আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্ডাসট্রিয়াল পুলিশ, ট্রেড ইউনিয়ন সংস্কৃতি এবং গার্মেন্টস মালিকি আচরণ

একজন খেটে খাওয়া-শ্রমজীবী মানুষ। নিজের অধিকারের কথা বলতে চাই ও অন্যের শুনতে চাই। তাই বলে দেশ, দেশের মাটি, আলো-বাতাশ ও মানুষকে বাদ দিয়ে নয়।

আজ থেকে শিল্প এলাকায় কাজ শুরু করছে শিল্প পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এই শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠনের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে মালিকরা আশ্বস্ত হলেন কারখানায় তারা যা ইচ্ছ তাই করবেন। আর শ্রমিকরা এবং শ্রমিক নিয়ে যারা ভাবেন তারা শংকার মধ্যে মধ্যে পড়লো-গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে কি শ্রমিকদের মুখ বন্ধ রাখতে রাখতে একটি অগ্নেয়গিরি বানিয়ে ফেলবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সঙ্গে সহমত পোষন করতে চাই। চাই উনার মত ¯^প্ন দেখতে-শিল্প পুলিশ মালিক-শ্রমিক সর্ম্পক উন্নয়নে গুরুত্ব পূণ্য ভ‚মিকা রাখবে। জুলাই মাসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড কাজ করা সময় শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যও আমরা শুনেছি, মজুরি বোর্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে একটি মোটামুটি গ্রহনযোগ্য কাঠামো দাঁড় করাতে কি ভ‚মিকা রেখেছেন সেটাও আমরা খবর রেখেছি।

জেনেছি। কিন্তু শংকা আমাদের অন্যখানে। যে পুলিশ দিয়ে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন সেখানেই আমাদের ভয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এদেশের পুলিশরা শত প্রতিক‚লতার পরেও যা করছেন এটি শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। তার মানে তারা যা বেতন হিসাবে পাচ্ছে এটি যথেষ্ট নয়।

প্রধানমনস্ত্রীর সাথে আর একটি কথা যোগ করতে চাই। ত হলো পুলিশ চাকুরি পাওয়ার সময় যে কাঠ-খড় পোড়ান তারা কাজ করা সময় সে কথাও মনে রাখেন। এই সব মনে রাখার কারণে একজন পুলিশ যখন কর্তব্যরত থাকবেন তখন একটি পক্ষের সাথে যুক্ত থাকবেন। কারণ তাদের ‘কাঠ-খড়’ ও কম পাওয়ার বিষয় ওই জাতীয় কোন একটি পক্ষের কাছাকাছি থাকতে বাধ্য করাবে। তাহলে তারা অধা খাওয়া শ্রমিকের সাথে থাকবেন না অগাধ টাকার মালিক গার্মেন্টস মালিকদের সাথে থাকবেন? গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের যখন-তখন চাকরি নট করে দেন, ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেন ন্,া সংগঠিত হতে দেন না, নারী শ্রমিকরা মাতৃকালিন ছুটি চাইতে গেলে ছাঁটাই হন, মারধর করেন, যৌন হয়রানি করেন।

এবং সব চেয়ে বড় বিষয় হলো গার্মেন্টস শিল্পের মধ্যেই আর একটি শিল্প হচ্ছে সম্ভাবনা ময় সোয়েটার শিল্প। এখানে অধিকাংশ মালিক কাজ শুরু করা সময় কাজের রেট ধরেন না, কাজ শেষে বা মাঝ পথে রেট ধরেন আর তখনই শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামেন। মালিকরা প্রায়ই কাজের প্রকৃতি হিসাবে রেট ধরেন না। আর এখন পর্যন্ত কোন নীতি মালাও সোয়েটারে তৈরি হয়নি-কি ভাবে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ হবে। এই কারণে মালিক-শ্রমিক সর্ম্পক প্রতিদিন ছেদ করার জন্য সুযোগ থাকছে।

এরা যখনই আলোচনার কোন সুযোগ না পেয়ে রাস্তায় বের হবে কিছু শ্রমিক কালো তালিকা ভুক্ত হয়ে ছাঁটাই হবেন। তারপর ২/১ দিন নিজেদের মধ্যে অসংগঠিত সর্ম্পক থাকাকালিন তারা আন্দোলন করবে। এই আন্দোলন চলাকালিন সময়ে কিছু অনকাক্সিখত ঘটনা ঘটবে। যা আইনের চোখে শত ভাগ দ্বন্ডনীয়। তখন এই ইন্ডাসট্রিয়াল পুলিশ কি করবেন? শ্রমিকরা কিছু এনজিও এর শিক্ষার কারণে হোক আর তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হোক কিছু মালিককে বিচারের কাঠগড়ায় তুলেছেন।

