বিস্ময় মুছে দিও না...
প্রেম, মৃত মানুষের সংলাপের মতো অবোধ্য ভাষার প্রানহীন মাঠের মতো শূন্যতা বিস্তারি। হৃদয় নামক শব্দের ঊত্থানের নায়কগণ হয়তো না বুঝেই চারণ কবির মতো গেয়ে গেছেন আবেগ আতঙ্কে। " কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে" চিলের ডানার স্বপ্নে বিভোর জীবনানন্দ দাশের অন্তর চেতনা সুদূর পরাহত, ব্যার্থ রোদন। " নিগুঢ় প্রেম কথাটি তাই আজ আমি শুধাই কার কাছে" বলে লালন কী নিজেকেই সান্তনা দিচ্ছেন, নাকি গেয়েছেন প্রবল ব্যার্থতার চাপে, যা মর্মভেদী তরঙ্গ ভঙ্গে সময়কে হেলা ফেলা করে যায় কি এক অবাধ্য বিরাগে।
লালন মিথ্যে বলতেন- যা সত্যের চেয়ে সুন্দর আর সুন্দরের চেয়ে পবিত্র।
আদি আর্যদের কোনো দোষ নেই এমন সাকার পূজায় নিজেদের সপে দেয়ার অপরাধে, যদিও অপরাধ শব্দটা দেখলেই আমার মহামতি আলেকজান্ডরের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে কেমন রক্ত স্রোতের মধ্যে প্রাণের দুর্দন্ড প্রতাপ। হৃদয় কেমনে হন্তারকদের সহায়ক হয়...!!!
কতো বিষ জমে গেছে হিশেব নেই, নেই মধু আর বিষের পার্থক্য- দুটোই পীড়নকামি। প্রেম কি বিষের বাঁশি নাকি গাছের কানে বাতাসের সুর-মন্ত্র। বেঘোর পথ-গলি ঘিরে আমরা প্রত্যহ ডুবে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি বারবার জন্মের তাগিদে। বেঁচে থাকা আর মৃত্যুর মধ্যে কে উত্তম? কার ঘরে প্রেম হয় জীয়নকাঠি? জন্মান্তরকে বুদ্ধিবিভ্রম ভাবলেও আমরা প্রতিদিনই মৃত্যুর স্বাদ পাই।
লালন জীবনকে ভয় করতেন বলেই হয়তো " কী সন্ধানে যাই সেখানে আমি, মনের মানুষ যেখানে" প্রশ্নে নিজেকে প্রবোধ দিলেন। যদিও তিনি চতুরের মধু চুরির প্রশংসা করেছেন ভীষণ ঘৃণার মশাল জ্বেলে।
অতৃপ্তির ভরণ পোষণে প্রেম বেড়ে ওঠে বলে ভাবতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর অন্যদিকে জীবনানন্দ দাশ প্রেমকে মৃত্যুর সহদর ভেবে ট্রামের ফাঁদে পা বাড়ালেন। কী বিভ্রম, কী এক মিথ্যের হিংস্র ছেলেখেলা...!!!
পৃথিবীর সমস্ত পুস্তককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যদি প্রেমের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়, তবে হয়তো মানুষের মুখে মুখে ফুটে উঠবে হাহাকার ধ্বনি- যদিও সব মানুষ কসাইয়ের কাজে নিয়োজিত। ভাড়ামোকে জীবন ভাবা কোনো দোষের কিংবা অবহেলার নয় এ-সংসারে।
ভাড়কে, দাসকে সভার মধ্যমনি করে বেজে গেছে আলেকজান্ডারের বিদায় ঘন্টা। হিটলারি ইচ্ছেটা অন্তরে লালন করলেও তিনি আমাদের কাছে ঘৃণার উপমা। এই তো অস্তিত্বের ভার, এই তো হৃদয়ের বিষাক্ত সোমরস।
" আগে যদি যেতো জানা, জংলা কভু পোষ মানে না...আমি তবেও হায় প্রেম করতাম না, লালন ফকির কেঁদে কয়"। লালনও ব্যার্থ প্রেমিক ছিলেন ভাবতেই নিজের ব্যার্থতাকে একটি রঙিন মেঘের মতো মনে হয়, মনে হয় এইতো জীবন, এইতো নিখুঁত সমীকরণ, এইখানে ফোটে বকুল ঘোরে মাধুকরি পল্লবরাগে, এই দেখো কিংবদন্তি পদ্মজলের পর পর সংকট কালের জয় জয়কার।
এইখানে প্রেম নামে বিপুল আবেগে তমসাচ্ছন্ন সাধকের গুহা মন্দিরে। যদিও মানবিক নির্বুদ্ধতায় গুহা এখন অন্যরূপ ধারণ করেছে, হারিয়েছে নানাবিধ যন্ত্রের খোলসে সঙ্কির্ণ গোলার্ধে- যেনো প্রাণশূন্য খড়তাপে পাগলি মাতার মতো অদিতির মুখোশ্রী।
প্রেমকে ব্যার্থদের পুঁজি ভাবাকে ঘৃণা করলেও অন্তসারশূন্যতার মাঝে নিজেকে কাঙাল রূপেই প্রতিয়মান হয়। নিজেকে বড়ো সংকটে আবিষ্কার করেই ভয় আর লোভকে ঘৃণা করার ভাষাটা আয়ত্বে চলে এসেছে।
ড. আজাদ নিজেকে প্রেমিক বলেননি কখনো।
" আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে" যতোই বলুন আজ আমরা জেনে গেছি, নার্সিসিজম একটা মনোব্যাধি, আত্মপ্রেম স্বার্থপরতা আথবা বিকৃতির সমার্থক।
যদি আর সকাল না আসে, যদি পাখির পালকের উষ্ণতা বিনীময় হয় অফুরান্ত- কী আর হবে? কোন ভ্রমে হৃদয় মন্দির ভেঙে পড়বে? কথার বিষে জীবন পিষে ভবঘুরের স্বাদ জানিনা। জীবনপুরে অসম্পূর্ণ গল্প লিখে আমরা সবাই যাযাবরের স্মৃতি চারণ।
প্রেম যদি বিভ্রম হয়, তবে মাদকের সাহ্নিধ্য ভালোবেসে জীবন হতে পারে ঢুলুঢুলু ঘুমের আবেশ। ঘুমকে মৃত্যু ভাবলে জীবনকে কী বলবে? একি ঠক খাওয়া শিশুর কল্পবিলাস নাকি বিজ্ঞানের অগ্রগামী রহস্য উন্মোচন? আত্মহত্যার চেনা পথে কাব্য গড়ে লাভ-ক্ষতির হিশেব গুলো অচেনা লাগে।
এ-কোন পৃথিবী এখানে কাদের বাস, কে তুমি লাবণ্য? বড়োই অদ্ভুত কী বলো?
আজ রাতকে আরো সুদীর্ঘ সুরঙ্গে তুলে গিলে ফেলবো সমস্ত অন্ধকার প্রাণ বিরাগে। হারিয়ে যাওয়া কবিতার মতো খুব গোপনে সাধক হবো, মন্ত্র ভেঙে মন্ত্র গড়বো চমক খুইয়ে জীবন বোর্ডে আঁকা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঘুচাবার।
০২/১০/১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।