আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন প্রবীন প্রজন্মের প্রতি নবীনের আক্রোশ



ব্লগ বা অনলাইনে তরুণদের অনন্য লেখা প্রচেষ্টায় প্রীত আমরা সবাই। সাহিত্যপাতার আমলাতান্ত্রিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে ব্লগিং বিপ্লব সূচিত হয়েছে। তারপর মিডিয়ার মনোপলি ভেঙ্গে অনলাইন যখন সংস্থাপিত করছে মুক্তির মিডিয়া তখন আনন্দিত হবার কারণ তো ঘটছেই প্রতিদিন। তবে ব্লগে কিছু কিছু তরুণের প্রবীনের প্রতি আক্রোশ আমাকে স্তম্ভিত করেছে। নবীন-প্রবীন আক্রোশ-প্রতি আক্রোশ নতুন কিছু নয়।

একে অডিপ্যাল কনফ্লিক্ট বা পিতাপুত্রের সংঘাত হিসেবে ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। সেই এন্টিথিসিস থেকেই ভাবনার বিকাশ। আমার আব্বার সঙ্গে আমার ছোট বেলা থেকেই সংঘাত অতঃপর বন্ধুতার সম্পর্ক। ছোট বেলা থেকেই কাওয়ার্ডস ডাই মেনি টাইমস বিফোর দেয়ার ডেথ বলে টীকা টিপ্পনী ঘাটতেন। আমাকে নিম্ন বুদ্ধাংকের মানুষ বলেছেন।

আম্মা আমার পক্ষ নিয়েছেন। সেই থেকে নারী সমর্থন পোক্ত হলো জীবনে। আমাদের আব্বাপ্রজন্ম খুব কড়া প্রকৃতির,গম্ভীর,মুড ভালো থাকলে প্রাণ খুলে হাসেন। মুড খারাপ থাকলে আমাদের কড়কে দেন। আব্বা এবং শিক্ষকদের অবসর বিনোদন ছাত্রদের বকাঝকা করা।

তারমানে কী এই আমাদের জীবনে আমাদের আগের প্রজন্ম খলনায়ক আর আমরা যুধিষ্ঠির। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ইংরেজীর বাতিঘর রমজান আলী স্যার সারাক্ষণ আমার লম্বাচুল নিয়ে কটাক্ষ করতেন,পরীক্ষার আগে কাওয়ার্ডস ডাই মেনি টাইমস বিফোর দেয়ার ডেথ ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাতেন তার জন্য এখন তাকে খলনায়ক বলবো। যে ইংরেজীটুকু শিখিয়েছিলেন ওটা কী তাকে নায়ক হিসেবে ভাবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ মোসলেম আলী আমাকে স্পষ্ট বলেছিলেন আমার ভবিষ্যত অন্ধকার। আমার আব্বার সঙ্গে এক টিচার্স মিটিং এ উনাকে বেদনার সঙ্গে জানিয়েছিলেন আমার পড়ালেখায় অমনোযোগের কথা।

আব্বা বাসায় ফিরে টাইম এন্ড টাইড ওয়েট ফর নান বলে আমি থার্ড ডিভিশন পাবো বলে জ্যোতিষী হলেন। এটা ছিল অপমানজনক। আম্মাও অভিযুক্ত হয়েছিলেন আমাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার দায়ে। তাহলে কী এখন আমি মোসলেম আলী আর আমার আব্বার কুশপুত্তলিকা দাহ করবো। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম দিন থেকেই কটাক্ষ করেছেন।

বান্ধবীদের সঙ্গে সময় নষ্ট না করে বৃটিশ কাউন্সিলে যেতে বলেছেন। ক্রিকেটে হেরে আসলে বলেছেন ব্লেম ইউর লাক জিরো রানে অল আউট হওনি। ফ্রেশার্স রিসেপশন শেষে অনুষ্ঠানের মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন,শেষের খাওয়া দাওয়া পর্বটাই ভালো হয়েছে। তাহলে কী মনজুর স্যার পদে পদে ডিসকারেজ করেছেন। অবশ্যই না।

এইটা ঐ প্রজন্মের ট্রেনিং কৌশল। উনারা আমাদের আঘাত করে উদ্দীপ্ত করেছেন। ক্রিকেট কোচেরা এটা করেন। যুদ্ধের আগে কমান্ডাররাও এভাবে উদ্দীপ্ত করেন। এই ট্রেনিং কৌশল বদলে গেছে।

আমরা পরের প্রজন্মকে উতসাহিত করে উদ্দীপ্ত করি। আমার ছেলেকে অনেক উতসাহিত করেও স্টেজে বা লিভিংরুমে গান গাওয়ানো যায়নি। মা-দীদারা সমর্থন দিয়েও পারেনি। দাদা উতসাহ মেথডেও পারেননি। আমি পুরোনো ধমক ও উস্কানী কৌশলে খানিকটা সফল হয়েছি।

আব্বা মুচকি হাসলেন। কারণ ট্রেনিং এ নরম-গরম দুটোই লাগে এটা প্রমাণ হতে দেখে। সম্প্রতি রেস্টুরেন্টে পারিবারিক আড্ডায় এই প্রজন্মের দুই ভাগ্নেকে মতিউর রহমান-মাহফুজ আনামের সমালোচনায় উত্তেজিত হতে দেখে ওদের এক সাংবাদিক মামা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এরা এতো উত্তেজিত কেন,সমালোচনা হোক কিন্তু রাগে কাঁপছে কেন এরা। আমারো মন খারাপ এই নিয়ে। ব্লগে আগের প্রজন্মের আব্বা-মামা-চাচা-শিক্ষক-লেখক-কবি-রাজনীতিকদের নিয়ে তর্ক বিতর্ক হোক কিন্তু রাগে কাঁপতে কাঁপতে মৃগী রোগীর মতো কেন? রাষ্ট্রীয় আর সামাজিক অধিকার লংঘন পদে পদে দেখে অনুন্নয়নের আর মানবাধিকার হীনতার বেদনায় নতুন প্রজন্ম বিক্ষুব্ধ।

প্রবীন প্রজন্ম ব্যর্থ হয়েছে একবিংশের বাংলাদেশ উপহার দিতে। ধরে নিলাম উন্নয়নে সমবয়েসী দেশগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আমরা। এখন কি কারণে গোল খেয়ে বসে আছি,কোন বুড়ো স্ট্রাইকার কি ভুল করেছিল,কোন কোচ দলকে সময় না দিয়ে বান্ধবীকে সময় দিয়েছে,কোন ম্যানেজার জাতীয় দলে দলীয়করণ করেছে,আরে ওরাতো কোন খেলোয়াড়ের জাত আছিল না-এই সব কাসুন্দি না ঘেটে গোল গুলো শোধ করার জন্য খেলতে হবে নতুন প্রজন্ম কে। ভালো খেললে ভালো ফল হয়। সাকিবেরা প্রমাণ করেছে।

সাকিব বসে বসে যদি বুলবুল কি ভুল করিয়াছিল এই নিয়ে ব্লগিং শুরু করতো তাহলে আর ব্লগের ব্যানারে বাঙ্গালীর নিউজিল্যান্ড বিজয়ের পতাকা উড়ানো যেতো না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।