দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের দায়ে বেসরকারি সংস্থা ‘অধিকারের’ সচিব অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬ এর ৫৭ (১) ও (২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত পাঠানো এক প্রেসনেটে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেসনোটে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারণে তাকে আইন সঙ্গতভাবে গ্রেপ্তার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ’
দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে অধিকার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অভিযোগ করে প্রেসনোটে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, বিশেষ করে মূলধারার ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসহ বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করে।
কিন্তু “অধিকার” নামক বেসরকারি সংস্থাটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার, তথা দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে (http://www.odhikar.org/about.html) বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় ২৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে দাবি করে। ’
প্রেসনোটে আরও বলা হয়, ‘উক্ত বেসরকারি সংস্থা “অধিকার” এর সচিব এডভোকেট আদিলুর রহমান খান (৫২), পিতা ডা. আশিকুর রহমান, মাতা প্রফেসর আক্তার জাহান ফরিদা বানু, গ্রাম-ষোলকর, থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ, বর্তমান ঠিকানাঃ বাড়ি নং-৩৫, সড়ক-১১৭, গুলশান, ঢাকা গত কয়েক বছর যাবৎ সংস্থাটির নির্বাহী হিসাবেও সামগ্রিক কার্যাবলী পরিচালনা করে আসছেন। তার নির্দেশনায় আলোচ্য প্রতিবেদনে শুধুমাত্র রাতের অভিযানে হত্যাকান্ড চালানো হয় বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয় এবং দিনব্যাপী হেফাজত নেতাকর্মীদের হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও হত্যার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়। দিনের বেলায় নিহত কয়েকটি মৃতদেহের এবং আহত কয়েকজনের ছবি কম্পিউটারে ফটোশপের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে রাতের অভিযানে তারা নিহত হয়েছে বলে প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এডভোকেট আদিলুর রহমান খান উক্ত ওয়েব সাইট ব্যবহার করে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছেন তার ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
’
অধিকারের প্রতিবেদনকে কাল্পনিক আখ্যায়িত করে প্রেসনোটে বলা হয়, ‘২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৬১ জনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে একটি কাল্পনিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, যার কারণে এহেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্ভব হয় এবং দেশে-বিদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার তথা রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ক্ষুণœ হয়। এ ধরণের মিথ্যা, কাল্পনিক তথ্য ইন্টারনেটে বিশেষ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬ এর ৫৭(১)(২) ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ অভিযোগের পক্ষে ওয়েব সাইটের প্রতিবেদনটি দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। ’
রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি বলেও দাবি করা হয় প্রেসনোটে। বলা হয়, ‘অভিযান পরিচালনাকালে বিপুলসংখ্যক ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ দেশি-বিদেশি সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া পুরো অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করেছে। রাতের অভিযানে কোনরূপ মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার কারণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে, দিনের বেলায় হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সহযোগী উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের আক্রমন ও পুলিশের প্রতিরোধের কারণে মোট ১১ জন ব্যক্তি নিহত হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ০২ জনের মৃত্যু হয়। ’
হেফাজতকে অভিযুক্ত করে প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ০৫ মে ২০১৩ তারিখে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে ঢাকা মহানগরের ০৬ টি প্রবেশপথে অবরোধের ঘোষণা দেয়।
অবরোধ পরবর্তীতে তারা মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে মোনাজাত পরিচালনার মাধ্যমে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ০৫ মে সকাল থেকেই তাদের উচ্ছৃংখল নেতাকর্মীরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, স্টেডিয়ামসহ গোটা এলাকায় হামলা, ভাংচুর, বোমাবাজি এবং অগ্নিসংযোগ শুরু করে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিস (সিপিবি অফিস, আওয়ামী লীগ অফিস ইত্যাদি), পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা (মতিঝিল থানা, পল্টন থানা, ডিসি ট্রাফিক পূর্ব অফিস, বিভিন্ন পুলিশ বক্স), বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যাংকের এটিএম বুথ, বায়তুল মোকাররমের স্বর্ণের দোকান, ফুটপাতের বইয়ের দোকান, এমনকি বিভিন্ন দোকানে থাকা কয়েকশত কোরআন শরীফ, হাদিস-কিতাবেও অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। ’
আরও বলা হয়, ‘হেফাজত কর্মীরা ইলেকট্রিক করাত দিয়ে রাস্তার মাঝখানে এবং পার্শ্বে থাকা গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেডের সৃষ্টি করে পুলিশের গাড়িসহ গণপরিবহনে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। দিনব্যাপী তাদের হামলায় পুলিশ সদস্য, পথচারী, পরিবহন শ্রমিকসহ মোট ১১ জন নিহত হয়।
বিভিন্ন রাস্তার ইলেকট্রিক পোল উপড়ে ফেলায় সন্ধ্যার পরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে শাপলা চত্ত্বরের আশেপাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনকে টার্গেট করে তারা হামলা চালাতে থাকে। তাদেরকে তাদের এ হিংসাত্মক হামলা থেকে বিরত থাকতে এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে সরে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলে তারা সরে না গিয়ে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেয়। এমতাবস্থায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা ধ্বংসাত্মক হামলা থেকে রক্ষার্থে মতিঝিল শাপলা চত্ত্বর থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা মাফিক রাত ০২ টার দিকে মাইকে তাদেরকে ঐ স্থান ত্যাগ করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়।
এতে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে পুলিশের উপর হামলা চালাতে থাকে, মঞ্চের মাইক থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশ তাদেরকে স্থান ত্যাগের জন্য শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সতর্ক করে। কিন্তু এতে তারা কর্ণপাত না করায় পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী নন-লেথাল উইপন (Non Lethal Weapon) হিসেবে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এতে ১০ মিনিটের মধ্যেই তারা সকলেই স্থান ত্যাগ করে। তবে তাদের বিভিন্ন গ্রুপ সংগঠিত হয়ে অলি-গলির ভেতর থেকে কিছুক্ষণ হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারাও পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬-এ বর্ণিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য না হলেও অজামিনযোগ্য এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারযোগ্য। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন/২০০৬ এর ৫৭ (১) ও (২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে এডভোকেট আদিলুর রহমান খান-এর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (জিডি নং-৫১৪, তারিখঃ ১০/০৮/২০১৩) দায়েরের পরই তাকে তার গুলশানস্থ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বর্ণিত ধারায় এরূপ অপরাধের শাস্তি হিসেবে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ০১(এক) কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে বলেও প্রেসনোটে জানানো হয়।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।