আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ আর সেদিনের তারা (পর্ব ৬)

রাতের আকাশের নগ্নতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি কিন্তু পারি না মনের আকাশ দেখতে।

মানে? না, কিছু না। আমাদের প্রথম সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে? সেদিন তোমার বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে তোমাকে খুব সুন্দর, এতটা সুন্দর দেখাচ্ছিল যে, আমি আজও তার উপমা খূঁজে পাইনি। মানুষ এত বিশ্রী সুন্দর হয় কখনও? মাঝে মাঝে মনে হয়, শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যই কী সেদিন আমাকে আকর্ষণ করেছিল, না কি অন্য কোন কিছূ। আচ্ছা তুমি না হয় ভীষণ সুন্দর মানুষ, তোমার কথা আলাদা ।

আমার তো আকর্ষণীয় কিছু ছিল না। আবার ভাগ্যটা কী দেখ, আমরা একই জায়গায় ভর্তি হলাম। প্রতিদিনের দেখা সাক্ষাতের মাঝে একদিন মা’র গল্পের সাথে তোমাকে জড়ালাম। মা ছোট বেলায় প্রায়ই আদর করে বলতেন, আমার জিম যে বড় হয়ে কবে ডেলা মনিকে ঘরে নিয়ে আসবে? তিনি নাকি আমার নামটা "দ্যা গিফ্ট অব দ্যা ম্যাজাই” পড়ে তার নায়কের নামে নাম রেখেছিলেন জেমস । আর আমার বাড়ির নাম হবে জেমস ডেলাস হোম।

সেদিনের পর থেকে তুমি, তোমার বান্ধবীরা এ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে। বলতে, "এই দেখ দেখ আমাদের জিম আসছে, তোরা দেখ তো ঘড়িটা হাতে, না বুক পকেটে?" তখন খুব রাগও লাগত আবার ভালও লাগত। তোমার সেই উগ্রতা আমার স্মৃতির ভান্ডারে ছিল অমূল্য রত্ন। তারপর হঠাৎ একদিন তোমাকে আমার জীবনে অনুভব করলাম, শহীদ মিনারের চত্বরে। ------------ ---------------- হুম, কত সুন্দর ছিল সেই দিনগুলি, তাই না।

কী স্পষ্ট সেসব স্মৃতি, এখনও কত জীবন্ত সে অনুভূতি। মনে হচ্ছে এই তো সেদিনের কথা। আচ্ছা জেমস, আমরা সেখানে আবার ফিরে যেতে পারি না; পারি না কৃষ্ণচূড়ার মত রক্তিম হয়ে সাজতে কিংবা কদম ফুলের মত মিষ্টি গন্ধ ছড়াতে? [জেমস দেখতে পেল, সে ক্রমেই ডলির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার আশঙ্কায় ডলির সাথে কথা বলার কোন ইতি না টেনেই ক্যাসেট প্লেয়ার অন করে দেয়, রিসিভারটা সামনে রেখে। সে সিডিতে স্বাভাবিক কণ্ঠে কিছু কথা রেকডিং করা আছে।

তার ইচ্ছা, ডলির কণ্ঠ শুনতে শুনতে মৃত্যুর কোলে সে ঘুমিয়ে পড়বে। তাই সাইলেন্সার লাগাতে লাগাতে সে ভাবছে, ডলির এই ভালবাসার বিপরীতে তার আর কিছুই চাওয়ার নেই, থাকতে পারে না। ] খট্ ---- ---- শো শো ---- ---- ধ্রুম। হিমেল: অ্যাই ইয়ে ডলি, এদিকে একটু আসবে? খুব খিদে পেয়েছে। জেমসকে বরং একদিন সময় করে আসতে বলে দাও।

হ্যাঁ বলছি। হ্যালো জেমস কিসের শব্দ হল? হ্যালো হ্যালো?---- জেমস: ডলি অনেক দিন পর একটা কবিতা লিখেছি। তোমার নামে উৎস্বর্গ করা। শুনবে? হ্যাঁ বল। তুমি কতটা অচেনা, আমার তা অজানা।

তুমি কতটা দূর, কাছে এসে শুনলাম সে সুর। তুমি কতটা আপন, দূরে গিয়ে বুঝলাম তুমি নিপুণ। তুমি কতটা নিরীহ, তোমার আক্রমন তা বোঝাল। তুমি কতটা হিংস্র, তোমার ভালবাসা তা জানাল। কেমন হয়েছে লেখাটা? ডলি: এটুকুই? মনেহল শেষ হয়েও শেষ হয়নি।

-------------------- ------------------------------- {কিছুটা নিরবতার পরে আবারও জেমেসের যান্ত্রিক কন্ঠ} জানতাম তুমি এটাই বলবে। ডলি একটা অনুরোধ রাখবে? না চাইলেও রাখতে রাখতে হবে। যদিও আমি হলে পারতাম না কিন্তু তোমাকে পারতেই হবে। কারণ তুমি আমার একমাত্র ভালবাসা। মেয়েদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।

তোমাকেও তাই করতে হবে। যা ঘেটেছে, সে সবকে মেনে নিয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মত সংসার গড়ো। জানি, এ কথা বলা মানে মৃত্যুদন্ড পাওয়ার মত অপরাধ। এ কথা বলা মানে, তোমার অস্তিত্বকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা। তারপরেও বলছি।

ভেবে দেখ একবার, অতীত কখনও ফিরে আসেনা। তোমার রূপ, গুণ, ঐশ্বর্য্য, ব্যক্তিত্ব সব অসাধারণ, অতুলনীয়। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । তারপরও আমার অনুরোধ, অতীত স্মৃতির মায়াকে জড়িয়ে কী করবে, ভুলে যাও। সময় জীবনকে যা দিচ্ছে তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত কর না।

জীবন তো জীবনের পথে চলবেই। একদিনে অনেক বলে ফেলেছি। আর না। ------ ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ শো শো-------------------- হ্যালো। হ্যালো জেমস।

হ্যালো? (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।