আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশলীনা-০৪ [ভিন্ন আয়োজনে অন্য সাময়িকী]

আকাশলীনা] মুক্ত প্রাণ, স্বপ্নের সোপান

আকাশলীনা কার্তিক ১৪১৭] অক্টোবর ২০১০] সংখ্যা ০৪] বর্ষ ০১] -------------------------------------------------------------------------- পাঠ-পূর্বক বিজ্ঞপ্তি] আকাশলীনা মূলত একটি ছোট পত্রিকা; এটি প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রণ কাগজে প্রকাশিত হয়। বলা যেতে পারে, সাদা-কালোয় প্রকাশিত এটি আমাদের রঙিন এক স্বপ্নের গল্প! এখানে মূল পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি অনলাইন পাঠকদের জন্য সরবারাহ করা হয়েছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা বিষয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারেন... পত্রিকাটির মুদ্রিত কপি নিয়মিত পেতে চাইলে; আপনিও ঠিকানা লিখে জানান। আমাদের সম্পাদনা পরিচিতি এবং সরাসরি যোগাযোগ করার ঠিকানা এই লেখার নিচে উল্লেখ আছে। সকলকে ধন্যবাদ।

- সম্পাদক, আকাশলীনা -------------------------------------------------------------------------- মূল পত্রিকা এখান থেকে শুরু- -------------------------------------------------------------------------- সম্পাদকীয়] প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়, দানে দানে তিনদান- আকাশলীনা সেই তিনদান মেরে দিলো! প্রকাশিত হবার পর, আলোচনা-সমালোচনা এবং নিন্দার যে ঝড় উঠেছে, তা গত তৃতীয় সংখ্যায় এসেই আমরা ঢের জুটিয়ে ফেলেছি। অনেকের মতে, এটি কেমন পত্রিকা? নেই কোনো রগরগে রঙিন ছবি; নেই কোনো পৃষ্ঠার বালাই; দেখলেই থুত্থুরে বুড়ির জীর্ণ শরীরের কথা মনে আসে। না আছে মান, না আছে রুচি। সত্যি, প্রযুক্তির যে আধুনিকায়ন, এ যুগে এমন ঝাপসা, হাতে লাগে না, তার ওপর সাদা-কালো; কে পড়তে চাইবে এ “জিনিস”? তবু আমরা জানি যে, সকল ক্ষেত্রেই আগে কিছু একটা করে দেখাতে হয়। এবং তারপরই, সে সম্পর্কে মানুষ ভালো-মন্দ প্রতিক্রিয়া জানায়।

আর তাই, আমাদের পাঠক-শুভানুধ্যায়ী, প্রত্যেকেই যাঁরা সমালোচনা-নিন্দা এবং যৎসামান্য প্রশংসা করেছেন; বলবো, এটুকই আমাদের অর্জন। এবং আমরা যে ঘোড়ার ঘাস না কেটে, চায়ের দোকানের টঙে বসে কেবল কথার তুবড়ি না ছুটিয়ে; যা করছি, তার নাম যদি “মন্দ”-ই হয়- তবু মনে করি এটাই আমাদের প্রাপ্তি। অর্জনও। সবার ভালো হোক- এই শুভ কামনা। -------------------------------------------------------------------------- কবিতা] মানুষের চোখে জল নেই অসিত রায় মানুষের চোখে জল নেই মহাকাল নিয়েছে শুকিয়ে, সাজিয়েছে মেঘমালা জানে না মানুষ, এ যে মহাকালেরই লুকোচুরি খেলা মানুষের চিন্তা তার আয়ুষ্কাল পর্যন্ত মাত্র ক-টি বছর সে ভাবতে চায় না, কি হবে পৃথিবীতে তার মৃত্যুর পর তখনও পাখি গাইবে গান, কুসুমকলি ফুটবে কাননে কোথাও হবে দাবদাহ খরা, কোথাও ভাসবে প্লাবন মানুষ বড় নগন্য; পৃথিবীর বয়স হলো কত কোটি বছর পৃথিবীর হিসাব রাখে যে তাঁর বা বয়স কত- কে জানে তাঁর খবর? তাঁর জন্য কে কাঁদে, তাঁর কি সুখ নেই, দুঃখ নেই? মানুষের চোখে জল নেই।

মানুষ এখন ভীষণ একাকী, চোখে তাঁর খরা তাই অশ্র“তে আর সিক্ত হয় না ধরা সে যখন কাঁদতে শিখেছিলো, চোখে ছিলো জল সভ্যতা ছিলো শিশুর মতো সহজ-সরল ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে থাকতো হাসি নিষ্কলঙ্ক আজ তার দেহ ঘিরে আছে সভ্যতার কলঙ্ক অনেক কিছু শিখেছে মানুষ, ভুলে গেছে কান্না মহাকালের বিচারে দন্ডিত সে; মহাকাল করে না ক্ষমা বড় সাধ করে খেতে চাইছে পৃথিবীকে পৃথিবী-ই একদিন খাবে অশ্র“হীন এই মানুষকে মানুষ হয়েছে জঘন্য, এর চেয়ে নিকৃষ্ট আর কিছু নেই মানুষের চোখে জল নেই। > -------------------------------------------------------------------------- স্বদেশে সাম্প্রতিক] আমাদের সংসদ সদস্যদের গাড়ি-বিলাস মনজুরুল হক দেশটা আমাদের পিছিয়ে পড়া এক দারিদ্র পীড়িত জনবসতি হলেও, অন্তত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার বেলায়, আমাদের যাত্রা যে পেছনমুখী নয়, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আমাদের জন্য সেই সত্যকে তুলে ধরার সুযোগ করে দেয়; এবং নিজের দেশের প্রশাসনের জন্য আমাদের আর লজ্জায় পড়তে হয় না, যেমনটা হয়ে থাকে সামরিক শাসনের বেলায়। তৃতীয় বিশ্বের সামরিক শাসকেরা চটকদার স্যুট গায়ে চাপিয়ে, রঙিন চশমায় খুনি-চোখ ঢেকে রেখে, যতোই মধুর বুলি আউড়ে বিদেশিদের সামনে নিজেদের মানবপ্রেমী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাক না কেনো, আড়ালে তারা হাসির পাত্রই থেকে যায়। এই দিকটি থেকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বকে, বিশ্বের অগ্রসর অনেক দেশেই আজকাল পুরোপুরি অবহেলার চোখে দেখা হয় না। এর প্রধান কারণ অবশ্যই হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা।

