এল-নিনো বা লা-নিনা জলবায়ু চক্রে বাংলাদেশের জলবায়ু খুবই সংবেদনশীল। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিনে সাউদার্ন ওসিলেশন ইনডেক্স (এসওআই) ও বৃষ্টিপাতের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক দেখা যায় ফলে শুষ্ক মৌসুমে (এল-নিনো বছর যখন বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়) এসওআই-র মান ঋণাত্মক এবং বর্ষা মৌসুমে (লা-নিনা বছর যখন বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হয়) এসওআই-র মান ধনাত্মক দেখা যায়। বৃষ্টিপাত কম হলে বাংলাদেশের নদ-নদী শুকিয়ে যায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক খরার প্রভাব দেখা যায়। অন্যদিকে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিনে উল্লেখযোগ্যহারে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে এই নদীগুলির অববাহিকায় বন্যা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৫, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সাল গুলিতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের বন্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে যেখানে ১৯৮৭ ও ২০০৪ সাল ছাড়া সবগুলিই লা-নিনা বছর ছিল।
একইভাবে ১৯৭৭-৭৮, ১৯৮২-৮৩, ১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৮৯, ১৯৯০-৯২, ১৯৯৪, ১৯৯৭ ও ২০০১ বছরগুলি শুষ্ক/খরা মৌসুম ছিল যেখানে ১৯৮৫, ১৯৮৯ ও ২০০১ সাল ছাড়া সবগুলিই লা-নিনো বছর ছিল। সুতরাং আগে থেকেই ইএনএসও জেনে এল-নিনো বা লা-নিনা ভিত্তিক আপদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমকে আরো কার্যকরী করা সম্ভব, যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে ইএনএসও-র নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস ৩ থেকে ৯ মাস আগেই জানা সম্ভব এবং ইএনএসও চক্রের বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য আঞ্চলিক প্রভাবও নির্ণয় করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশে মৌসুমী পূর্ভাবাসগুলি বেশ নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবসম্মত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইএনএসও এবং জলবায়ু পরিবর্তনশীলতার মধ্যে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ থাকলেও এখনো বাংলাদেশে ইএনএসও ভিত্তিক দুর্যোগ প্রস্তুতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
ইএনএসও ভিত্তিক জলবায়ু তথ্যের মাধ্যমে আমরা জলবায়ু সংবেদনশীল বিভিন্ন বিভাগ, যেমন পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য, কৃষি, প্রতিরক্ষা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ও পরিবেশ, প্রভৃতি বিষয়গুলির অভিযোজন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবো। উদাহরণস্বরূপ, http://www.prh.noaa.gov/peac লিংকে ইএনএসও সম্পর্কিত প্যাসিফিক দ্বীপগুলির অভিজ্ঞতা দেখা যাবে।
তাই জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পক/নীতি নির্ধারকদের ইএনএসও সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা/জ্ঞান থাকা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের বিপদাপন্নতা হ্রাসে ইএনএসও কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা জানা প্রয়োজন।
আপনি যদি ইএনএসও সম্পর্কে জানেন তবে আপনার মতে কিভাবে এটি বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে পারে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।