আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২১ সচিব রদবদল



জনপ্রশাসনে ২১ সচিব পদে রদবদল করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনকে ভারপ্রাপ্ত সচিব ও চারজনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রায় ২২ মাসের শাসনামলে জনপ্রশাসনে এটি সবচেয়ে বড় রদবদল। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি করা হয়। এ ছাড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানকে তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই এই আদেশ জারি করা হলো। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের পদটি সচিব পদে উন্নীত করা হয়েছে এবং নজরুল ইসলাম খানকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুরকে একই পদে দ্বিতীয় দফায় দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে পুলিশের ঊর্ধ্বতন থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত ৫৫ জন কর্মকর্তা পদে রদবদল করা হয়। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তিন মাসের কাজের অগ্রগতির খতিয়ান উপস্থাপন করা হয়।

এতে উপস্থাপিত অগ্রগতির চিত্রে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলে খবরে প্রকাশ পায়। ঠিক এর এক দিন পরই ৪৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ২১টি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রদবদল করা হলো। যদিও ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনে গতিশীলতার পথে বাধা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণেও তিনি এমন অভিযোগ করেন। গতকালের রদবদল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে পরিবর্তন আনতে পারে।

বিশেষ করে প্রথম থেকেই এই সরকারের মধ্য থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল যে সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছে না। এ রকম রদবদল করেও যদি কাজে গতি না আসে, তাহলে বুঝতে হবে যে পদ্ধতির মধ্যে ত্রুটি আছে। তাঁর মতে, ঘন ঘন সচিব পদে রদবদল করা হলে কাজের ধারাবাহিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর আগে ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই সচিবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪৬ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। ১৫ জন সচিবের পদে রদবদল এবং সাতজন সচিবকে ওএসডি করা হয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এক মাসের মধ্যে ১০ জন সচিবকে ওএসডি করা হয়। এর মধ্যে অনেকেই ওএসডি থেকে ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। গতকালের রদবদল প্রসঙ্গে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনে রদবদল দৈনন্দিন কাজের অংশ। এই রদবদল প্রশাসনে গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে বলে তিনি দাবি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে ওএসডি করা কিংবা এক পদ থেকে অন্য পদে দেওয়া হয়নি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার কয়েক মাস আগে ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের প্রথমে উপসচিব, পরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যদিও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে ওই সব জেলা প্রশাসকের প্রায় সবাইকে প্রত্যাহার করে। পরে ১৯৭৯ ও ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। রদবদল হলেন যাঁরা: স্থানীয় সরকার বিভাগের মনজুর হোসেনকে পরিকল্পনা বিভাগে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবু আলম মো. শহীদ খানকে স্থানীয় সরকার বিভাগে, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে (ইতিপূর্বে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হলেও গতকাল তা বাতিল করা হয়েছে), ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদারকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, পরিকল্পনা বিভাগ থেকে হাবিবুল্লাহ মজুমদারকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের রোকেয়া সুলতানাকে বেসরকারীকরণ কমিশনের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উজ্জ্বল বিকাশ দত্তকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে মোখলেছুর রহমানকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে এবং লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের (পিএটিসি) রেক্টর দেলোয়ার হোসেনকে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বদলি করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সচিব সাতজন: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া বেগমকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মিজানুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে, একই মন্ত্রণালয়ের মোহাম্মদ সাদিককে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস আসলাম আলমকে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গোলাম কুদ্দুসকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে, যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার এবাদত আলীকে পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য (সচিব) এবং পিএটিসির মেম্বার ডাইরেক্টর স্টাফ (এমডিএস) মেজবাহ উল আলমকে ওই প্রতিষ্ঠানের রেক্টর (ভারপ্রাপ্ত সচিব) করা হয়েছে।

চারজন ওএসডি: ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব আতাহারুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শরফুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নাসির উদ্দিন এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের আবদুল মালেককে ওএসডি করা হয়েছে। এই চারজনই ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা। এ নিয়ে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ৪৭৩। একাধিক সূত্র জানায়, ভূমিসচিব আতাহারুল ইসলামের কাজে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দুজনই অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁরা এই সচিবকে সরিয়ে দিতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের কাছে অনানুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছিলেন।

এ নিয়ে পত্রিকায় খবরও প্রকাশ পায়। শরফুল আলম ২০০১ সাল থেকে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার একান্ত সচিব ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে আসার পর প্রথমে তাঁকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। বর্তমান সরকার সেখান থেকে সরিয়ে তাঁকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করে। চুক্তি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানকে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য একই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আগামী বছরের ১৭ জানুয়ারি তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। অতীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে এক সপ্তাহ আগে আদেশ জারি করতে দেখা গেছে। কিন্তু এই প্রথম কোনো আদেশ তিন মাস আগে করা হলো। পাশাপাশি ইতিপূর্বে একই সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নজির অনেক থাকলেও একসঙ্গে তিন বছর একই পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাও বিরল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।