চলার পথে হোঁচট খেতে হলেও, আরও যে দীর্ঘ পথ আমাদের এখনো পার হওয়া দরকার- সেই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। তবু আমরা ব্যথিত বোধ করি, যখন দেখি গণতন্ত্রের সামনের সারির রক্ষক ধরে নিয়ে, জনতা যাদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন; তারা নিজেরাই একান্ত ব্যক্তিগত পার্থিব লাভ-ক্ষতির চুলচেরা হিসাব কষে নিয়ে, একধরনের ভক্ষক হয়ে ওঠেন! হ্যাঁ, সেই গাড়ি কেনার কথা বলছি- নিজেদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় করে নেওয়ার বেলায়, বাংলাদেশের সংসদে যে দলীয় অবস্থান-নির্বিশেষে অভাবনীয় এক ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা আমাদের সেই বেদনাকে অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক করে তুলছে। আমরা অবাক হয়ে ভাবছি, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, জাগতিক প্রাপ্তি শেষ পর্যন্ত যদি দাঁড়ায় কতো বড় গাড়ি আমি কতো কম খরচে পাবো; তবে কেনো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ নিয়ে লোক দেখানো এই বিভেদ? বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা তিন কোটি টাকার গাড়ি পঞ্চাশ লাখ টাকায় কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। আরেকটু খোলাসা করে বললে- পদাধিকার বলে তারা সেই সুযোগ নিজেরাই নিজেদের জন্য করে নিয়েছেন। সংসদ সদস্যের আরেক অর্থ হচ্ছে আইন প্রণেতা।

যে কারণেই হয়তো, নিজেদের ব্যক্তিগত পার্থিব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে নেওয়ার আইনও, তারা নিজেরা তৈরি করে নিতে পারেন। অথচ অগ্রসর গণতন্ত্র আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকে যে- আইন তৈরি করতে হয় দেশের মঙ্গল ভাবনাকে সামনে রেখে, নিজের লাভ-ক্ষতির হিসাব নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোয় জনতার ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যখন, নিজেদের ব্যক্তিগত ধারণাকে জনতার প্রাপ্তির চেয়েও উঁচুতে স্থান দেয়, এরচেয়ে বেদনাদায়ক গণতন্ত্রিক পরিস্থিতি আর কি থাকতে পারে? গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রে সংসদ সদস্যদের এ ধরনের লজ্জাজনক আচরণের প্রমাণই বা আর কোথায় আছে? বিষয়টিকে লজ্জাজনক এ কারণেই বলতে হচ্ছে, এই যে আড়াই কোটি টাকার বাড়তি সুযোগ পদাধিকার বলে নিজেদের করে নিলো তারা, এতে লাভটা কার? ক্ষতির বোঝাই বা বহন করতে হচ্ছে কাকে? আসুন, সেই দিকটায় আমরা একটু নজর বুলিয়ে নিই- যে গাড়ি কিনতে হলে বাংলাদেশের আমজনতাকে শুল্কবাবদ পরিশোধ করতে হয় তিন কোটি টাকা; সেই গাড়ি এখন আমাদের সম্মানিত সংসদ সদস্যরা, জনতার পরিশোধ করতে হওয়া মূল্যের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ পরিশোধ করছে। লাভবান এতে যে সংসদ সদস্যরাই হচ্ছেন, তাতে আর সন্দেহ কোথায়? আর অন্যদিকে ক্ষতিটা হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রিয় কোষাগারের। যে কোষাগারের অর্থের টানাটানিতে, আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকেই মাঝপথে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়।

দেশের তিন শতাধিক সংসদ সদস্যের প্রত্যেকের জন্য, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বঞ্চিত সেই আড়াই কোটি টাকার সামষ্টিক হিসাব, শেষ পর্যন্ত হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। তাই আমরা ধরে নিতে পারি, এইসব সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে নেওয়ার জন্য ক্ষতি যাঁদের হচ্ছে, তাঁরা হলেন আবারও সেই বাংলাদেশের আমজনতা। যাঁরা নিজের মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠিয়েছেন; তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখের কথা সেখানে তুলে ধরে, সেই কষ্ট লাগবের আইন তৈরি করার জন্য। আইন যেহেতু বায়বীয় কোনো কিছু, যা কিনা খোলা চোখে দৃষ্টিগোচর হয় না। ফলে, আইনের বর্মে সজ্জিত হয়ে, ভোটারদের সামনে উপস্থিত হওয়ার চেয়ে বরং, খেত-খামার ডিঙিয়ে বিশাল বড় গাড়ি নিয়ে জনতার সানে দাঁড়ালেই তাঁরা বুঝতে সক্ষম হবেন- যাদের তাঁরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, সত্যিকার অর্থে তাহারা বাহাদুরই বটে! রাষ্ট্রের ক্ষয়-ক্ষতি এতে কি পরিমাণ হচ্ছে, হবে; তা নিয়ে মাথা ঘামানোর ওতো সময় কোথায় এই বাহাদুরদের? [সংক্ষেপিত] > রচনাটি আমাদের বিশেষ সংগ্রহ থেকে প্রকাশিত -------------------------------------------------------------------------- গোয়েন্দা গল্প] মূর্তি গায়েব! ইশতিয়াক হাসান রাঙামাটিতে এসেছি গতকাল।