মাসে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমান মালিকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পর্যন্ত জারি হয়। তারপরও সেই মালিকরা শ্রম আদালতে হাজির হন না। যা শ্রম আদালতের রেজস্টারে পাওয়া যাবে। তাহলে এই উন্ডাসট্রিয়াল পুলিশ কি ভাবে পারবেন সেই অসৎ, লুন্ঠনকারি, শোষক মালিকের বিরুদ্ধে লড়ে শ্রমিকদের সাথে মালিকের সর্ম্পক উন্নয়ন করতে?(এখানে সব মালিকরাই এমন না অনেকে ভাল আছেন অবশ্যই) ০১ নভে¤^র আমাদের সময় সহ কয়েকটি সংবাদপত্রে সিপিবির একটি বিবৃতি দেখলাম। সেখানে বলা হয়েছে সরকার ইন্ডাসট্রিয়াল পুলিশ দিয়ে ডান্ডা মেরে শ্রমিকদের ঠান্ড করে দেবনে।

অন্য শ্রমিক সংগঠন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও মুখ খুলতে পারেনি। কারখানা, শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে ধরে নিলাম আমাদের অভিজ্ঞাতা ভাল নেই। আদমজী খুলনা ইত্যাদি কারখানা এলাকায় শ্রমিকরা অরাজকতা তৈরি করেছেন অতীতে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধেসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছেন। তাহলে এই দেশ প্রেমিক শ্রমিকদের দেশের কারখানা ধ্বংশের জন্য কারা ব্যবহার করেছে? খুব ভারিক্কি ভাব দেখিয়ে তাত্তিক বক্তব্য রাখতে দেখি কিছু ভদ্রলোককে বলেত েদখা যায়- এদেশে ট্রেড ইউনিয়নের যে অভিজ্ঞতা তা খুবই দুঃখ জনক।

তাদের কাছে খুব সহজ একটি প্রশ্ন হলো মালিকদের আচরণের অভিজ্ঞাতা কি ভাল? স্বাধীনতার পর তৎকালিন সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিলো কলকারখানা রাষ্ট্রায়াত্ব করা। এই রাষ্ট্রায়াত্ব করার কারণে ততকালিন সরকারের যে সামাজিক মালিকানাধীর কর্মসূচি ছিল সেই কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার জন্য দেশি-বিদেশি শক্তি কারখানাগুলো ধ্বংশ করার জন্য কাজ করেছে। ৭৫ এর সেই শক্তি স্বার্থক হলে নতুন আর একটি শক্তি যোগ হয় প্রকাশ্যে তা হলো বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ জাতীয় শক্তি। তারা চায়নিএই ধরণের কর্মসূচি এই দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। এদেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হোক।

তার জন্যই এদেশের ট্রেড ইউনিয়নের যে দৃষ্টান্ত হয়েছে তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাকে গালাগালি করে দেশ থেকে শ্রমিকি অধিকার তুলে দিতে মালিকরা যে আচরণ শ্রমিকদের সাথে করেছেন তাও কি কোনভাবে শোভনীয়? শ্রমিকদের ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে কাজ করাবে-তা হবে একটি পাগলের সিদ্ধান্ত। শ্রমিককে যদি মানসিকভাবে বন্ধু করে না নিতে পারেন-তাহলে মালিকের কারখানায় কাজ করে রাত্রে মালিকের বিরুদ্ধে গালাগালি করবে। আর সেই সুযোগে সৎ ব্যবহার করবে ‘সুযোগ সন্ধানীরা’। প্রধানমন্ত্রী ৩১ অক্টোবর ইন্ডানট্রিয়াল পুলিশ উদ্বোধন করতে গিয়ে যে আশার বানী শুনিয়েছেন সবাই সে ¯স্বপ্ন দেখেন।

কিন্তু ইন্ডাসট্রিয়াল পুলিশকে যদি গার্মেন্টস মালিকদের ব্যক্তিগত বাহিনী হয়ে যায় ত্হালে সব চেয়ে দুঃখজনক। আর হয়ে যাবে হিতে বিপরীত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।