কেবল সমুদ্র পারে শুষে নিতে সব, যা কিছু বিপ্রতীপ, ভেসে আসে নিদারুণ কষ্টের নীলজলে..
“না, আমি আর সামহয়্যারে লিখতে পারবো না সুনীলদা। ... যতোদিন পর্যন্ত প্রথম পাতায় Access না পাই, যতোদিন পর্যন্ত আমার ভাললাগা লেখায় মন্তব্য করার অধিকার না পাই, ততোদিন পর্যন্ত আর কোন নতুন লেখা লিখবোনা...। ’’
বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই অভিমান মাখা স্বরে কথাগুলো বলছিলেন একজন নতুন ব্লগার। যদিও আমি তাঁর কথা উল্লেখ করলাম নতুন ব্লগার হিসেবে, কিন্তু সামহয়্যারে রেজিষ্ট্রেশনের বিচারে সে একেবারে নতুন নয়। প্রায় একবছরের মতো সময় পার হয়ে গেল, সামহয়্যারে সে রেজিষ্ট্রশন করেছে।
অনেকগুলো ভালো লেখাও সে লিখেছে। তাঁর লেখায় মন্তব্যও এসেছে যথেষ্ট। তবুও সে প্রথম পাতায় প্রবেশাধিকার পায়নি। খুব ভালো লেখে বলে আমিই তাকে সামহয়্যারে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। এখন তার প্রথম পাতায় Access না পাওয়া নিয়ে আমি নিজেই কিছুটা বিব্রত।
রেজিষ্ট্রেশন করার সময় সে সামহয়্যারের নিয়মকানুন সম্পর্কে কিছুটা অবগত হয়েছিলো। তাকে বলা হয়েছিল প্রথম কিছুদিন (সম্ভবতঃ সাত দিন) সে সামহয়্যারের অবজারভেশনে থাকবে। তারপর সে অন্যের লেখায় মন্তব্য করার অধিকার পাবে। পাবে প্রথম পাতায় প্রবেশের সুন্দরতম অনুভূতির সোনালী এক চাবিকাঠি।
দিন যায়।
সাত থেকে সাতাত্তর। সাতাত্তর থেকে একশত সাত। কত শত দিন। ... প্রতিদিন প্রতীক্ষার প্রহর গুনে নতুন সেই ব্লগার। সামহয়্যার এখন তার প্রতিদিনের নেশায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন সে মনযোগ দিয়ে অজস্র সব লেখা পড়ে সামহয়্যারের। বেশ কিছু লেখা পড়ে মনের আনন্দে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠে মন্তব্য লেখার জন্য। কিন্তু হায়! মন্তব্য লেখার ঘরে তার জন্য অস্বস্তিকর এক নোটিশ ঝুলে আছে....“আপনি নতুন ব্লগার , আপনি প্রথম পাতায় Access না পাওয়া পর্যন্ত কোন লেখায় মন্তব্য করতে পারবেন না....’’।
“জানেন, এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে কষ্টদায়ক। ... নিজের লেখা না হয় প্রথম পাতায় না-ই গেল, কিন্তু এই যে খুব ভালো লাগা একটা লেখা পড়ে সেই ভালো লাগা অনুভূতির কথাটা লেখককে মন্তব্য লিখে জানাতে পারছি না....সেটাই সবচেয়ে খারাপ লাগে, সেটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী পীড়া দেয়...।
’’ খুব অসহায় ব্যথাতুর এক দৃষ্টি চোখে মেলে দিয়ে Real কষ্টের সঙ্গেই যেন কথাটা বলে ফেললেন নতুন ব্লগার। ....
আমি থমকে গেলাম। আমি নিজেও এতোদিন জানতাম না প্রথম পাতায় Access না পাওয়া নিয়ে নতুন ব্লগারদের যন্ত্রনার স্বরুপ এতোটাই ভয়াবহ। আমি জানতামনা নতুন ব্লগারদের প্রথম পাতায় Access এর সোনালী চাবিকাঠি-টি সাতদিনের কথা বলে কখনো কখনো একশত সাতদিনেও দেওয়া হয়না। ...আমি জানতাম না, এইভাবে অজস্র নতুন ব্লগার সামহয়্যারে যোগ দেবার পর সাড়া না পেয়ে সারাক্ষণ এমন যন্ত্রনায় ছটফট করে!...
আমি এসব কিছুই জানিনা কারণ আমি নিজে সামহয়্যারে রেজিষ্ট্রেশন করেছিলাম ২০০৬ সালে।
তখন খুব সুন্দর একটা সময় গেছে। সুন্দর সব অনুভূতির প্রাণচঞ্চল শব্দমালা নিয়ে আমরা হাজির হতাম সামহয়্যারের স্বর্ণোজ্জ্বল খোলা জানালায়। ...এতো নিয়ম কানুন এর বালাই তখন ছিলোনা..। সামহয়্যারে রেজিষ্ট্রেশন করার সাথে সাথেই প্রথম পাতায় Access পাওয়া যেতো। সেসময়ের সোনালী দিনগুলোর কথা লিখে রেখেছি সামহয়্যার ইন ব্লগঃ আমার যতো অনুভব - শিরোণামের এক লেখায়।
নতুন ব্লগারদের প্রথম পাতায় Access পাবার অধিকারটি কবে থেকে Restricted করা হলো - এটা ভাবতে গেলে কিছু অসুন্দর বিষয়ের কথাই মনে পড়ে। ... আমি সেই নতুন ব্লগারকে সেই অস্বস্তিকর বিষয়গুলোর কথাও জানিয়েছি। জানিয়েছি অন্যকে অপ্রীতিকর মন্তব্য করার প্রয়োজনে একাধিক ‘নিক’ সৃষ্টির প্রবণতা হ্রাসের জন্যই নতুন ব্লগারদের ক্ষেত্রে প্রথম পাতায় প্রবেশে বা অন্যের লেখায় মন্তব্য করার সুযোগদানে এতোটা কড়াকড়ি। ...