কোনো তদন্ত-টদন্ত নয়। এমনি ঘুরতে। মনটা কেমন ভার ভার লাগছিলো কয়েকদিন। ভাবলাম, এখানে দু-চারটা দিন কাটিয়ে গেলে হয়তো ভালোই লাগবে। তা ছাড়া, রাঙামাটি সব সময়ই আমার খুব প্রিয় শহর।

ইচ্ছা আছে টাকা-পয়শা জমিয়ে, একটা পাহাড় কিনে একসময় এখানেই থিতু হয়ে যাওয়ার! এখন তবলছড়ির দিকে নেমে যাওয়া ঢালু রাস্তা ধরে নামছি। হঠাৎ ডান পাশে চোখ আটকে গেলো। রাস্তার পাশ্ববর্তী একটা গেইটের গায়ে বড় করে লেখা- সূচি কিউরি অ্যান্ড আইভরি শপ। একটু ভ্রু কুঁচকেই আবার তাকালাম। এ ধরনের দোকানের প্রতি এমনিতেই একটা নেশা আছে আমার।

যদিও বাংলাদেশে তেমন কোনো কিউরির দোকান চেখে পড়েনি; ভালো-খারাপ যাই হোক। ভারত আর নেপালে এ ধরনের প্রচুর দোকান দেখেছি। বড় লোহার গেইটের গায়ে ছোট আরেকটা গেট। ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। ওপাশে বিশাল এক অ্যালসেসিয়ান কুকুর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলাম।

সম্ভবত আমাকে দেখতে পেয়েই, একজন প্রহরী এগিয়ে এসে সালাম দিলো। তারপরই দেখলাম, সে লোকটা ঢালু কংক্রিট বিছানো পথ বেয়ে নেমে গেলো নিচের আর একটা দোতলা ঘরের দিকে। তাৎক্ষণিক ভাবনায় লোকটাকে অনুসরণ করে বাড়ির সামনে চলে এলাম। দেখি যে, একটা কাচের দরজার সামনে শিল্পীর নিপুণ কারুকার্যময়ে লেখা- দর্শনী ঘর। একমুহূর্ত দ্বিধা না করে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েছিলাম।

আর ঢুকেই মনে হলো, লাফ দিয়ে যেনো কয়েক-শ বছর পিছিয়ে গেছি! একমুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইলাম... বিশাল কামরার আসবাবগুলোয় পুরনো ধাঁচ। কেমন অদ্ভুত এক আলো-আঁধারির খেলা সবখানে। আশেপাশে আরও কয়েকজন দর্শক ঘুরে-ফিরে দেখছেন অবস্থাটা। গোটা দুই কর্মচারীও আছে। দেয়ালের গায়ে ঝুলছে নানা জাতের ভোজালি, মুখোশ।

কতো বিচিত্র মুখোশ যে আছে! হাতির মুখ, বাঘের মুখ, শিয়ালের মুখ, হরিণের মুখ- আরো কত কী! আর আছে হাতির দাঁতের তৈরি নানা ধরনের স্যুভেনির, মেয়েদের গয়না-গাঁটি। হঠাৎ চোখ আটকে গেলো দেয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড় করানো একটা তাকে। সেখানে অদ্ভুত সুন্দর একটা বুদ্ধমূর্তি। ইঞ্চি ছয়েক লম্বা হবে। কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম, হাতির দাঁতের তৈরি।

ধবধবে সাদা মূর্তিটা যেনো সম্মোহিত করে ফেলেছে আমাকে! কখন যে পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছেন, টেরই পাইনি। এবার খেয়াল করলাম। বছর পঞ্চাশেক বয়সের পক্বকেশী একজন দীর্ঘদেহী চাকমা ভদ্রলোক। হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিলেন, ‘অনুপম চাকমা। ’ কথায় কথায় জানতে পারলাম তিনিই এই কিউরি শপের মালিক।

সংগ্রহের প্রশংসা করতেই মৃদু হাসলেন। এটুক কথাতেই বুঝলাম বেশ আলাপি মানুষ। অল্পক্ষণের মধ্যেই তাই দু-জনের মধ্যে সখ্যতা জমে উঠলো। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করি শুনে, ভদ্রলোক আরও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। জানালেন, তাঁর দাদার আমল থেকেই এ কিউরির ব্যবসা।

এখন তো সেই আগের দিন নেই। মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় বাইরে থেকেও খুব একটা জিনিস আনেন না। আগে নেপাল, তিব্বত, গ্যাংটক, বার্মা; কতো জায়গা থেকে যে মালপত্র আনতেন! আরও বেশ কিছুটা সময় আলাপ চললো দু-জনের। দেখতে দেখতে একটা নেপালি ভোজালি কিনেও ফেলছি। পরিচয়ের আন্তরিকতা থেকে বেশ কম দাম রাখলেন অনুপম চাকমা।

