৮। কুণি
তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। ক্লাস ফোর আর ক্লাস ফাইভের সবসময় একটা অব্যক্ত প্রতিযোগিতা থাকে। আমাদের স্কুলেও ছিল। মূলত ক্লাস ফাইভ নিজেদের মুরুব্বী মনে করে,আর স্কুলের অন্যদের ভাবে আণ্ডাবাচ্চা।
কিন্তু ক্লাস ফোর সেটা মানবে কেন?ফাইভ তো ওদের মাত্র এক বছরের বড়। এইসব রেষারেষির জের ধরে ক্লাস ফাইভ ছড়া কাটত,"কেলাস ফোর,হেডমাস্টারের জুতা চোর। "আর আমরা ক্লাস ফোর ক্লাস ফাইভের অনুপস্থিতিতে বলতাম,"কেলাস ফাইভ,পায়খানার পাইপ। "
একদিন হেডস্যার ক্লাস ফোর আর ফাইভকে ডেকে বললেন,"উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল খেলা হবে। প্রত্যেক স্কুল থেকে দল পাঠাতে বলা হয়েছে।
"এটা নতুন কোন ঘটনা না। জানা কথাই ক্লাস ফাইভের যারা ভাল খেলে তাদেরকেই পাঠানো হবে। আর ফোরের যদি কেউ এক্সট্রা অর্ডিনারি ভাল খেলে,তাকেও নিতে পারে। ছোট ক্লাসের কাউকে নিবে না।
যাহোক,আমাদের ক্লাসে একটা ভীষণ একগুঁয়ে ছেলে ছিল,নাম ছিল মনোয়ার।
আমরা ওকে ডাকতাম "ঘাড়ত্যারা" বলে। ও বাগড়া বাধাল। ও স্যারের কাছে গিয়ে বলল,"ক্লাস ফাইভ থেকে যে কয়জন প্লেয়ার যাবে,ফোর থেকেও সে কয়জন নিতে হবে। "স্যার বললেন,"ঠিক আছে। তাহলে ক্লাস ফোর আর ফাইভের মধ্যে একটা প্রীতিম্যাচ হোক।
আমরা আগে তোমাদের খেলার মান দেখি। "
যেদিন খেলা হবার কথা,তার আগের দিন আমরা গেমপ্ল্যান নিয়ে আলোচনায় বসলাম। সবাই মিলে মোটামুটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে মিঠুকে আটকাতে পারলে জয় না হোক,অন্তত ড্র নিশ্চিত। এক্ষেত্রে মিঠুর একটু বর্ণনা দিয়ে নেয়া ভাল। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলগুলোতে ক্লাস ফোর পর্যন্ত সবাইকে পাস করিয়ে দেয়া হয়,কিন্তু ফাইভে উঠে গেলে স্যাররা গড়িমসি আরম্ভ করে দেন।
কারণ ষষ্ঠশ্রেণীতে হাই স্কুলে ভর্তি হতে হয়,যে কাউকে পারমিশন দিলে স্কুলের বদনাম। এজন্য দেখা যেত,ফাইভে প্রচুর বয়স্ক স্টুডেন্ট থাকত,যুগের পর যুগ তারা ক্লাস ফাইভেই পড়ত। মিঠু ছিল এই আদুভাইদের একজন। মোটকথা ও যেমন এককালে সিনিয়র ছিল,ধীরে ধীরে ইয়ারমেট,তারপর জুনিয়র হয়েছিল।
মিঠু ছিল ক্লাস ফাইভের সেন্ট্রাল ডিফেন্স।
মিঠুকে কি করে আটকানো এই চিন্তায় বিভোর হল ক্লাস ফোর। অবশেষে আমরা বুদ্ধি আঁটলাম যে মিঠুর পায়ে যে কুণি আছে,ওখানে যদি কেউ একটা পারা মারতে পারে,তাহলেই কেল্লা ফতে। কুণি কি এটা হয়ত আমরা অনেকে জানি না। যারা নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করে,তাদের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখে এক ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়,যাকে গ্রাম দেশে বলা হয় কুণি। এটা বেশ পেইনফুল হয়।
কোনভাবে যদি ওখানে একটা পারা মারা যায়,তবে মিঠু বাপ বাপ করে মাঠ ছেড়ে পালাবে।
পরের দিন মাঠে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হল। কোথায় ফুটবল কোথায় কি?ক্লাস ফোরের এগার জন বল বাদ দিয়ে মিঠুর পায়ের কুণিতে আঘাত করতে উদ্যত হল। স্যারেরা অবাক,দর্শকেরা অবাক। ব্যাপার কি?এরা খেলা বাদ দিয়ে ওই প্লেয়ারের ঠ্যাঙয়ের প্রতি মনোযোগী কেন?
আলটিমেটলি আমরা মিঠুকে কিছুই করতে পারলাম না।
ক্লাস ফাইভের অন্যান্য যারা ছিল,তারা আমাদের গোল বন্যায় ভাসিয়ে দিতে লাগল। আর আমাদের সে হুঁশই নেই। আমরা ব্যস্ত মিঠুর পায়ের কুণি নিয়ে। খেলার ফলাফল হল ১০-০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।