আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলা-বড়বেলার খেলাধুলা এবং অতঃপর

মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না।

খুব ছোটবেলা থেকেই খেলা পাগল আমি। অন্য সবার মতোই। খেলাধুলা কে না ভালবাসে।

ফুটবল, দাড়িয়াবান্দা, গোল্লাছোট, বউচি, ঘুড়ি উড়ানো থেকে শুরু করে প্রায় সব খেলাই হতো। বন্ধুরা একসাথে হলেই কোন না কোন খেলা চলে আসতই। আমার বেঁড়ে ওঠা গ্রামে। গ্রাম আমার অনেক বেশি ভাল লাগে। খুব বেশি কাছে টানে গ্রাম আমায়।

গ্রামে বড় হয়ে ওঠা আমার জীবনের এক বড় অভিজ্ঞতা। তখন ক্লাস থ্রি বা ফোরএ পড়ি। আমাদের ১০/১২ জনের একটা দল ছিল। সবসময় একসাথে খেলাধুলা করতাম। একদিন বিকেলে আমার এক বন্ধু বলল-চল আমরা একটা ক্লাব গঠন করি।

প্রতিদিন ১০ পয়সা করে জমাবো। এভাবে ফুটবল কিনার টাকা হয়ে গেলে বল কিনে খেলতে পারব। অন্যরাও মত দিল। ক্লাবের প্রধান বানানো হল আমাকে। এই কথা ঘরের কাউকে বলা যাবে না।

আমরা এতো ছোট বয়সে ক্লাব করছি শুনলে মাইর খেতে হবে। যাই হউক আমাদের ঘরের বাঁশের পায়া ফু্টা করা হল। ওই ফুটা দিয়ে ১০ পয়সা করে ফেলি প্রতিদিন। আর খাতায় হিসেব রাখি। যার সামর্থ্য বেশী সে ১০ দিনের টা একসাথে ১ টাকা দেয়।

এভাবে যখন ৭৫ টাকা হল, আমরা বাঁশের পায়া দা দিয়ে কাটলাম। সেদিন কি যে উত্তেজনা! সবার কি যে আনন্দ! কেটে সবাই গুনতে বসে গেলাম। তারপর ২ জনকে বাজারে পাঠানো হল। কিন্তু কোন রিক্সাভাড়া দেওয়া হল না। যাদিও বাজার অনেক দূরে।

৫৬টাকা দিয়ে ২ নম্বর বল আর ১৮ টাকা দিয়ে ছোট শিল্ড কিনে আনা হল। সিদিন তক্ষনি মাঠে চলে গেলাম। কতক্ষন যে খেলেছি মনে নেই। তারপর মাঝে মাঝেই এপাড়া-ওপাড়ার সাথে খেলা রাখি। যে জিতবে তারা শিল্ড পাবে।

পরে অবশ্য ফেরত দিয়ে দিতে হবে। একদিন বিকেল বেলা পাশের বাড়ির স্যার (জাইগীর স্যার) আমাদের পিচ্ছি পিচ্ছি ছেলেদের ডাকলেন। কি খেলা নাকি শিখাবেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আমাদের এখানে পাট গবেষনা তে চাকুরী করেন। তখন অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কি জিনিস এটা জানা ছিল না।

শুধু জানতাম তিনি অনেক শিক্ষিত আর দেখতে সেইরকম সুন্দর। যাই হউক আমরা সবাই গেলাম উনার কাছে দল বেঁধে। তিনি আমাদের বললেন তোমাদের ক্রিকেট খেলা শিখাব। ক্রিকেট!! এটা কি জিনিস? আমরাতো অবাক। তিনি মনযোগ দিয়ে আমাদের ক্রিকেট খেলা শিখাচ্ছেন—আমরা শিখছি।

এতো চমতকার খেলার কথা আমরা জানতাম না! কি বোকা আমরা। এটা নাকি ঢাকা তে খুব জনপ্রিয়! হায়রে কপাল আমাদের! তারপর প্রতিদিন ক্রিকেট খেলি। স্যার আমাদের কি ধৈয্য নিয়ে যে শিখিয়েছিলেন! আমি ব্যাট করতে পারি না তেমন। খুব খারাপ লাগত। এলাকায় ক্রিকেট খেলে অথচ ব্যাট করতে পারে না।