আগামীকাল ফের গল্প করতে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তবেই বিদায় নিতে পারলাম! একরকম স্বভাবসুলুভ অনুযায়ী আমার কাছ থেকে ব্যক্তিগত কার্ডটা চেয়েই নিলেন। যখন বের হলাম, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। কাপ্তাই লেকের পাড়ে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে হোটেলে ফিরলাম। রাতের খাওয়া সেরেছি হোটেলেই। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে একটা ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে সুবলং চলে এলাম।

বর্ষার মৌসুম হওয়ায় ঝর্ণায় প্রচুর পানি। দেখতে বেশই লাগছে। আরও কিছু পর্যটকও এসেছেন দেখলাম। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাটে ফিরতে ফিরতে বেলা তখন একটা। নৌকা থেকে মাত্র নেমেছি- এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে।

অপরিচিত নম্বর। কল রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম, ‘নমস্কার। আমি অনুপম চাকমা। একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, স্যার। আমার দোকানের দামি বুদ্ধমূর্তিটা চুরি হয়ে গেছে।

পুলিশকে খবর দিতে যাবো, এমন সময় মনে পড়েছে আপনার কথা। ভাবলাম আগে আপনার সঙ্গেই কথা বলি। ’ ভদ্রলোক গড়গড় করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন। সব শুনে আমার ভেতরও তটস্থতা কাজ করে। বলি, ‘আচ্ছা, এক্ষুণি আসছি।

’ যতো দ্রুত সম্ভব পৌঁছে গেলাম ঘটনাস্থলে। অনুপম চাকমা গেইটের সামনেই উত্তেজিতভাবে পায়চারি করছেন। গাড়ি থেকে আমাকে নামতে দেখেই এগিয়ে এসছেন। বাড়তি কোনো কথা না বাড়িয়ে, গতকালের সেই কামরাটায় ঢুকে বুদ্ধমূর্তিটা যেখানে ছিলো, সেখানে চলে এলাম। দেখি যে, স্ট্যান্ডটা খালি পড়ে আছে।

জমে থাকা হালকা বালুর আস্তরণে, মুর্তিটাকে যেখানে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো, সে গোল দাগটা এখনও বেশ স্পষ্ট। ‘আচ্ছা, চুরিটা হয় কখন?’ প্রশ্ন শুনে অনুপম চাকমা সাথে সাথেই জবাব দেন, ‘সম্ভবত আজ সকালে, আর আমি টের পাই একটু আগে। এক বার্মিজ ব্যবসায়ীর জন্য মূর্তিটার খোঁজ নিতে এসেছিলাম। এসেই দেখি, নেই!’ ‘আর কিছু কি খোয়া গেছে?’ ‘না। ’ ‘আপনি বলছেন সকালে।

কেনো, মূর্তিটা তো রাতেও চুরি যেতে পারে?’ ‘তা ঠিক। তবে রূপমার কাছ থেকে জানতে পারলাম, আজ সকালেও জিনিসগুলো পরিষ্কার করার সময় সে মূর্তিটা দেখেছে। ’ ‘রুপমা?’ ‘ও এখানে কাজ করে। দাঁড়ান, ডাকছি। ’ একটু পরই কমবয়স্ক একটা মেয়ে এগিয়ে এলো।

আদিবাসীদের নিজস্ব পোষাকে সেজে আছে। একদৃষ্টিতেই বুঝে ফেললাম মেয়েটা শিক্ষিত। ভূমিকা না করে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি নিশ্চিত, আজ সকালেও মূর্তিটা এখানে দেখেছেন?’ ‘দেখেন, আমি সব জিনিস স্ট্যান্ড থেকে তুলে কিংবা দেয়াল থেকে নামিয়ে খুব সাবধানে পরিষ্কার করি। যদি রাতের মধ্যেই মূর্তিটা খোয়া যেতো, তবে সকালে অবশ্যই আমি টের পেতাম। এবং সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই অনুপম চাকমাকে জানাতাম।

’ ‘ঠিক আছে। আপনি এখন যেতে পারেন। ’ মেয়েটা বিদায় নিতেই অনুপম চাকমার দিকে তাকিয়ে বলি, ‘আপনার এখানে আর কে কে কাজ করেন, তাঁদের সবাইকে একবার ডাকা যায়?’ অল্প পরই আরও দু-জন লোক নিয়ে হাজির হলেন অনুপম চাকমা। দীর্ঘদেহী একজনকে দেখিয়ে বললেন, ‘এ হলো রশিদ, দারোয়ান। ’ পাশে দাঁড়ানো গাট্টাগোট্টা হাসি-খুশি চেহারার আর এক চাকমা তরুণকে দেখিয়ে বললেন, ‘আর এ হচ্ছে বিষণু চাকমা।

আমাদের ম্যানেজার। ’ আমি রশিদের বিশাল শরীরের দিকে স-প্রশংসিত চোখে তাকাতে বাধ্য হই। এ লোক এক থাবড়া দিলে, আমি নিজেই তো দশ হাত দূরে ছিঁটকে পড়বো। লোক নির্বাচনে অনুপম চাকমা যোগ্য ব্যাক্তিকেই বাছাই করেছেন। বললাম, ‘রশিদ, আপনি তো বাহিরে পাহারায় থাকেন।

রাতে সন্দেহজনক কোনো লোককে আশেপাশে ঘুরাফেরা করতে দেখেননি?’ ‘না, স্যার। ’ রশিদের সরল জবাব। ‘তয় মাঝরাতের দিকে, আমাদের টমি ক্যান জানি, উত্তরের পাহাড়গুলোর দিকে তাকায়ে দাঁত খিঁচায়ে চিৎকার করতাছিলো। ঘটনা কি ঘটছে দেখতে, পাহাড়ের দিকে একটু এগোই। কিছু চোখে পড়েনি বলে আবার ফিরে আসি।

