ছেলেটির নাম ছিল তুষার। আমাদের তৃতীয় তলায় থাকতো। দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র। সবই ঠিক ছিল কিন্তু সে ছিল শাহরুখ খানের একনিষ্ঠ ভক্ত। কেউ যদি ঐ পিচ্চিটার সামনে শাহরুখকে নিয়ে এতটুকু বাজে মন্তব্য করতো তবেই শেষ, আর রক্ষা নাই।
কেবল নিশ্চুপ ভাবে কিছুক্ষণ বকাঝকা হজম করতে হতো। শুধু বকাঝকা না একদম ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যেত। আরেকটা ছেলে আছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার কেভিন পিটারসনের ভক্ত । কেভিন পিটারসন যখন অফফর্মে থাকে তখন সে রীতিমত মান্নত করে যেন সে ফর্মে ফিরে আসে। আসলে আমাদের মাঝে এমন কিছু মানুষ আছে যারা তাদের পছন্দের মানুষটার জন্য সব কিছুই করতে পারে।
এমনকি নিজের মূল্যবান জীবনটাও দিতে দ্বিধা করে না। বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ যখন মারা যান তখন অনেক তরুনীর আত্মহত্যার খবরও শোনা গেছে। এরা যে কেমন ভক্ত তা অনুধাবন করতেও কষ্ট হয়।
শফিউর রহমান ফারাবী তেমনিই একজন মানুষ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে যখন কেউ কটু কথা বলতো তখন সে সেখানে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করতো। মূলত ব্লগে যখন নাস্তিকগুলোর সুদিন চলছিল তখন ফারাবী একাই তাদের সাথে যুক্তি তর্ক দিয়ে লড়াই কতে যেত। এজন্য বিভিন্ন ব্লগে তাকে ব্যান করা হয়, হেয় করা হয়। তারপরও সে তার সাধ্যমত লেখা লিখে যেত। ব্যক্তি জীবনে সে কেমন তা আমার জানা নেই।
তবে অনলাইনে সে নাস্তিকগুলোর মত এতটা লাগামহীন ছিল না। অনেকটাই মার্জিত ছিল। যদিও মাঝে মাঝে কিছু বিষয় নিয়ে লিখে তিনি নিজেই হাসির পাত্রে পরিনত হয়েছিলেন, তারপরও একজন সাধারণ ব্লগারের মতই ভূলত্রুটি নিয়ে তিনি লিখে যেতেন।
“থাবা বাবা”র মৃত্যুর পর তার যেন জানাযা আদায় করা না হয় সে জন্য ফারাবী ফেসবুকে জোর দাবী তোলে। আমি নিজেও ফেসবুকে থাবার জানাযার বিরোধীতা করি।
তারপরও একজন স্বঘোষিত মুরতাদের জানাযা আদায় করা হয়। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ফারাবী। সে উত্তেজিত হয়ে ফেসবুকে জানাযা আদায়কারী ঐ ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়। ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে হুটহাট কিছু কাজ বা মন্তব্য করে ফেলি যার জন্য পরে নিজেরাই অনুতপ্ত হই।
এই সেদিন এলাকার এক মার্কেটে দুই দোকান মালিক সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে ফেলে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে একজনতো আরেকজনকে “কু** বাচ্চা তোরে আমি জানে মেরে ফেলবো” বলেও থ্রেড দেয়। পরে অবশ্য মার্কেট কমিটির লোকজনের হস্থক্ষেপে এরা শান্ত হয়। মূলত এখানে আমি বলতে চাচ্ছি অনেক সময় আমরা হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে হুট করে নিজের আপনজনদেরও মারাত্মক ভাবে আক্রমণ করে বসি, সেটা মৌখিক বা শারীরিক দুভাবেই হতে পারে। আর আমি বলছিও না এটা করাটা দোষের কিছু না।
অবশ্যই এটা অন্যায়। তবে অন্যায়ের তুলনায় সাজাটা বেশি হয়ে গেলে সেটাও আরেকটা অন্যায়। স্রেফ উত্তেজনার বশে একজন আরেকজনকে “কু** বাচ্চা তোরে আমি জানে মেরে ফেলবো” বললেই তাকে ধরে রিমান্ডে নেয়া আর দিনের পর দিন জেলে বন্দী করে রাখাটা কতটা যৌক্তিক তা আমি বুঝি না। যেখানে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনি আসামীদের হত্যার মত অপরাধ ক্ষমা করে রাষ্ট্র তাদের মুক্তি দিচ্ছে সেখানে ফারাবীকে সামান্য একটা মন্তব্যের জন্য আটকে রাখা হচ্ছে। আবার সবব্লগারদের মুক্তি চাই বলে যারা গলা ফাটিয়ে ফেলছে তারা আসিফ, আল্লামা শয়তান, দাঁড়িপাল্লাদের কথা বললেও ফারাবীর কথাটা একবারের জন্যও বলে না।
(মনে হয় ফারাবি তাদের মত চটি লেখক না বলে তাকে ব্লগার হিসেবে গন্য করা হয় না। )
২ জন জামিনে ছাড়া পেয়েছে, জানি আগামীতে বাকি ২ জনও ছাড়া পাবে, কিন্তু ফারাবীকে ছাড়া হবে কিনা সেটাই জানি না। কারণ ফারাবীর মুক্তি চাই বলে কেউতো আর রাস্তায় বের হবে না। তাই আমি না হয় একাই বললাম “চটি লেখক না, ব্লগার ফারাবীর মুক্তি চাই…” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।