঁধা হয়ে গেল।
তখনই মায়া জ্ঞন হারায়ে পেললো। আর যখন মায়ার জ্ঞান ফিরলো, তখন দেখলো তার সব শেষ হয়ে গেছে। নরপশুরা তাকে আর সমাজে মুখ দেখাতে দিল না। ও আর বাড়িতে ফিরলো না। তার ওড়না দিয়ে একটা গাছের সাথে ওর জীবন টা বিলিয়ে দিল।
শেষ হয়ে গেল মায়ার সব স্বপ্ন।
ব্লগার বন্ধুরা, মায়ার এই কাহিনী সম্পূর্ন কাল্পনিক কাহিনী। আজ মায়ার মত অনেক মেয়ের বেলায় এই ঘটনা ঘটছে। তাতে আমাদের প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। তাই তো আমার এই লেখা।
এই গল্প টা লেখতে আমার অনেক সময় লাগলো। তারপরও অনেক ভুল আছে। তাতে কোন কিছু মনে করবেন না।
সবাইকে ধন্যবাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।