’ মনে মনে ভাবলাম, রূপমা যেহেতু বলেছে- সকালে সে মূর্তিটা দেখেছে। কিন্তু তারপরও ওর কথা সত্যি হবে, এমন ভাববার কোনো যুক্তিকতা নেই। সে হিসেবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই কি কি ঘটছে; তা আমলে নেওয়া উচিত। ‘আচ্ছা,’ হঠাৎ করেই আবার কথা বলে উঠি। বিষণু চাকমার দিকে ফিরে জানতে চাইলাম, ‘কাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কতোজন খদ্দর এসেছিলো?’ ‘এমনিতেই তো অ্যান্টিকের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।

তার উপর আবার এখন ট্যুরিস্ট সিজন নয়। তাই লোকজনের আনাগোনা একেবারে নগন্য। হঠাৎ হঠাৎ যে দু-একজন আসে, তাঁদের কথা তাই মনে থেকে যায়। হ্যাঁ, কাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত চারজন খদ্দের এসেছেন। এঁদের মধ্য থেকে দু-জন এখানে নিয়মিতই আসেন।

তার উপর আবার মস্ত বড়লোক। আমি বলবো, আপনি ওঁদের অনায়াসে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারেন। সে হিসেবে বাকি থাকেন মি. আজিজ রহমান আর বিনয় মঙ। দু-জনেই ট্যুরিস্ট। একজন কিনেছিলেন একটা ভোজালি, অন্যজন মুখোশ।

সম্ভবত এখনও তাঁরা রাঙামাটি ছাড়েননি। আপনি বললে খোঁজ লাগাতে পারি। ’ ‘ঠিক আছে, আপনি খবর নেন। প্রয়োজনে তাঁদের সাথে দেখা করতে যাবো। ’ আর কিছু করার নেই আপাতত।

অনুপম চাকমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাই ফিরে এলাম। আসার পথে বিষণু চাকমাকে আরেকবার জোর দিয়ে বলেছি, ‘খোঁজ-খবরটা একটু তাড়াতাড়িই নিতে হবে। সময় পেয়ে গেলে চোর কেটে পড়ার সুযোগ পাবে। ’ ০২. সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে অনুপম চাকমার নম্বর থেকে কল আসে, ‘সৌরভ সাহেব, আমাদের ম্যানেজার সেই দু-জন কাস্টমারের ঠিকানা ও ফোন নম্বর যোগাড় করে ফেলছে। ’ ‘খুবই ভালো!’ মনে মনে উৎফুল্ল বোধ করি।

বলি, ‘ঠিক আছে, আমি এক্ষুণি আসছি। আপনি একটা কাজ করুন, সে দু-জন খদ্দেরের নাম আর ফোন নম্বর মেস্যাজ করে পাঠিয়ে দেন। আমি পথে থাকতেই তাঁদের সাথে কথা বলে নিতে পারবো। ’ অনুপম চাকমা তাই করলেন। মিনিট খানেক না যেতেই তাঁর মেস্যাজ পাই।

মেস্যাজ থেকে প্রথমে আজিজ রহমানের নম্বরে কল দিই। ওপ্রান্তে কল রিসিভ হতেই নিজের পরিচয় দিলাম, ‘আমি সৌরভ শিকদার। আপনি নিশ্চয় আজ সূচি কিউরি শপে একবার এসছিলেন?’ ‘ও-হ্যাঁ। কেনো বলুন তো?’ আসল ঘটনা না বলে, কাল্পনিক একটা সমস্যার কথা বললাম লোকটাকে। শুনে মনে হলো তিনি আহত হয়েছেন।

ফোনে কণ্ঠটা অন্তত সে রকমই মনে হলো। বললেন, ‘এগারোটার দিকে একবার ওদিকে গিয়েছি। অন্য কাজের উদ্দেশ্য ছিলো; তারপর হঠাৎ করেই দোকানটা চোখে পড়ে যাওয়ায় খুব খশি হই। বেশ আগ্রহ নিয়ে ঘন্টাখানেক ঘুরে ঘুরে সংগ্রহগুলো দেখি। অনেক কিছুই পছন্দ হয়েছিলো; কিন্তু দামে বনেনি বলে, শুধু একটা মুখোশ কিনে এনেছিলাম।

’ ‘বুদ্ধমূর্তিটা দেখেছিলেন?’ ‘না তো! ওরকম কিছু চোখে পড়লে, নিশ্চয়ই মনে থাকতো। ’ ‘আচ্ছা, ধন্যবাদ। ’ এই বলে লাইন কেটে দিলাম। এবার ফোন দিলাম বিনয় মঙের সঙ্গে আলাপটা সেরে নিতে। একইভাবে তাঁর কাছেও নিজের পরিচয় দিয়ে মূর্তি চুরির ঘটনা বললাম।

ভদ্রলোক সাথে সাথেই বললেন, ‘কথায় আছে অতি লোভ ভালো না। আমি বিশ হাজার বলেছিলাম। তবু দিলেন না। বুদ্ধ আমার ঘর আলো করে থাকতো... এখন দেখুন, শেষ পর্যন্ত একটা টাকাও পেলেন না। ’ ‘আচ্ছা, আপনি দোকানে গিয়েছিলেন কখন?’ ‘গতকাল।

সন্ধ্যার পরে, ৭টার দিকে। সোয়া ৮টার দিকে ওরা দোকান বন্ধ করেছিলো, তার আগ পর্যন্ত ছিলাম। ’ ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন কেটে দিই। এর আধঘন্টার পর অনুপম চাকমার বাড়ি পৌঁছে, সরাসরি বললাম, ‘রূপমাকে ডাকুন। ’ মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি বাড়ি ফেরো কখন?’ রূপমা একমুহূর্ত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

