শিশুরা নাকি দিনে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বিশ ঘন্টা-ই ঘুমিয়ে কাটায় ! ওদের ঘুম না হয় সহ্য করা গেল ; কিন্তু স্বাভাবিক মানুষও যে জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমের ঘোরেই পার করে দেয় !
আমি সাধারণ মানুষের পর্যায়ে পড়ি না - আর একটু ডিমোশন হয়ে অলসের কাতারে চলে গেছি অনেকদিন হল । গবেষকরা আমাকে নিয়ে গবেষণা করলে হয়তো বা অর্ধেক অংশই অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখতেন । রাত বারোটার সময় যদিও বা আমায় নিদ্রাদেবী করুণা করেন , তবে তাঁর বর শেষ হয় না ঘড়িতে ঘণ্টার কাঁটা নয়ের ঘর ছুঁই ছুঁই করলেও । পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় মৃদু ধাক্কা , জোরাল ধাক্কা ,গগণবিদারী হুংকার,চোখে-মুখে ঠান্ডা পানি ছিটানো এবং আবারও মৃদু ধাক্কা – এভাবে ঘুম ভাঙ্গানো প্রক্রিয়া চলতে থাকে । কিন্তু যার জন্য এত ঝামেলা সে প্রক্রিয়াটি শুরুর আগে যে হারে – এখনও সে হারেই নাক ডাকিয়ে চলেছে !
এটাতো গেল আমার ঘুম বৃত্তান্ত ।
স্কুল জীবনে (ক্লাস এইটে পড়তাম যখন) , কোচিং ও ক্লাস মিলে সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত স্কুলে থাকা লাগত । তিনটা বাজার আগেই রীতিমত ফাইট শুরু হয়ে যেত ব্যাক বেঞ্চ দখলের অভিপ্রায়ে । কেন ? “Backbenchers are the backbone of nation” - এজন্য ? না,পেছনে বসে ঘুমানো যায় জুত করে,তাই । একদিন শেষ পিরিওডে গনিত স্যার ক্লাসে এসে দেখলেন পেছনে যেন ফ্রন্ট খুলে বসেছে সবাই । স্যারকে আসতে দেখে সবাই তো পূর্ণ জাগ্রত ।
শুধু বেচারা মামুনটাই খেয়াল করে নি,করবেই বা কি করে? স্বপ্ন রাজ্যে বিচরন করছে সেই কখন থেকে ! স্যার এসে ওর কাঁধে ধাক্কাচ্ছেন, সাবজেক্টের কোন প্রতিক্রিয়া নেই ।
কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে অতি মাত্রায় বিরক্ত মামুন চোখ খুললই না,ধাক্কা দিয়ে স্যারের হাত কাঁধ থেকে সরিয়ে দিল। টেস্ট ক্রিকেটারের ধৈর্য্য নিয়ে স্যার আবারও ধাক্কাচ্ছেন,এইবার মামুনেরও ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল । “আরে ব্যাটা গুঁতাছ ক্যান এত?দেখস না ঘুমাই?দূরে গিয়া মর...” বলতে বলতে মাথা তুলেই তো বেচারা হতভম্ভ !সাক্ষাৎ যমদূতের সাথে তার মোলাকাতের বৃত্তান্ত না হয় নাই বা বললাম !
আবার ফিরে আসি আমার ঘুম-প্যাঁচালে । পরদিন পরীক্ষা থাকলে রাতে বাসার সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের আধ-ঘন্টা আগে ডাকতে বলে দিই,যাতে ঠিক সময়ে উঠতে পারি ।
তাও লেট হয়েই যায় । কিন্তু জীবনে মাত্র একটা ক্ষেত্রে আমার পূর্ণচেতন অবস্থাতেও উঠতে পারলাম না প্রতিশ্রুত সময়ে,আর সেটা ‘সামহ্যোয়ার’ এর কল্যাণে । যদিও তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ৭ দিন পর ডেকে দেবে বিশাল সাম্রাজ্যের দোরগোড়ায় এনে , কিন্তু ঘড়ি যে এ জগতে এতই স্লো চলে (৭ সেকেন্ডে ১ সেকেন্ড) তা কে জানত ? ৪৮ দিনের মাথাতে ঘুম ভাংগল আমার । সে কি আর আমার দোষে?!?!?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।