আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষপঞ্জি-বৃত্তান্ত

নিরপেক্ষ আমি

অক্টোবর বিপ্লবটা কী মাসে হয়েছিল, বলুন তো? দাঁড়ান, আগেই হাসবেন না। আগে বইয়ের পাতাটা একটু উল্টে দেখুন। দিব্যি লেখা আছে, ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় ‘অক্টোবর বিপ্লব’ হয়েছিল। তাহলে? আবার অন্য কোথাও লেখা দেখবেন, বিপ্লবটা হয়েছিল ২৫ অক্টোবর! জুলিয়ান ক্যালেন্ডার আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে গরমিলই এমন বিপদ তৈরি করেছে। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় প্রচলিত ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।

পরের বছর থেকে দুনিয়ার আর সব দেশের মতো তারাও মেনে নিল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের দিন-তারিখে প্যাঁচ লেগে গেল। এমন ‘প্যাঁচ’ লাগার উদাহরণ ইতিহাসে ভূরি ভূরি আছে। আর এসবই হয়েছে দুনিয়াজুড়ে হাজারো ক্যালেন্ডারের বিকাশের জন্য। সভ্যতা বিকাশের সেই আদি যুগ থেকে দুনিয়াজুড়ে হাজার হাজার ক্যালেন্ডার বিভিন্ন সময় বিকশিত হয়েছে।

মায়ান ক্যালেন্ডার, অ্যাজটেক ক্যালেন্ডার, প্রাচীন মিশরীয় ক্যালেন্ডার বা আমাদের এই ভারতেরও অনেক বৈদিক ক্যালেন্ডার সময়ের সঙ্গে লড়তে না পেরে হারিয়েই গেছে। আবার নানা রকম সংস্কার করে, সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলে টিকেও আছে অনেক ক্যালেন্ডার। টিকে আছে মানে, একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়েই টিকে আছে। আমাদের এই বাংলাদেশেই গ্রেগরিয়ান, হিজরি, বাংলা ও বৈদিক—কমপক্ষে এই চারটি ক্যালেন্ডার নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে। চাঁদ-সূর্য-নক্ষত্রের হিসাব ১৯৫২ সালে ভারতের একটি জাতীয় ক্যালেন্ডার তৈরির জন্য ‘ভারতীয় ক্যালেন্ডার রিফর্ম কমিটি’ নামে একটি কমিটি করা হয়েছিল।

তারা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, ভারতজুড়ে বেদ-ভাষ্য সূর্য সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করে কমপক্ষে ৩০টি ভিন্ন ক্যালেন্ডার বিকশিত হয়েছে। এ রকম ঘটনা শুধু ভারতেই নয়, সব সভ্যতাতেই ঘটেছে। প্রতিটা সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যার যার নিজস্ব ক্যালেন্ডারও বিকশিত হয়েছে। সেই মায়া সভ্যতায়ও বেশ সুসংগঠিত ক্যালেন্ডার ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। মায়ানদের সেই ক্যালেন্ডারের প্রকৃতিও ছিল খুব মজার।

নানা ধরনের দিন-তারিখের হিসাবের মধ্যে মায়ানরা পিরামিড দিয়েও নাকি বছরের হিসাব রাখত! মেক্সিকোতে টিকে থাকা সেই পিরামিড-ক্যালেন্ডারের চারপাশে চার সারি সিঁড়ি আছে। প্রতিটি সারিতে ৯১টি ধাপ আর সবার ওপরে একটি প্লাটফর্ম মিলিয়ে মোট ৩৯৫টি ধাপ। মায়ানরা নাকি এর প্রতিটি ধাপকে আলাদা একটি দিনের প্রতীক হিসেবে গণনা করত। মায়ানদের আরও জটিল কিছু ক্যালেন্ডারের নিদর্শন পাওয়া গেছে, যেগুলো পরে আবার অ্যাজটেক সভ্যতায়ও চলে এসেছে। আদি যুগে ক্যালেন্ডারের এমন বিকাশ ব্যাবিলনেও হয়েছিল।

বিকাশ হয়েছিল গ্রিসেও। গ্রিসের মজাটা ছিল, এখানে প্রতিটা শহর নিজস্ব উপায়ে তৈরি নিজ নিজ বর্ষপঞ্জির হিসাব রাখত। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল রোমান ক্যালেন্ডার। এ ক্যালেন্ডারের বছর শুরু হতো মার্চিয়াস বা মার্চ মাস থেকে। প্রাচীন ভারতেও বহু ধরনের বর্ষপঞ্জির হিসাব চালু ছিল।

দিনক্ষণ গণনার ভারতীয় এসব ব্যবস্থাকে একটি গোছালো রূপ দেওয়া হয়েছিল সূর্য সিদ্ধান্ত নামের বেদভাষ্যে। আদি ক্যালেন্ডারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত ক্যালেন্ডার মনে করা হয় মিসরীয় বর্ষপঞ্জিকে। দুনিয়ার আর সব আদি ক্যালেন্ডার মূলত চান্দ্রমাসের হিসাব রাখত। কারণ, চাঁদের বাড়া-কমাটা হিসাব করা সোজা ছিল। কিন্তু মিসরীয়রা তাদের বছর হিসাব করত সূর্য দেখে।

আসলে মিসরীয় সভ্যতা প্রকৃতি, বিশেষ করে নীলনদের ওপর খুব নির্ভরশীল ছিল। ফলে তারা সূর্যের অবস্থান ও ঋতুকে হিসাব করতে শিখে নেয়। বছরকে ছয়টি ঋতু ও ১২ মাসে ভাগ করে ফেলেছিল মিসরীয়রা। প্রতি মাসে ৩০টি করে দিন ছিল এবং বছরের শেষে অতিরিক্ত পাঁচটি উত্সবের দিন মিলিয়ে ৩৬৫ দিনের বছর! অনেক বড় পোষ্ট হওয়াতে এই লিংকে বিস্তারিত দেখতে পারেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।