আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ শ্যাষ

ঈদের অপেক্ষায় আমরা কত উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই না প্রহর গুনলাম। তারপর যেই না এই গোনাগুনি শেষ হলো, ঈদ এসে হাজির। কিন্তু ঈদ এতটাই ব্যস্ত যে, তিনি এসে হাজির হলেও দুই-চার দিন থাকবেন_ সেই সময় তার হাতে নেই। এসেছেন, মাত্র একটা দিন থেকেছেন। তারপর কারও কাছে না বলে না কয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন।

একবারও চিন্তা করলেন না, তিনি এসে একদিনের বেশি না থাকলেও তার আগমন উপলক্ষে যে মেহমানগুলো এসেছে, তারা থেকে যাবে দিনের পর দিন। ঈদ সাহেব চিন্তা না করলেও আমাদের কিন্তু চিন্তা না করলেই হচ্ছে না। আমরা রীতিমতো দুশ্চিন্তা করছি এ জন্য, কারণ ঈদ-পরবর্তী মেহমানের আনাগোনার বিষয়টা আমাদের ভালোই যন্ত্রণা দিচ্ছে। হ্যাঁ, মেহমানদারি করা অতি উত্তম কাজ। কিন্তু পিঠও তো বাঁচাতে হবে নাকি! আমার পরিচিত এক লোক যখন মেহমানের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল তখন তাকে তার এক বন্ধু বোঝাচ্ছিল_ দেখ, মেহমানদের ওপর বিরক্ত হতে নেই।

কোনো রকম অযত্নের কারণে মেহমানরা যদি কষ্ট পায়, তাহলে অমঙ্গল হয়। লোকটা রেগে বলল_ খুব যে বলছিস অযত্নের কারণে মেহমানরা কষ্ট পেলে অমঙ্গল হয়, কিন্তু যত্ন করলেও যে অমঙ্গল হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিস? বন্ধু অবাক হয়ে বলল_ ওমা, যত্ন করলে অমঙ্গল হবে কেন? লোকটা বলল_ অমঙ্গল এ জন্য হবে, কারণ বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছে আজকের মধ্যে যদি বাসা থেকে অতিরিক্ত লোকজন না সরাই তাহলে দরজায় তালা ঝোলাবে। সে নাকি তার কাজের লোককে বাজারেও পাঠিয়ে দিয়েছে তালা আনার জন্য। আমার এক দুলাভাই প্রায়ই বলেন_ ঈদের পর বেড়ানোর ব্যাপারে একটা সিস্টেম হওয়া দরকার। কেউ কারও বাসায় বেড়াতে গিয়ে একদিনের বেশি থাকতে পারবে না।

যদি থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে নানাবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেমন লবণ ছাড়া তরকারি রান্না করে খেতে দেওয়া, মশারি ছাড়া ঘুমুতে দেওয়া ইত্যাদি। তবে কথাগুলো বলে তিনি যে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন তা কিন্তু নয়। তার নাকি কেবলই মনে হয় লবণ ছাড়া তরকারি রান্না করে খেতে দেওয়ার নিয়ম চালু করলে ভাতের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ মেখে খাওয়ার জন্য মেহমানরা যদি বাড়ি থেকে পোঁটলায় করে লবণ নিয়ে আসে! মশারি ছাড়া ঘুমানোর নিয়ম করলে যদি তারা ব্যাগে করে মশা মারার স্প্রে নিয়ে আসে! আসলে টেনশন করার মতো ব্যাপারই বটে। আরেকটা টেনশন করার মতো ব্যাপার হচ্ছে ঈদ অনুষ্ঠানমালা।

'কাসেম-মালার প্রেম' কিংবা 'কিরণ-মালার প্রেম' ছবির মালা আপনাকে নেচে-গেয়ে আনন্দ দেবে, ফুলের মালা আপনাকে সুগন্ধি দেবে। কিন্তু ঈদ-পরবর্তী এক সপ্তাহের টিভি অনুষ্ঠান'মালা' আপনাকে কী দিয়েছে বা দিচ্ছে সেই হিসাব-নিকাশ করার দায়িত্ব আপনার। আমার এক বন্ধু সেদিন কথায় কথায় বলছিল_ হাসির পর কান্না অনিবার্য। আর হাসির পর কান্না যে অনিবার্য, এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। লেটেস্ট উদাহরণ হচ্ছে, ঈদ এবং ঈদ-পরবর্তী গাদা গাদা টিভি অনুষ্ঠান।

ঈদে বাড়ি ফেরা যেমন ঘাম ঝরানোর কাজ, ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরতে গিয়েও কম ঘাম ঝরে না। অবশ্য আপনি যদি সেই লোকটার মতো চালাকি করতে পারেন তাহলে ঘাম নাও ঝরতে পারে। এক লোক চা স্টলে বসে গল্প করছিল_ আমি ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেছি। কিন্তু এক ফোঁটা ঘামও ঝরেনি। তার কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক_ বলো কী! আমরা যেখানে ঢাকায় ফিরতে গিয়ে ঘামের বন্যা বইয়ে দিয়েছি, তুমি কিনা ঘাম না ঝরিয়েই চলে এসেছ! এটা কীভাবে সম্ভব? লোকটা বলল_ সম্ভব সম্ভব।

তোমরাও যদি লঞ্চে না উঠে আমার মতো সাঁতরিয়ে উঠতে, তাহলে ঘাম ঝরত না। যাই হোক, সাঁতরিয়ে আসুন আর গড়াগড়ি দিয়ে আসুন, ঢাকা না এসে যাদের উপায় নেই তাদের তো আসতেই হবে। আমরা জানি কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। তবে আপনি ঢাকা আসতে গিয়ে যতই কষ্ট করুন না কেন, আপনার জন্য কিন্তু কেষ্ট অপেক্ষা করছে না। অপেক্ষা করছে হরতাল।

অতএব প্রস্তুত হোন লাগাতার হরতালের জন্য।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।