আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসার গল্প

নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .

জীবনের খুব অল্প সময়ই আসে যখন খুব আনন্দে ভেসে বেড়ানো যায়, যে আনন্দ কোন ভাষায় বা কথায় প্রকাশ করা সম্ভব হয়না, তবুও সে আনন্দগুলো হয়ে থাকে বেঁচে থাকার এক অনন্য উপলব্ধি, সুখ স্মৃতি আর শুধুই ভাললাগার এবং ভালবাসার। আজ ৩০ অক্টোবর ২০১০. সব সাধারণ সাদামাটা দিনগুলো থেকে আজকের দিনটা একদমই আলাদা। অন্তত আমার চোখে আর মনে। আজকের আগের সময়টা হিসেবের কড়া দর কষাকষিতে, কি হবে কি হবেনা, সেই সাত পাঁচ ভাবতেই যে ঝক্কি পেরুতে হয়েছে, এখন অনেকটাই তার থেকে নির্ভার। তবুও এক আশংকা থেকেই ছিলো, শেষ মুহুর্তে যেভাবে ভেবে রেখেছি সব কিছু অবিকল ঠিক থাকে যেন, দু্-একটা ব্যতিক্রম হতেই পারে, কিন্তু যেন এলোমেলো না হয়, সে ভয় ও ছিল অল্পবিস্তর ।

সকালেই অফিসে বেড়িয়েছি, কিছু কাজে বাইরে যেতে হল। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় কাজ শেষ করে আবার ফিরে আসার একটা তাড়াও ছিল। কিছুটা টেনশন কাজ করছিল। মুঠোফোনে প্রায় সময়ই ব্যস্ত ছিলাম। কোথায়-কিভাবে-কখন, যদিও এগুলো আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিল, তবুও আবার জেনে নিচ্ছিলাম।

আমাকে অফিসে ফিরে আবার বের হতে হল। খুবই খারাপ লাগছিল, হাতে বেশী সময়ও ছিলনা। তবুও এরই মাঝে সিনেপ্লেক্সের দুটো টিকেট কেটে রাখলাম। শো টাইম – দুপুর ১.০০ উত্তেজনা, ভয় আর কি সব উদ্বিগ্নতায় একটা বাড়তি চাপ ভর করে আছে অনেকক্ষণ ধরে। কাউকে প্রকাশ করার মত নয়, কিন্তু আনন্দটা ধরে রাখার মতও না।

যেন তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা। আমি আগেই পৌছে গেলাম, ও তখনও রাস্তায়। এরকমটা শর্ত ছিল, ও আগে আসবে এবং আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমিও রাজী। বেশ রোমাঞ্চকর ব্যপার, যেন সাগরের ভেতর থেকে মণি খুঁজে বের করা।

তবুও যে মণির সন্ধান আমি আগেই পেয়েছি তাকে চিনে নিতে যে খুব একটা কষ্ট হবেনা, সে বিশ্বাস ছিলো। তাই ও এসে যখন আমাকে ডাক দিল, পড়লাম বিপদে – একবার ডান-বাম, এদিক সেদিক, নাহ; কোথাও ওর টিকিটুকুও খুজেঁ পাচ্ছিলাম না, ও ঠিকই আমাকে অনুসরণ করছিলো। একদম উপরের তলায় চলে এলাম, এখানেই সে আছে, আমি খুঁজছি হন্যে হয়ে, কত প্রতীক্ষা আর অপেক্ষা যেন শত সহস্র মাইল পথ পেরুলেও যে অপেক্ষার শেষ নেই, সেই অপেক্ষার পালা আজ শেষ হতে গিয়েও শেষ না হওয়ার একটা তীব্র – সূক্ষ্ম যন্ত্রণা নিজের মাঝে পেয়ে বসলো, এরপরেও যখন ওকে ফোনেও পাচ্ছিলাম না, দুরুদুরু বুকে পায়চারী করেই চলেছি। তখন কয়টা বাজে, সেটা দেখতে বেমালুম ভুলে গেলাম, ও আমার সামনে আর আমি ওর সামনে। মানে দুজনেই মুখোমুখি।

কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতায় থেকে ওকে একটা অনেক করে বকা দিলাম, আমাকে এভাবে আড়াল করার জন্য। খুব সম্ভবত তখন দুপুর ১.৩০এর কিছু বেশী। মিলি। পরিচয় এ নামেই। অনেকদিনের চেনা।

কিন্তু আজই প্রথম দেখা ওর সাথে। পরিচয়ের হিসেবটাও প্রায় বছরের বেশী সময়। শুধু কথাই হয়েছে, তবু কোনদিন দেখা হয়নি । তাই আজ যখন দীর্ঘ সময়ের পর ওকে খুব কাছ থেকে দেখবার সুযোগ এল, যতক্ষণ পর্যন্ত না দেখা হচ্ছিল ততক্ষণই দীর্ঘ উৎকন্ঠায় অপেক্ষায় ছিলাম । খুব কাছ থেকে দেখলাম ওকে, এক অপরুপ বিষ্ময়ে, যেন এ বিস্ময় অনন্তকালের, দীর্ঘ প্রতীক্ষার।

