পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী"
আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে এখন সংগঠনের ছড়াছড়ি। কাগুজে এসব সংগঠনের বেশিরভাগই ঠিকানাহীন। দফতর নেই। নেই সাংগঠনিক ভিত্তি ও কাঠামো। জনবল নেই।
সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকলেও প্যাড আছে। আর সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে দখল, তদবির ও চাঁদাবাজি চলছে সমানে। নব্য আওয়ামী লীগার এবং ভুঁইফোড় এসব সংগঠন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের মন্ত্রী, এমপি এবং নেতাকর্মীদের নব্য আওয়ামী লীগার থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এসব সংগঠন সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি।
তিনি এই সংগঠন এবং নব্য আওয়ামী লীগারদের ‘বসন্তের কোকিল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তাদের থেকে সবাইকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে বলেছেন। তারা আওয়ামী লীগের নামে স্যাবোটাজ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সংগঠন করার কোন অনুমোদন কাউকে দেয়া হয়নি। আর এক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
তবে বিভিন্ন সংগঠনের নামে কেউ চাঁদাবাজি, দখল ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সৈয়দ আশরাফ। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহযোগী সংগঠনগুলো হলÑ মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুব লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ এবং যুব মহিলা লীগ। আর স্বতন্ত্র গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ। এই ৯টি সংগঠনের বাইরে আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন নেই। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।
এর কয়েকটির সৃষ্টি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার আগে। বাকিগুলো হয়েছে পরে। সংগঠনগুলোর কয়েকটি হলÑ বঙ্গবন্ধু প্রজš§ লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আওয়ামী মোটরচালক লীগ, চেতনায় মুজিব, আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদ, রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, শেখ রাসেল শিশু পরিষদ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, আওয়ামী তরুণ লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, রিকশা মালিক লীগ, বাস্তুহারা লীগ, আওয়ামী হকার্স লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজš§ লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজš§, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মচারী লীগ, নৌকার নতুন প্রজš§ লীগ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, ’৭৫-এর ঘাতক নির্মূল কমিটি, ২১ আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, জননেত্রী পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবর্তন ফাউন্ডেশন, সিএনআরএস, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, সোনার বাংলা গঠন পরিষদ, সম্মিলিত যুব-পেশাজীবী পরিষদ, পরিবহন শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি প্রতিরোধ কমিটি, প্রজš§ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী সংগঠন, নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযুদ্ধ সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ, অরোরা ফাউন্ডেশন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণমুক্তি আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের কল্যাণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশনের বাইরেও রয়েছে আরও অনেক সংগঠন। কোন অনুষ্ঠান নেই, আয়োজন নেই। কেবল জাতীয় দিবসসহ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে কোন ঘটনার দিন একটি প্রেস রিলিজ পাঠানোই এসব সংগঠনের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আড়ালে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে ভিজিটিং কার্ড ছেপে কিছু ব্যক্তি মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একই ব্যক্তি একটি বা দুটি নয় একাধিক সংগঠনে তার নাম ব্যবহার করছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কয়েকটি সংগঠন তৎপর ছিল। আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট এদের মধ্যে অন্যতম। কেবল আওয়ামী লীগকে ঘিরেই এসব সংগঠনের জš§ হয়নি।
বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন জিয়া পরিবার এবং বিএনপির নামে অনেক সংগঠনের জš§ হয়। কিন্তু এখন সেগুলোর অস্তিত্ব নেই। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর জš§ হয়। আবার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এসব সংগঠন হারিয়ে যায়। আর আকস্মিক গজিয়ে ওঠা এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশি অপকর্ম করেও নিরাপদে থাকে।
আন্দোলন, সংগ্রামে এদের রাজপথে দেখা মেলে না। কেবল ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে এরাই সবচেয়ে বেশি তৎপর। এখন প্রতিদিনই সকাল-বিকাল এসব সংগঠনের ব্যানারে সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হচ্ছে। রাজধানীকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো হল ভাড়াসহ অনেক খরচ করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এই আয়োজনের খরচ আসে কোথা থেকে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আর প্রায় সব অনুষ্ঠানেই সরকারের কোন না কোন মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত হন। এই মন্ত্রী, এমপি এবং নেতাদের ধরেই নানা তদবির চালানো হয়। বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতিয়ে নেয়া, পদক বাণিজ্য করা, চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে তদবিরের মতো অনেক কাজ তারা করিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে জš§ নেয়া সংগঠন সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, যখন দুঃসময় আসবে তখন এসব সংগঠন আর নব্য আওয়ামী লীগারদের হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বেলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরা বসন্তের কোকিল।
আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ বলে এদের অভিহিত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রাজনীতি, প্রশাসন, মিডিয়া সবখানেই এখন কিছু মোসাহেবের সৃষ্টি হয়েছে। এই মোসাহেবরা চাঁদাবাজদের চেয়েও ভয়ংকর। তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ৬ অক্টোবর সংসদ ভবনে সরকারদলীয় সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের যে সভা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে এসব সংগঠন, ব্যক্তি সম্পর্কে সবাইকে হুশিয়ার করে দেন প্রধানমন্ত্রী।
আরো কোন সংগঠনের নাম জানা থাকলে আওয়াজ দিবেন .......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।