আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক নাস্তিকের দ্বিতীয় চিন্তা

বিভিন্ন ব্লগগুলোতে আস্তিক আর নাস্তিকের লড়াই আমি উপভোগের মানসিকতা নিয়েই পড়ি। কিন্তু মন্তব্য প্রদানে অতি সন্তর্পণে বিরত থাকি। একেকজন আঁকড়ে থাকেন তাঁদের নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে। তা ভাঙার চেষ্টা করা সময়ের অপচয় মাত্র। একজন আস্তিকের পটভূমি, ইতিহাস, ইত্যাদি, তা যেই ধর্মেরই হোক না কেনো, অনেক বিশদ এবং বিস্তৃত বলে বিরুদ্ধবাদির যুক্তির কাছে অতি সহজেই আক্রান্ত (vulnerable) হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে নাস্তিকতার বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। নাস্তিক শব্দটাই যে এক কথায় সব কিছু প্রকাশ করে দেয়। আস্তিকরা একটা সুবিধা ভোগ কের সবসময়, যা থেকে নাস্তিকরা বঞ্চিত। তা হলো, মৃত্যুর পর জীবন, অন্ততপক্ষে একটি। কারো কারো দৃষ্টিতে হোকনা তা শুধু সম্ভাবনাই, প্রতিনিয়ত সম্ভাবনার স্বপ্ন নিয়েই কি মানুষ জীবন যাপন করছে না? আমার জীবনের একটা সত্যি ঘটনা দিয়ে শেষ করবো এই লেখাটা।

নইলে এ লেখার নামকরণ শুদ্ধ হবে না। ১৯৯০ সালের কথা। তখনো U.S.S.R. ভেঙে টুকরো টুকরো হয়নি। জার্মানির ডুজেলডরফে একটি মেডিকেল কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরদের বার্ষিক সন্মেলন শেষে ছয় দেশের প্রতিনিধিরা এক টেবিলে বসে ডিনার খাচ্ছি। আগের রাতের গালা পার্টিতে অন্যদের মদ্যপানের সাথে পাল্লা দিয়ে ১০/১২ গ্লাস অরেঞ্জ জুস খেয়ে বিগড়ানো হজম প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে খানিক সমস্যায় আছি।

গ্রীক ভদ্রলোক একটি প্রশ্ন করে সন্মুখীন করলেন আরেকটি সমস্যার। গালা পার্টির রাতে আরব আমিরাতের প্রতিনিধি এক ভারতীয় মুসলমান মদে চুর হয়ে অনেক খিস্তি করেছে, একসময় হর হর করে বমিও করেছে। গ্রীসের প্রতিনিধি দুফালি করা ঝিনুকটার ভেতর লেবু চিপতে চিপতে প্রশ্নটা করলেন। -তোমরা দুজনেই মুসলমান, তুমি মদ খেলে না, সে তো দিব্যি খেয়ে মাতাল হলো। কে সঠিক? এখানে উল্লেখ্য, আমি এই সন্মেলনে সৌদি আরবের প্রতিনিধি।

এতগুলো মদপ্রিয় লোকের সামনে কোন যুক্তি দেবার অভিরুচি ছিলো না। বাঁচিয়ে দিলেন বুলগেরিয়ান ভদ্রলোক। -মুসলিমস্ আর নট পারমিটেড টু ড্রিঙ্ক, আই নো ইট। আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো সে। সেই ধারাবাহিকতায় ইতালিয়ান আপাদমস্তক নিখুঁত সুন্দরী মহিলাটি টেবিলের সবার ধর্ম জানতে চাইলেন।

আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমি ছাড়া সবাই ক্রিশ্চিয়ান। U.S.S.R. এর রাশিয়ান, আইভান যার নাম, আমাকে স্তম্ভিত করে বলে বসলো, আমি এথিস্ট (Aethist), অর্থাৎ নাস্তিক। স্কুইডের হাত পা চিবানো বন্ধ করে থ বনে গেলাম ক্ষণিকের জন্য। জীবনের প্রথম এক স্বঘোষিত নাস্তিক আমার সামনে! -আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি তোমাকে, বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কা সামলে তাকে বললাম। -আমরা আস্তিকরা, মুসলমান কি ক্রিশ্চিয়ানরা, বিপদে আপদে, অসুখে বিসুখে স্রস্টাকে স্মরণ করি, বিধাতার কছে আত্মসমর্পণ করে মনোবল বৃদ্ধি করি, তোমরা এরকম পরিস্হিতিতি কি করো? আইভান একটা বিষম খেলো, আমার যেনো মনে হলো আমার প্রশ্নটা শুনেই।

তারপর হঠাৎ বাস এসে যাওয়ায় কথা আর এগুলো না। সবাই ফিরে গেলাম হোটেলে। কি মজা, পরদিন সকালেই ফ্রাংকফুর্ট টু জেদ্দা! অপেক্ষায় রয়েছে বউ, ছেলেটার আব্বু ডাক শুনতে মন হয়ে আছে উন্মুখ। ভুলেই গেলাম নাস্তিক আইভানের কথা। অনেক সকালে রুমের দরজায় নক।

দেখি আইভান, দ্য রাশিয়ান। চোখ মুখ লাল, উসকো খুসকো চেহারা। রাতে ঘুমায়নি মনে হয়। কিংবা অতিরিক্ত মদ্যপাণ জনিত এলোমলোতাও হতে পারে। -তোমাকে একটা সত্য কথা বলতে এসেছি।

আর থ্যাংকু জানাতে। খানিকটা ইমোশনাল মনে হলো তাকে। -কাল সারারাত ঘুমাইনি। শুধু ভেবেছি আর ভেবেছি। তোমার প্রশ্নটা আমার চোখ খুলে দিয়েছে।

-কি সেটা? আমি প্রশ্ন রাখলাম। একদাম ঠাহর করতে পারছিলাম না, কি বলবে এবার সে। -আমি এথিস্ট নই, অনেক ভেবে দেখলাম, মনে প্রাণে আমি একজন পুরোদস্তর ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ান। গলা তাঁর আবেগে বুঁজে আসছিলো টের পাচ্ছিলাম। বুঝলাম, আমাকে সাক্ষী রেখে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করে গেলো আইভান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।