আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪০ প্রশ্ন সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে বিএনপি'র গণতদন্ত কমিশন

মামুন বিশ্বাস

৪০ প্রশ্নকে সামনে রেখে ট্রেন দুর্ঘটনার সরেজমিন তদন্তে আজ সিরাজগঞ্জে যাচ্ছে বিএনপি গঠিত গণতদন্ত কমিশন। সেখানে তারা ওই ঘটনায় প্রশ্নবোধক প্রতিটি পয়েন্ট খতিয়ে দেখবে সূক্ষ্মভাবে। তদন্তে সহায়তা নেবে- প্রত্যক্ষদর্শী, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সমাবেশের আয়োজনকারী ও গণমাধ্যম কর্মীদের। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাক্ষ্য ছাড়া এ তদন্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা রাখা হবে না। দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি, মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ও সরকারি তদন্ত কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে তদন্তের রূপরেখা তৈরি করে গণতদন্ত কমিশন।

কমিশনের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তদন্তের পয়েন্ট ও এসব তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১১ই অক্টোবর দুর্ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে ১৬ই অক্টোবর গণতদন্ত কমিশনটি গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তদন্ত শেষে কমিশনের প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন তিনি। এদিকে কমিশনের সদস্যরা যেসব প্রশ্নকে সামনে রেখে তাদের তদন্ত কর্মকাণ্ড শুরু করবেন সেগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর থেকে ট্রেন ছাড়তে ২০ মিনিট ও সমাবেশস্থল অতিক্রমে ১ ঘণ্টা দেরি হয়েছিল কেন? আগের স্টেশন থেকে ট্রেন চালককে সমাবেশের কথা জানানো হয়েছিল কি না। দুর্ঘটনাস্থলের আগের স্টেশন জামতৈল থেকে ট্রেনের ইঞ্জিনে কয়েক জন লোক উঠেছিল কিনা এবং তারা জোর করে মূল চালককে সরিয়ে সহকারী চালককে ট্রেন জোরে চালাতে ও দুর্ঘটনার পর হঠাৎ থামাতে বাধ্য করেছিল বলে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে তার সত্যতা আছে কি না।

তাহলে কেন মূল চালকের বদলে সহকারী চালক ট্রেনটি চালাচ্ছিল। কমিশনের সদস্যরা জানান, তারা অনুসন্ধান করবেন- সয়দাবাদ বাধ্যতামূলক স্টপেজের ১ কিলোমিটার আগে ট্রেনের গতি কেমন ছিল, মুলিবাড়ী ক্রসিংয়ের গার্ডম্যান লাল পতাকা দেখিয়ে ট্রেন চালক ও সমবেত জনতাকে সতর্ক করেছিল কি না। পাশাপাশি ট্রেনের চালক হর্ন বাজিয়েছিল কি না। অনুসন্ধান থেকে বাদ পড়বে না- মুলিবাড়ী রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইনের কোন ধরনের টেকনিক্যাল জটিলতা আছে কি না এবং ট্রেনে কাটা পড়ে নাকি ধাক্কা খেয়ে লোকজনের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কমিশনের সদস্যরা জোর দেবে- স্বাভাবিক গতিতে চলমান ট্রেনটি সমাবেশস্থল থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে কেন থামানো হয়েছিল, ট্রেনের হোসপাইপটি আদৌ ছিড়েছিল কিনা, ওই অবস্থায় ট্রেনটি এক কিলোমিটার পরের স্টেশনে গিয়ে থামতে পারতো কি না তা জানতে।

ট্রেনে দাহ্য পদার্থ থাকে কিনা, ট্রেনটির কোন বগিতে প্রথমে আগুন লাগানো হয়েছিল, দ্রুতযান এক্সপ্রেসটিতে কম ছিল কেন, দুর্ঘটনার পর এতগুলো যাত্রী কোথায় গেছে, গণমাধ্যমে মাত্র একজন যাত্রীর সাক্ষাৎকার প্রকাশের কারণ কি- এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করবেন। গণতদন্ত কমিশনের সদসরা আরও জানান, সমাবেশকে ঘিরে আয়োজক ও প্রশাসনের কোন ধরনের গাফলতি ছিল কিনা সেটাও সমান গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করে দেখা হবে। ফলে সমাবেশের অনুমতি সংক্রান্ত কোন জটিলতা ছিল কি না, সমাবেশের প্রথম ভেন্যু আকবর আলী কলেজ মাঠে অনুমতি দেয়া হয়নি কেন, বিপজ্জনক এলাকায় সমাবেশের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়ার পরও প্রশাসন নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কোন উদ্যোগ নিয়েছিল কি না, প্রশাসন কি ট্রেন বাঁচাতে গুলি ছুড়েছিল নাকি আত্মরক্ষার্থে এবং দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ সময় ট্রেনটি আগুনে পুড়লেও প্রশাসন র‌্যাপিড উদ্ধারে যায়নি কেন- প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হবে। বিশেষ করে জানতে চাওয়া হবে- দুর্ঘটনার পর সিরাজগঞ্জে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার কারণ কি। দুর্ঘটনার পর হঠাৎ ট্রেন থামানো ও প্রশাসনের ঢিলেমি কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক কি না, ঢাকায় বসে তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে বক্তব্য দেয়ার ব্যাপারে যোগাযোগমন্ত্রীর সূত্র কি, দুর্ঘটনা নিয়ে ট্রেন চালকের বক্তব্যে কোন অসঙ্গতি আছে কি না, ট্রেনে আগুন দেয়ার পর চালকদের উদ্ধার করে কেন অজ্ঞাত স্থানে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল এবং দুর্ঘটনায় হতাহতদের পোস্ট মর্টেম করা হয়নি কেন- বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে অনুসন্ধান করা হবে।

গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হবে- একাধিক মামলা দায়েরের কারণ, মামলায় কি ধরনের অভিযোগ লেখা হয়েছে, দুর্ঘটনা ও পরবর্তী আইনি জটিলতার মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে কি না এবং সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতের সমবেদনা জানানো হয়েছিল কি না। এছাড়া তদন্ত করে দেখা হবে- সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সরকারি কর্মকর্তারা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে, সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে কি কি খুঁত বা পক্ষপাতিত্ব ছিল, প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখে দুর্ঘটনা ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোন অসংগতি এবং সমাবেশের আয়োজক, ট্রেন চালক, গার্ডম্যান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের অসতর্কতা কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কি না। ট্রেন পোড়ানোর ঘটনাটি নাশকতামূলক ছিল নাকি বিক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভের ফল। অনুসন্ধানে বাদ যাবে না- আয়োজকরা সমাবেশস্থলে স্বেচ্ছাসেবক রেখেছিল কি না, দুর্ঘটনার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের ভূমিকা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ঘটনাস্থলে পৌঁছোতে দেরি করেছিলেন কি না সেসব বিষয়ও। কমিশনের সদস্যরা বলেছেন, কমিশনের বেশিরভাগ সদস্যই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত নেতৃত্ব।

তাই ফলাফল যাই হোক সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো হবে। গণতদন্ত কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইতিমধ্যে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি ও সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের যাবতীয় বিভ্রান্তি দূর করে জনগণের সামনে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সচিব সহিদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো ভিসি প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান মিঞা, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সানাউল্লাহ মিঞা, সাবেক পুলিশ সুপার আকতার আলী, মানবাধিকার সংগঠন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী ও সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন হাসু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।