আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সড়ক দূর্ঘটনা হাইওয়ে থেকে নগরীতে

মাকসুদুল কবীর মন্ডল সোহেল একজন প্রশিকষনরত শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী, উন্নয়ন কর্মী এবং অনিয়মিত সাংবাদিক (ফিচার)…! আমি জানতে, শিখতে চাই..এবং তা অন্যের সাথে ভাগাভাগি (শেয়ারিং)করতে চাই।

সড়ক দূর্ঘটনা হাইওয়ে থেকে নগরীতে মাসুদুল কবীর সোহেল বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগের পাশাপাশি মানুষ সৃষ্ট মহাদূর্যোগ প্রতিনিয়ত ঘটেই চলছে। সেটি হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনা। দেশের হাইওয়েগুলোতে এই বিষয়টা নিত্য দিনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা নগরীতে সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ: বেড়েই চলচে। তাই আাজ অনেকের প্রশ্ন, এই মৃত্যুর শেষ কোথায়? দূর্ঘটনা সংক্রান্ত গবেষনা প্রতিষ্ঠান অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষনা তথ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং লক্ষাধিক মানুষ পঙ্গত্ব বরন করছে।

এক বছরের সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের সংখ্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে আরও হাজার হাজার পরিবার। বছরের পর বছর ধরে এই পরিবারগুলোকে বয়ে বেড়াতে হয় স্বজন হারানোর ক্ষত। শুধু স্বজন হারানোর ক্ষতই নয়, এর সাথে এসব পরিবার যে আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির স্বীকার হয় সেখান থেকে বের হওয়া তাদের জন্য দূরূহ বিষয় হয়ে দাড়ায়। প্রতিবছর সারা দেশের হাইওয়েগুলোর মর্মান্তিক দূর্ঘটনার গুলোর চিত্র গনমাধ্যমের দ্বারা ঢাকা নগরবাসী অবগত হলেও কখনোই স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু গত ১০ অক্টোবর ২০১০ বৈশাখী পরিবহনের একটি বাস ৪০ জন যাত্রীসহ সাভারের তুরাগ নদীতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাটি অনেকেই দেখে বিচলিত হয়েছেন।

ইতিপূর্বে এই নগরীতে মৃত্যুজনিত ঘটনাগুলো স্বজনহারা পরিবারসহ সচেতন মহলকে নাড়া দেয় তার মধ্যে উল্লেখ্য ঢা:বির মেধাবী ছাত্রী হ্যাপির শাহাবাগ মোড়ের মৃত্যু। ইডেন কলেজের সামনে বুয়েটের ১ম বর্ষের ছাত্র.....মৃত্যু। কাকরাইলে উইলস লিটন ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্র শিশু হামিমের মৃত্যু। মগবাজার মোড়ে মটর সাইকেল আরোহিত দম্পতির মৃত্যু, বেসরকারী ওর্য়াল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র.... মৃত্যু। কাকরাইলে লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের দেয়ালে এখনও.যে পোষ্টারটি চোথে পড়ে, তা হচ্ছে ‘‘হামিমের মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়”।

কিন্তু অপরাধীদের শাস্তির জন্য ১৯৯২ সালের পাস হওয়া সংবিধানের ২৭৯ ধারায় সড়ক দূর্ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর জেল, আর জরিমানা মাত্র এক হাজার টাকা। যা যথেষ্ট নয়। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি দূর্ঘটনা ঘটার পর সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গত ১৭ বছরে যতগুলো মামলা হয়েছে তার মধ্যে একটি মামলার রায় হয়েছে। *প্রতিটি দূর্ঘটনার কারন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষন করে দেখাযায়, চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালনা ও অসাবধনতার জন্য মর্মান্তিক মৃত্যগুলো ঘটেছে।

দূর্ঘটনার কারনগুলোর দিকে আরও নজর দিলে দেখা যায়- ১. চালকের দক্ষতার অভাব, ২. যানবহনের যান্ত্রিক ত্র“টি, ৩. জনসাধারন ও চালকের ট্রাফিক আইন না মানা, ৪. রাস্তাঘাটের পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাব ৫. চালাকের গতিসীমা না মানা, ৬. যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, ৭. জনসাধারনের যত্রতত্র ও যখন তখন রাস্তা পার হওয়া, ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, ৮. অপরিকল্পিত নগায়ন, ৯. ডেসা ওয়াসা টেলিফোন লাইন স্থাপনে সমন্বয়হীনতা ১০ অপর্যন্ত আরিকল্পিত ও নিæমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মান, ১১. রাস্তায় ডিভাইডারের অভাব, ১২. গাড়ি রাস্তায বের করার আগে সঠিকভাবে ত্র“টি পরিদর্শন না করা, ইত্যাদি। তাই বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের দাবী। সড়ক দূর্ঘটনার প্রতিরোধে প্রয়োজন কার্যকর আইন ও তার যাথাযথ প্রয়োগ, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রন করা এবং সড়ক সতর্কতা সংকেত নিশ্চিত করা, দূর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং দূর্ঘটনার পর অল্প সময়ের মধ্যেই যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা, চালকদের বেপারোয়া ও নেশা গস্থ অবস্থায় গাড়ি চালোনো বন্ধ করা, ভুয়া লাইসেন্স প্রাপ্ত-অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো রোধ করা, ২০ বছরের অধিক পুরনো গাড়ি রাস্তা থেকে অপসারন করা এবং সময়মত গাড়ির ত্র“টিপূর্ণ যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করা, পাঠ্যপুস্তকে সড়ক নিরাপদকরনের বিষয়াবালী অন্তভুক্ত করা এবং প্রত্যেক হাসপাতালের নার্সদের সড়ক দূর্ঘটনার আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।