দীর্ঘদিন পর ঘরের বাহির হলাম। অণ্ধকার রাত্রিকে আলিঙ্গন করতে তুমুল বৃষ্টি হলো। কারনে অকারনে ভিজলাম। বোনের বাসায় যাচ্ছি,মাকে পরদিন ভোরে রক্ত পরীক্ষার জন্য ডায়াবেটিকস্ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মিথ্যে বলে বলে এড়িয়ে গেছি বহুদিন।
কিন্তু শুক্রবার আর বলতে পারলাম না অফিস খোলা। কিসের অফিস? ঘরে বসে বসে দাড়ি চুল মোচে একাকার হয়েছি। মা জানেনা,আমার কোন অফিস নে ই। দুচোখ বন্ধ আমি শুধু ভাবি কিভাবে কী হলো?সে কিভাবে পারল?আর ভাবলাম ভালবাসার ভারী পর্দা চোখের দৃষ্টিকে কিভাবে বাস্তুবতা থেকে অভাবনীয় বিমুখ রাখে। হায় নারী,তুই-ইতো আমার মায়ের জাত,বোনের জাত, প্রেয়সীর জাত!
গলি পথ থেকে বড় রাস্তায় উঠে ই চোখ আটকে গেল একটা সাইনবোর্ডে,দোকানের সাইনবোর্ড।
মেসার্স লাবনী ইলেকট্রনিক্স। কতবার এই রাস্তায় এসেছি,কতবার বাস রিকশার জন্য দাড়িয়েছি এখানে ,একবারও চোখে পড়েনি। হায় নারী! তুই আজ সাইনবোর্ড হয়ে আমায় উপহাস করিস? মোবাইলটা বের করে ভাবলাম সাইনবোর্ডটার একটা ছবি তুলি। অচেনা বন্ধু যদি এতে ই মুগ্ধ হয়। বন্ধুর মুগ্ধতা যে আজও কিসে বুঝিনি।
যাই হোক,ছবি তুলব ঠিক সে সময়ে ই সাইনবোর্ডের আলোটা নিভে গেল। ব্যাপারটা কি কাকতালীয়? না অন্যকিছু?যাইহোক ভাবতে ভাবতে বাসে চড়লাম। ভাবনার শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে চিটিয়ে আছে আমার জগতময়।
পল্টন মোড়ে এসে হালকা বৃষ্টিতে দাড়ালাম বাসের জন্য। বাস আসেনা।
মোটা ফ্রেমের চশমা পরা পন্ডিত টাইপের একটা লোক দাড়াল পাশ ঘেষে। এই লোকটাও কী সে ঘাতকের মতো স্কুল মাষ্টার?মাথায় পলিথিন মোড়ানো,যাতে বৃষ্টিতে জ্বর না আসে। বেচে থাকার নিদারুন প্রচেষ্টা এদের । লোকটার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম। মনে মনে কষে দুটা গালি দিলাম।
লাবনীও বেচে থাকতে চায়। তাই বাহিরে অস্বাস্থ্যকর খাবার সে খায়না। বেচে থাকাটা সে উপভোগ করছে। চোখের যত্ন নেয়,মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ছে। না পড়লে সোহাগ আর শাসনের হালকা চড় থাপ্পরও খায়।
চোখে কেন প্রবলেম হলো,কম্পিউটারে কি সে একদৃষ্টে মুভি দেখত? তবে আমার কেন মুভি দেখতেও ভাল লাগেনা। আমাদের কত বদলে যাওয়া।
লোকটা খানিকটা পাশের সিটেই বসেছিল। কী বিরক্তিকর । শাহবাগের জ্যামে তার মোবাইলে একটা কল আসল।
বিড় বিড় করে সে তার বউকে বলছিল,এইতো আসছি। তার বউয়ের এতো উৎকন্ঠা কেন? এই লোক তার কে ছিল? এই লোকের কি কোন গার্লফ্রেন্ড ছিলণা,বা নাই? তার বউ কি কাউকে কথা দিয়ে পথে বসায়নি? কারো পৃথিবীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেনি? তো কিসের এত উতলে ওঠা। এই সব স্বার্থবাদী,আপেক্ষিক ভালবাসার কি সমাপ্তি ঘটবেনা? লাবনীও কি কাউকে এরকম জিজ্ঞেস করে ,এ রকম উতলা থাকে? লোকটা বলল,নসিলা? নসিলা আনব? হ্যা,তার বাচ্চার জন্য নসিলা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। লাবনীর কণ্যাও তাই খায়। সেও কি তাই বলে? আমাকেতো কেউ কোনদিন কিছু আনতে বলেনি!জোর করে ও মানুষ কিভাবে মনের দখল নিয়ে নেয়,তাই ভাবছি।
তো প্রেম ট্রেম কিছুনা,ক্ষমতাই সব??
মা বলল,দাড়ি চুল কাডছনা কিল্লাই?
-অফিসে কিচ্ছু কনা হিল্লাই। হরে কাডিয়াম
-হুয়াই গেছস ক্যা। খানার খাছ না ঠিকমত?
-না,এন্নে
-ঘুমাছনা?চোখের তলে কালা ক্যা?
মা জান না,মা। তোমাদের জাত আমায় কথা দিয়েছিল। মা কাদতে ইচ্ছে করছে মা।
হসপিটালে এক ডাক্তারের নাম বোর্ডে লেখা ডাঃ শারমিন জামাল। ঘৃনা করি এ হীনমন্ন্যতাকে । পুরুষের নাম সাথে থাকতে ই হবে?
লাবনী কি একদিন অথবা আজও তার নামের শেষে সেই ঘাতকের নামটি লাগায়?
তার নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটটি আমাকে সে দিয়েছিল। সেখানে স্বামীর ঘরে ঘাতকের নাম লেখা!
বন্ধু তোর কি একটুও কষ্ট লাগেনা? তোর সাথে আমার আত্বার আত্নীয়তা তুই ভুলে গেছিস। কতশত ফরমে তুই হারামির নাম লেখিস।
কেন? ভুলেও কি মনে পড়েনা,আমরা বিয়ে করেছিলাম।
মোবাইলে কখনো নেট ব্যবহার করিনি। বন্ধু করে,আমায় বলে। তাই করলাম। উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে ব্রাউজ করছি আর ভাবলাম,বন্ধু আমায় একদিন এক এডাল্ট সাইটের ঠিকানা বলল।
হায় বন্ধু সে কামুক সময়ে পিঠে চেপে বসা কোন কালহাতিকে তুই কি তাড়িয়ে দিস?
হে সময়,হে কল্পনা,হে পথচলা! নির্ভাবনার একটু মুহুর্ত আমায় দে। একটু ঘুমোতে চাই।
০১৬৭৬৩৭৫০৮০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।