ওকে বলবার কিছুই খুজেঁ পাচ্ছিলাম না, অথচ কত কি ভেবে রেখেছিলাম বলবো। সিনেপ্লেক্সের ভেতরে যাবার আগে পপ কর্ণ আর কোল্ড ড্রিংকস্ হাতে ওকে খুব কাছে থেকে আর একবার দেখলাম। আমার কল্পনা, আমার স্বপ্ন সবগুলো যেন খুব দ্রুত মিলে যাচ্ছে, যেন যাকে চেয়েছি এতদিন সেই এখন আমার খুব কাছে, আমারই পাশে। সিনেপ্লেক্সে বেশীক্ষণ থাকা হয়নি, ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। তখন দুপুর।

বসলাম ফুডকোর্টে, কিছুই খাবেনা সে। দুজনেই মুখোমুখি। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকা। ওর জন্য একটা গিফট রেখেছিলাম, চকোলেট বক্স। একটা লাল গোলাপ আর দু-লাইনে কিছু কথা।

মিলি’ও আমাকে একটা প্যাকেট দিল। ওর আইডিয়াগুলো ছিল অসাধারণ। ওর অনেক পুরনো কিছু স্মৃতি’র বেশ কয়েকটা আমাকে দিল, যেমন : ফ্রেন্ডশীপ ম্যাসেজ বুক, তিনটা স্টোন আর কিছু একটা। স্টোন তিনটার দুটোতে আমি ওর নাম লিখে ওকে দিলে ও আমার নাম লিখল তাতে আর আকাঁল একটা লাভ সাইন। আমিও আকঁলাম।

তারপর একটা পাথর আমি রেখে আরেকটা ওকে দিলাম, ওর কাছে রেখে দেবার জন্য। আর বাকী থাকলো একটা স্টোন যেটা সম্পূর্ণ খালি। ফ্রেন্ডশীড ম্যাসেজ বুকে ওকে কিছু লিখতে দিলাম ও এত বিশাল কিছু লিখে ফেলেছে, আমি হয়তো তার কিছুই নই। পেছনের পাতায় আমিও লিখে দিলাম, যত নামে ওকে ডাকি সেইসব নামগুলো। সময়গুলোকে যতই ধরে রাখতে চাইছি, যেন সময় ততই দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে।

ঘড়ির কাটায় এগিয়ে যাচ্ছে সেকেন্ড, মিনিট আর ঘন্টার কাটা। আইসক্রিম ওর খুব পছন্দ ছিল। কিন্তু খুব বেশী খেলনা। ওর হাতের তালুতে দুটো ছবি একেঁ দিলাম, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ও কিছু বুঝলো কিনা জানিনা, আমাকে কিচ্ছু বলেনি।

দুজনেই ফুড শপ থেকে বের হলাম। হাঁটতে হাঁটতে বেশ সামনে গিয়ে মিউজিক ক্যাফেতে বসলাম। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি, বাইরের পরিবেশ থেকেও আলাদা। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। বাইরের সূর্যের আলো যখন গায়ে এসে পড়ছিলো ঝিকিমিকি রোদে ওকে দেখতেই লাগছিল অন্যরকম।

কিছু কথা হয়, নীরবতা থাকে তার থেকেও বেশি। নুপূর, আমার খুব পছন্দ। ওর তেমন পছন্দ ছিলনা। একবার বলেছিলাম, সেও অনেক আগের কথা, নুপুর পড়তে। রাজী হয়েছিলো।

আজ যখন এলো ওর দুপায়ে দুটো আলাদা নুপুর ছিলো। আমি প্রায় রাতে যখন ওকে স্বপ্নে দেখতাম, দেখতাম ও আস্তে আস্তে ধীর পায়ে আমার খুব কাছে আসছে নুপুরের একটা রিমঝিম শব্দ পেতাম, বিভোর হবার মত এক অপূর্ব মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়তাম। কল্পনায় যে নুপুরকে বারবার দেখার চেষ্টা করেছি সেই নুপুর পায়ে আমার প্রিয় আমারই সামনে। যেন স্বপ্নকে ছোঁয়া যায়, দেখা যায় এবং অনুভব করা যায় হৃদয়ের স্পন্দন থেকে। ওকে পৌছে দিতে হবে।

সেই পথটুকু ওর সঙ্গী হয়েছি। যখন বের হলাম তখন পড়ন্ত বিকেল। মিষ্টি রোদের লুকোচুরি খেলায় যখন ডুবন্ত সূর্যের হলুদ আভা ওর শরীরে পড়ছিল, যেন এক অপরুপ প্রকৃতির বিচিত্রতা খেলা করছিল সেখানে। চোখ ফেরানোই দায়। বিদায় বেলাটা বেদনার।

কতটা সময়ের জন্য খুব কাছে আসা আবার যার যার গন্তব্যে ফেরা, যেন কিছুতেই ছেড়ে যাবার জন্য নয়। এতদিন পর যখন ওকে এতটা কাছে পেয়ে আবার ফিরে আসতে হচ্ছে, কিছুতেই মন সায় দিচ্ছিলনা। রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে ফিরে এলাম। রাতে যখন বাড়ী ফিরে এসেছি, তখনও ওর হতের স্পর্শ, ওর কথা, ওর হাসি সবকিছু অবিকল আমার চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছিলো। যেন এক সূক্ষ্ম অনুভূতিতে ওকে নিয়ে স্বপ্ন দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছি, সেখান থেকে কিছুদূর এগুলেই আমাদের দুজনার স্বপ্ন রাজ্য, যেখানে ও স্বপ্নের রানী, আমারই মনের রাণী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।