তারপর খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে, ‘আমার বাসা তো স্যার দু-টো পাহাড় পরেই। রাত আটটা কি সাড়ে আটটায় দোকান বন্ধ হলে বাসায় ফিরি। আবার সকাল নয়টার মধ্যে উপস্থিত হই। আমার আসার পরই অনুপম-দা দোতলা থেকে নেমে এসে দোকান খোলেন। ’ মাথা নাড়লাম।

‘ঠিক আছে, যাও। ’ রূপমা চলে যেতেই অনুপম চাকমার দিকে তাকিয়ে হাসি। বললাম, ‘আমরা কি কফি এখানেই খাবো? নাকি বাহিরে কোথাও?’ অবিশ্বাসী চোখে লোকটা আমার দিকে তাকায়। বললেন, ‘আপনি নিশ্চয় এখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলতে চাইছেন? আর সে কারণেই নির্জন জায়গা খুঁজছেন?’ ‘বাহ! আপনার অনুমান তো খুব ভালো। তাহলে আমরা এখন...’ ‘উপরেই চলেন।

আমার ঘরটা বেশ নিরাপদ আছে। ’ অনুপম চাকমা নিজের হাতে কফি করে আনলেন। নিজের সিগারেটের প্যাকেট থেকেই আমাকে সিগারেট সাধলেন। এ সুযোগে আমি সরাসরি রহস্যটা ফাঁস করি, ‘আপনার বুদ্ধমূর্তি চুরি করেছে রূপমা। ’ ‘রূপমা!’ অনুপম চাকমার হাত থেকে ক-ফোঁট কফি ছলকে ওঠে।

অবাক চোখে অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকেও কিছু বলতে পারলেন না। বলি, ‘ঘটনাটা হচ্ছে- সে বলেছে, কিউরি শপের প্রতিটা জিনিস খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে সে। আর সকালে পরিষ্কার করার সময় মূর্তিটা সে দেখেছেও। কিন্তু আপনি আর আমি কি দেখেছিলাম? স্ট্যান্ডের উপরে এখনও বালুর আস্তরণ পড়ে আছে। সেই বালুতে মূর্তিটা রাখার দাগও স্পষ্ট।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, বিষয়টা কি দাঁড়ায়? আসলে রূপমা মূর্তি এবং স্ট্যান্ড, কিছুই পরিষ্কার করেনি। করলে সে দাগ থাকতো না। নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যে কথা বলেছে সে। ’ ‘যদি অস্বীকার করে?’ অনুপম চাকমা দিধান্বিত। বললাম, ‘উপায় নেই।

এ সবকিছুর বড় প্রমাণ আজিজ রহমান এবং বিনয় মঙ। এঁদের একজন কাল সন্ধ্যায় এসে মূর্তিটা দেখেছেন। আর দ্বিতীয়জন আজ সকালে এসে মূর্তিটা দেখেননি। অর্থাৎ, রূপমা কাল রাতেই দোকান বন্ধ করার সময়, বা তার আগে, যে কোনো উপায়ে এটি সরিয়ে ফেলেছে!’ [] -------------------------------------------------------------------------- রম্য] যখন আসলেই কিছু করার থাকে না! ফারুক মির্জা + প্রেমিকার সঙ্গে ডেটিঙে যাওয়ার আগে, খুব সুন্দরভাবে দেশি কোম্পানির শার্প ব্লেড দিয়ে দাড়ি-গোঁফ কেটে গেলেন। কিন্তু আপনার প্রেমিকা, আপনাকে দেখেই চিৎকার করে ওঠে, ‘অ্যা! গোঁফ কাটলা ক্যান? আমি আজকের মধ্যেই গোঁফ চাই!’ + ডেটিঙে আপনি চেয়েছিলেন শুধু আইসক্রিম খাইয়ে চালিয়ে দেবেন।

পকেটে যে ক-টা টাকা আছে, তাও বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা। কিন্তু আইসক্রিম খাওয়ার পর, আপনার প্রেমিকা খুব মলিন মুখ করে বললো, ‘আইসক্রিম খেয়ে তো খিদে আরও বেড়ে গেলো! চলো না জানু, রেস্টুরেন্টে যাই?’ + অনেকক্ষণ কথা হয় না। তাই প্রেমিকাকে কল করলেন একটু টক-ঝাল কথা বলবেন বলে। কিন্তু ঠিক ও মুহূর্তেই আপনার প্রেমিকা কলটা রিসিভ করে বলে, ‘ওরে আমার সোনা-মানিক, তুমি দেখি আমার মনের কথা পড়তে পারছো! আমি এখনই তোমাকে কল করতাম- বান্ধবীর কাছে থেকে সাজেশন নিতে হবে, প্লিজ সোনা, আমার ফোনে এক্ষুণি একশোটা টাকা পাঠাও। ’ + নতুন মোবাইল সেট কেনার খবরটা খুব উচ্ছ্বসিত হয়েই প্রেমিকাকে দিলেন।

আর তখনই সে বলে বসছে, ‘তুমি তো জানো, বাসায় সমস্যা। আমার মোবাইলটা শিঘ্রী বাবা নিয়ে যাবে। তোমার তো দু-টো ফোন, আপাতত আমাকে একটা দিয়ে দাও!’ [] -------------------------------------------------------------------------- দূর দেশে] আফগান কন্যা: আয়েশা কাহিনি হাসান ফেরদৌস মেয়েটির নাম আয়েশা। বয়স আঠারো। মা-বাবার নির্দেশে বিয়ে হবার পর, দাম্পত্য-জীবন বছর না ঘুরতেই শ্বশুরবাড়িতে তাঁর পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