শুনে নতুন ব্লগার হাসলেন। ...“সেটা আমি আগেই বুঝেছি।
...কিছুদিন মনযোগ দিয়ে সামহয়্যার পড়লেই এই বিষয়গুলো সহজে বোঝা যায়। কিন্তু যেটা বুঝতে পারিনি তা হলো, একটা নির্দিষ্ট সময় অবজারভেশনে রাখার কথা বলে কেন অযথাই এতো দীর্ঘ কালক্ষেপণ করা হয়? কেন কেউ কেউ বেশ তাড়াতাড়ি আবার কেউ কেউ দীর্ঘ সময় পরে প্রথম পাতায় Access পান? এর জন্য কী কোন নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন নেই? কে কতোদিন ধরে অবজারভেশনে আছেন, তা সঠিক সময়ে মডারেটরকে মনে করিয়ে দেবার জন্য কী সামহয়্যারের ডাটাবেজে কোন অপশন নেই?”
হয়তো আছে, হয়তো নেই, আমি ঠিক জানিনা। শুধু জানি একজন ‘জানা’র কথা । তিনি খুব সুন্দর করে কথা বলেন। তিনি খুব সুন্দর করে সব বিষয় নিয়ে দীর্ঘ বিশ্লেষণ করে কথা বলতে পারেন।
সামহয়্যারের ব্লগারদের পিকনিকে , আড্ডায় অনেকবার তাঁর কথা শুনেছি। তিনি নিজেও কখনো কখনো বলেছেন, অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে অথবা লোকবলের অভাবের জন্যই সবকিছু প্রয়োজনীয় সময়ে দেখা হয়ে ওঠেনা..।
“আচ্ছা, ...তাহলে আমি কী একবার তাঁকে ফোন করবো আপনার প্রথম পাতায় Access এর বিষয়ে ?”
“না ... না... সুনীলদা, কোন প্রয়োজন নেই। কাউকে বলে কয়ে আমি প্রথম পাতায় Access চাইনা। ... দেখিনা অপেক্ষা করে আরো কিছুদিন....।
দেখিনা সামহয়্যার নিজে থেকেই বুঝতে পারে কী না, কেউ তার প্রথম পাতার প্রাঙ্গনে পা ফেলার জন্য কী প্রবল অপেক্ষা করে আছে....!”
শুনে আমি হেসে ফেললাম। বেশ অবাকও হলাম নতুন ব্লগারের সুদৃঢ় সুন্দর অনড় মনোভাব দেখে। ....সত্যিই তো! প্রকৃত লেখকরা কোন বিষয়েই সহজে অন্যের আনুকূল্য নিতে চায়না। নিজের লেখার বিষয়ে তো নয়-ই। ...
তাহলে ? তাহলে কী হবে এখন তাঁর?
সারাদিন ঘুরে ফিরে নতুন ব্লগারের সমস্যার কথাটাই ভাবিয়ে তুললো আমাকে...।
কখন যেন বেদনাময় তার এইসব অনুভূতির কিছু কথা- লিখেও ফেললাম মনের অজান্তেই...
আমি তোমার উন্মুক্ত জানালায়
সাজাতে চেয়েছি সব
শব্দমালা আমার
সযত্নে বহুকাল-
তবু তুমি বন্ধ রেখেছো
স্বপ্নের সোনালী প্রাঙ্গন
তবু তুমি লিখতে দাওনি-
লিখতে দাওনি ইচ্ছে মতো, মন্তব্য আমার
ভালো লাগা প্রিয় সব
সোনালী দরোজায়।
অতঃপর বলার সময় আসছে এই
উন্মুক্ত আকাশেই-
আমার অজস্র ভালো লাগা সমর্পিত করে-
আমার অজস্র প্রশ্নমালা ধেয়ে যায় তোমার দিকেই-
কবে নেবে?...
কবে নেবে প্রথম পাতায়,
প্রিয় সামহয়্যার ইন?...
...............................................................
এই লেখা শেষ করার পরে পরেই জানতে পারলাম, যাকে নিয়ে এই লেখা, তিনি শেষপর্যন্ত অতি সম্প্রতি প্রথম পাতায় একসেস পেয়েছেন।
.................................................
সর্বশেষ এডিটঃ
নাহ! ভুল বলেছি। এইমাত্র জানলাম তিনি এখনো প্রথম পাতায় একসেস পাননি, তবে অতি সম্প্রতি মন্তব্য করার অধিকার পেয়েছেন। ... আমার জানা ছিলোনা যে, 'মন্তব্য করার অধিকার' এবং 'প্রথম পাতায় একসেস'- এই দুইটি বিষয় আবার দুই ধাপে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়.....।
....................................................................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।