প্রেস্টিজ থাকে নাকি? কিন্তু স্যার বললেন ব্যপার না তুমি বল করা শিখ। যাই হউক আমি বোলার হয়ে রইলাম, ব্যাটসম্যন আর হতে পারলাম না। তার ক’বছর পর আমি ঢাকা্তে বেড়াতে গেলাম। আমার কিছুই ভাল লাগে না তখন। ঠিকমত খেলাধুলা করতে পারি না।

মামা বললেন ২/৩ টা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। আমি তখন বুঝতে পারলাম কায়দা করে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়ি থেকে। তারপর ভর্তি হলাম ঢাকায়। দিনগুলো কাটছিল রবি ঠাকুরের ফটিকের মত। স্কুল থেকে ফিরে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকা।

মাঝে মাঝে ছাদে যাই। কিন্তু আমার মন বসে না কিছুতেই। এভাবে প্রায় ২/৩ মাস চলল। তারপর বন্ধু হল ক’জন। দেখলাম সবার মধ্যেই খেলাধুলা করার ইচ্ছা প্রবল।

ছোট মন খেলাধুলা করতে আগ্রহী। মতিঝিল এজিবি কলোনীতে অনেক জায়গা। ক্লাসের ফাঁকে বা ক্লাস শেষে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলি। বলে রাখা ভাল আমি কিন্তু কোনটাই তেমন ভাল খেলি না। খেলার জন্যে খেলি, ভাল লাগে তাই খেলি।

কমলাপুর রেলস্টেশনের মাঝে খালি জায়গায় খেলি স্কুল ছুটির পর। বাড়িতে বলি না। বললে মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ক্রিকেট খেলতাম ডিউস বল (কাঠের বল) দিয়ে কোন গার্ড ছাড়া, প্যাড ছাড়া। এখন ভাবলে গা শিউরে ওঠে।

একদিন বিকেলে খেলছি বাসায় ফিরার আগে। আমার পাশের বাসার একটা ছেলে তার বাবা-মা’র সাথে নোয়াখালী থেকে ফিরছিল। আমাকে খেলা অবস্থায় দেখে ফেলে। তারপর যথারীতি আমাদের বাসায় জানিয়ে দেয়। সেদিন থেকে ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

এখন একটাই উপায়। টিফিন আওয়ারে ফুটবল খেলা কলোনীতে। তাই খেলি। মাঝে মাঝে বনশ্রী এলাকায় খেলতে যাই দুপুরের পরে। তখন ওখানে বাড়ি ঘর ছিল না।

২/৩টা টিনের ঘর দেখা যেত। খেলার ফাঁকে পানির দরকার পরলে ওই বাড়িতে যে্তাম পানি আনতে। বন্ধুরা আমার খেলা পছন্দ করে। একদিন বোলার হিসেবে নেয় দলে। প্রথম দিনেই ৪টা উইকেট পাই।

তারপর থেকে দলে মোটামুটি নিয়মিত। একদিন পাড়ায় খেলা হয়। আমিও যাই খেলতে। কাঠের বল দিয়ে খেলা। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি কাঠের বলে খেলতে খেলতে।

আমি মাঝে মাঝে ব্যাট চালা্তেও পারি। সেদিন প্রতিপক্ষের একজনের গালে বল লেগে গাল বেয়ে দরদর করে রক্ত পড়তে দেখি। দেখে এমন ভয় পেয়েছিলাম—এমন ভয় জীবনে পাইনি। সেদিন প্রথম সত্যিকার অর্থে বুঝেছিলাম কাঠের বলে গার্ড-প্যাড ছাড়া খেলা ঠিক না। আমাদের ব্যাট করার পালা আসে।

৬নম্বরে ব্যাট করতে নামি। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। মনে হচ্ছিল আজকে যদি ব্যাট করতে না হত কোন কারনে। কিন্তু না ব্যাট করতে হলই। প্রথম বলে ছক্কা, ২য় বলে ৪, ৩য় বলে কট বিহাইন্ড।

আমরা সেদিন হেরেছিলাম। কিন্তু এটা বড় কথা নয়। সেদিনের পর থেকে আমি ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছিলাম। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।