স্বামী তো ছিলোই, শ্বশুর-শাশুড়ির হাতেও নিত্য নির্যাতন সইতে হতো। অবস্থা যখন সহ্যের বাইরে গিয়ে ঠেকে, মেয়েটি একদিন পালিয়ে চলে আসে বাবার বাড়িতে। আশা ছিলো, আর কোথাও না হোক, বাবার কাছে আশ্রয় পাবেন। আশ্রয় অবশ্য পেয়েওছিলেন। কিন্তু স্বামীর আদেশ অমান্য করে ঘরের বউ পালিয়েছে- এ কথা ততোক্ষণে রাষ্ট্র হতে সময় লাগেনি।

গ্রামের মোল্লাদের কানে তো খবরটা পৌঁছায় আরও বিদ্যুৎ গতিতে। অবশেষে ডাকা হলো সালিশ। সেখানে যথারীতি সাব্যস্ত হয়- এমন “ভয়াবহ” পাপাচারের শাস্তি হিসেবে আয়েশার নাক কেটে দেওয়া হোক! এরপর ওঁকে দেখে, অন্য বেয়াড়া মেয়েরা এমন কিছু একটা করার আগে, যেনো দু-বার ভাবে। সেই থেকে মেয়েটির নাক কাটা। এটি গল্প নয়, সত্যি ঘটনা।

ঘটেছে আফগানিস্তানের উরুজগান-এ। এখন সেখানে আফগান তালেবানদের অবাধ রাজত্ব। এসব কথা জেনেছি “টাইম” ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছবিটা ছাপা হওয়ার পর। নাক কাটা মেয়েটির ছবি, তার পাশে সোজাসাপটা শিরোনাম- অ্যামেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসার পর অবস্থা কী দাঁড়াবে। কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছাড়া একটি সরল স্টেটমেন্ট।

এই প্রচ্ছদচিত্র ও কাহিনি নিয়ে খোদ অ্যামেরিকাতেই এখন বামপন্থী মহলে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। কেউ কেউ সরাসরি বলেও ফেলছেন, ‘এটা এক ধরনের পর্নোগ্রাফি- আফগান মেয়েদের বিষাদ ও করাল নিয়তি নিয়ে পর্নো ব্যবসা। ’ এ কথা বলার কারণ? আয়েশার এই হৃদয় বিদারক ছবি ছাপিয়ে “টাইম” ম্যাগাজিন এ কথাটিই বলার চেষ্টা করছে, যে- আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকান সৈন্য চলে এলে, সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হবে মেয়েদের। বামপন্থীরা, যাঁরা আফগানিস্তানে বিদেশি সেনাদের উপস্থিতির প্রবল বিরোধী; তাঁদের যুক্তি, আয়েশার নাক কাটা হয়েছে এমন সময়, যখন আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার লাখ-খানেক সেনা তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত।

কই, তারা তো আয়েশার ওপর এই বর্বর আক্রমণ ঠেকাতে পারেনি? অন্য কথায়, “টাইম” ম্যাগাজিন একটি সরলমতি আফগান মেয়ের করুণ কাহিনি ব্যবহার করে, আসলে, আফগানিস্তানে বিদেশি সেনার অবস্থান ও মার্কিন অধিগ্রহণ প্রলম্বিত করার পক্ষে যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেছে। ব্যস, আর কিছু নয়। কথাটা হয়তো একদম মিথ্যা নয়। প্রায় দশ বছর হতে চললো আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার সামরিক এ অভিযানের বয়স। এ সময়টায় দেশটার কোটি কোটি ডলারের শ্রাদ্ধ তো হয়েছেই, দুই পক্ষের মানুষও মারা গেছে দেদার।

তাঁদের অধিকাংশই নিরীহ ও বেসামরিক মানুষ। এই মুহূর্তে অ্যামেরিকার ভেতরই এ যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন মারাত্মক কমে এসেছে। ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও বেশির ভাগ কংগ্রেস সদস্য এখন এ প্রশ্নে দ্বিধাগ্রস্ত। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা দিয়েছেন- ২০১১ সাল নাগাদ অ্যামেরিকান সৈন্য আফগানিস্তান থেকে ফেরা শুরু করবে। তার মানে আজ হোক আর কাল, মার্কিন সেনা ঘরে ফিরবেই।

আর তারা ফিরতে না ফিরতেই হা-রে-রে করতে করতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে তালেবান। মার্কিন সেনা ছাড়া আফগান সরকারের সাধ্য নেই তালেবানদের ঠেকায়- এ কথায় সত্যি কোনো বিতর্ক নেই। এই তালেবান ক্ষমতায় ফিরে এলে, অন্য কিছুর আগে তারা যে পুনরায় মেয়েদের ওপর চড়াও হবে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। কেনো জানি, কী কারণে মৌলবাদী মাত্রই, তা আফগানিস্তানে হোক বা অন্যত্র, মেয়েদের নাম শুনলে ভয়ে অস্থির। মেয়েদের মাথার খোলা চুল দেখলেও নাকি এদের পাজামার দড়ি ছিঁড়ে যায়।

