আমি সেই সব লোকদের পছন্দ করি, যারা চিন্তা করতে পারে,অপেক্ষা করতে পারে এবং বিরত থাকতে পারে।
চীনের ভবিষ্যৎ নেতা হচ্ছেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। এই শক্তিশালী বডির মাত্র দুজন বেসামরিক সদস্যের একজন হলেন তিনি। আরেকজন হচ্ছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও।
প্রথা অনুযায়ী, হু-র পর চীনের আগামী নেতা হিসেবে সি জিনপিংয়ের অবস্থান নিশ্চিত হলো এর মাধ্যমে। সম্প্রতি দলের সপ্তদশ কংগ্রেসে সিএমসিতে তাঁর নিয়োগ অনুমোদন করা হয়।
সিএমসিতে সির নিয়োগ অপ্রত্যাশিত ছিল না। বরং তিনি এ পদে নিযুক্ত না হলে উত্তরাধিকারী নির্বাচনের বিষয়টি অনিশ্চয়তার ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ত।
এরপরও চীন পর্যবেক্ষকেরা এ নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে সংযত ছিলেন।
এর কারণ, গতবারও তাঁর নিয়োগের ঘোষণা আসবে বলে মনে করেছিলেন সবাই। তা ছাড়া ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের উপদলগুলোর মধ্যে গত কয়েক মাসে পদ নিয়ে বেশ পাল্লাপাল্লিও হয়েছে। কাজেই সির নিয়োগ কোনো স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত ছিল তা বলা যাবে না মোটেই।
সি জিনপিং কিন্তু হু জিনতাওয়ের তেমন পছন্দের লোক নন। তাঁদের অতীত একেবারেই আলাদা।
দলের ভেতরে তাঁদের গ্রুপও এক নয়। হু জিনতাও ওপরে উঠেছেন যুব সংগঠন ইয়ুথ লিগ দিয়ে। এ জন্য পারিবারিক সম্পর্ক কাজে লাগাননি তিনি। অন্যদিকে পারিবারিক পরিচয় সাহায্য করেছে সিকে। তাঁর বাবা সি জংসান দলের বহু পুরোনো ঝানু নেতা।
১৯২০-এর দশকে রাজনীতি শুরু করেন জংসান। দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদেরই একজন তিনি। এ কারণে তাঁর ছেলে সি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘ক্ষুদে রাজপুত্তুর’ হিসেবেই বিবেচিত হতেন।
হুর পূর্বসূরি জিয়াং জেমিনের সমর্থকদের সঙ্গেও সির সম্পর্ক ভালো। তাঁরা রাজনৈতিক মহলে পরিচিত সাংহাই গ্রুপ নামে।
পর্যবেক্ষকেরা বলেন, হুর আগ্রহের কারণে সি উত্তরাধিকারী হয়েছেন তা বলা যাবে না মোটেই।
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন বা সিএমসিতে চীনের ভবিষ্যৎ নেতার নিযুক্তি হচ্ছে মূলত একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ১৯৯৭ সালে দেং জিয়াওপিংয়ের মৃত্যুর পর এ ব্যবস্থাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। দেংই দলের শেষ প্রভাবশালী নেতা, যিনি দলীয়ভাবে শীর্ষ পদে না থেকেও সর্বোচ্চ নেতার ভূমিকা পালন করেছেন।
দেং জিয়াওপিংয়ের মৃত্যুর পর থেকে ধরা হয়, চীনের নেতা দলের সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট, সিএমসির চেয়ারম্যান—এসব শীর্ষস্থানীয় পদ অলংকৃত করবেন।
চীনের নতুন ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচনের নিয়ম হচ্ছে পাঁচ বছর আগে তাঁর নাম ঘোষণা করতে হবে। আশা করা হয়, নতুন নেতা পর্যায়ক্রমে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট, দলের কেন্দ্রীয় স্কুলের প্রধান, পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটি সদস্য ও সিএমসির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। শেষ পদটি কার্যত একই পদবির সমান্তরাল দুটি অফিস। দলের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন সরকারেরও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন হিসেবে কাজ করে। সিএমসির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে শিক্ষানবিশি করানোর উদ্দেশ্য হলো, নতুন নেতাকে সশস্ত্র বাহিনীকে পরিচালনা করতে যোগ্য করে তোলা।
হু জিনতাও ২০০২ ও ২০০৩ সালে যথাক্রমে দল ও রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে জিয়াং জেমিনের স্থলাভিষিক্ত হন। তবে জিয়াং তখনো সিএমসির চেয়ারম্যানের পদটি আরও দুই বছর নিজের দখলে রাখেন। হু জিনতাও ২০১২-১৩ সালে সিকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সময় একই কাজ করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। সি আগামী কয়েক বছরে খুব বাজে ধরনের ভুল না করলে তিনিই হুর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।
সিএমসিতে সির নিয়োগ এটাই বলছে যে দলের প্রধান উপদলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সত্ত্বেও ২০০৭ সালে সম্মত হওয়া উত্তরাধিকার-ব্যবস্থা আরও একবার নিশ্চিত হলো।
শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব তাঁদের প্রধান লক্ষ্যের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। আর সে লক্ষ্যটি হলো বাকিদের বুঝিয়ে দেওয়া যে, কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতার ভিত্তি অটুট থাকবে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল করে তাতে ফাটল ধরানো বরদাশত করা হবে না। চীনা নেতারা জাতিকে আশ্বস্ত করতে চান যে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলীয় নেতৃত্ব এক জোট আছেন। তা সে চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক মন্দা বা চীনের ভিন্নমতাবলম্বী লিউ সিয়াওবোকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া যেটাই হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।