ভয়টা সে কারণেই। অনেকেই ভাবছেন, গত এক দশকে মার্কিন উপস্থিতির কারণে আফগানিস্তানের মেয়েরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা শুধু মুখ থুবড়েই পড়বে না, উল্টো পথেও হাঁটা শুরু করবে। তখন হয়তো এক আয়েশা নন, হাজার হাজার আয়েশার নাক কাটা যাবে। শুধু নাক কাটা কেনো, পাথর ছোড়ার আঘাতেও মৃত্যু হবে অনেকের। কিন্তু এ কথাও তো ঠিক, মেয়েদের অধিকার প্রশ্নে যে লড়াই, তা আফগানিস্তানের মানুষের নিজেদের লড়াই।

এ অবস্থার পরিবর্তন চাইলে আফগান নারী ও পুরুষ, উভয়কে নারী অধিকারের পক্ষে লড়তে হবে। একমাত্র তাহলেই জয় সম্ভব। পাদটীকা: এরই মধ্যে আয়েশার জন্য যাঁরা শংকিত বোধ করতে শুরু করেছেন, তাঁদের জন্য একটি ভালো খবর- উরুজগান থেকে ওঁকে উদ্ধার করে ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। আপনারা এ লেখা যখন পড়ছেন, ততোদিনে তাঁর নাকের অস্ত্রোপচার শেষ। কয়েক দিন আগেও তাঁর দিকে তাকালে মেয়েটি লজ্জায় নাক ঢেকে রাখতেন।

না, আয়েশাকে আর লজ্জায় মাথা কুটতে হবে না। [সংক্ষেপিত] > নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র -------------------------------------------------------------------------- পাঠ-প্রতিক্রিয়া] [সমালোচনা এবং প্রত্যাশার কতা জানিয়ে আপনিও লিখুন] প্রথম সংখ্যা পাইনি। দ্বিতীয় সংখ্যা থেকেই আকাশলীনা-র সাথে পরিচয়। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা তৈরি হলো। আপনাদের মতোন তরুণরা, অন্য দশজনের মতোন চা-এর দোকানে বসে আড্ডা না মেরে, এমন একটা “সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” কাজ নিয়ে মেতে আছেন; এই ভাবতেই তো কতো ভালো লাগছে! গল্প-কবিতার পাশাপাশি, দ্বিতীয় সংখ্যায় “আফ্রিকান বিয়ে উৎসব” লেখাটি অসাধারণ লেগেছে।

এ ধরনের বিচিত্র স্বাদের আরও লেখা ভবিষতে আশা করি। “পথে পথে চলতে চলতে হঠাৎ একদিন থেমেই যাবো”- এমন যেনো না হয় আকাশলীনা-র চলার পথ। অনেক অনেকদিন দেখতে চাই আকাশলীনা-কে। এর সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ। > জান্নাতুল ফেরদৌস; পিডিবি রোড, পটিয়া, চট্টগ্রাম আকাশলীনা-র দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যা একই সাথে পেলাম।

ধন্যবাদ। দু-টো সংখ্যারই প্রচ্ছদ এক কথায় অপূর্ব। লেখাগুলোও মন্দ মনে হয়নি। আকাশলীনা-র সৌজন্যে সামাজিক সচেতনামূলক বিজ্ঞাপনগুলো সময় উপযোগি। প্রতি সংখ্যাতেই এরকম কিছু কথা চাই।

যেনো জানা কথাগুলো, আরেকবার জেনে সবাই-ই সচেতন হতে পারি। আরও বৃহৎ পরিসরে আকাশলীনা-র প্রসার ঘটুক- এই শুভ কামনা রইলো। > ইপ্সিতা; জি এল রায় রোড, রংপুর কোনো ভালো কাজের জন্য, প্রশংসা অনেক সময়ই কাজের মানকে খারাপ করে ফেলে। তাই প্রশংসা করে লেখার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না। কিন্তু ভালো কাজের প্রশংসা করা না হলে, অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।

এ জন্য প্রথম দু-টি সংখ্যা পড়ার পর কিছু না লিখলেও, এবার অনেকটা মনের তাগিদেই লিখতে বাধ্য হলাম। আকাশলীনা-র তিনটি সংখ্যাই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। ভালো বললে ভুল বলা হবে। বলতে হবে খুবই চমৎকার হয়েছে। বিশেষ করে লেখা নির্বাচনের জন্য প্রশংসা করতেই হয়।

প্রতিটি সংখ্যায় কবিতা একাধিক না থাকাই ভালো। তবে একটি করে গল্প ও রম্যগল্প সবসময় চাই। সবশেষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। > মো. শহীদুল কায়সার লিমন; পরিচালক, রেমাশ গ্রন্থ সম্ভার, শ্রীপুর, গাজীপুর -------------------------------------------------------------------------- আকাশলীনা কার্তিক ১৪১৭] অক্টোবর ২০১০] সংখ্যা ০৪] বর্ষ ০১] কৃতজ্ঞতা] হিমেল অনার্য সম্পাদক] নোমান ভূঁইয়া শব্দ বিন্যাস ও সমন্বয়] সৈয়দা সুধন্যা প্রচ্ছদের ছবি] কালের কণ্ঠ-র সৌজন্যে প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠাসজ্জা] রঙছুট বিশেষ সহযোগিতায়] মহিবুল হাসান কাউসার সাবরিনা আহমেদ যোগাযোগ] +88 018 18 731377 [সাইফুল আমিন] মূল্য] ১০ টাকা [স্বপ্নের কোনো মূল্য হয় না। তবু যাঁরা এই স্বপ্ন কিনতে চান, তাঁদের জন্য এই নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ] সম্পাদক ও প্রকাশক নোমান ভূঁইয়া কর্তৃক সার্কুলার রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত; এবং হাতিরপুল, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৫ থেকে মুদ্রিত একটি প্রজন্ম প্রকাশন =============================================


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।