বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন পদ্ধতির (এমএলএম) ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরও ৩৮টি কোম্পানির কার্যক্রম বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে দুই দফায় বিলুপ্ত করা হয়েছিল ৩৭টির কার্যক্রম। সব মিলিয়ে বিলুপ্ত এমএলএম কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়াল এখন ৭৪।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো) সম্প্রতি এ বিষয়ে চারটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বিলুপ্ত কোম্পানিগুলোর তালিকাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রেজসকো।
যোগাযোগ করলে রেজসকোর নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্য প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ৩৪৬(৩) ধারা অনুযায়ী, রেজসকোর নিবন্ধন বই থেকে নাম কেটে দেওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান রেজসকোর নিবন্ধক।
এ দফায় বিলুপ্ত কোম্পানিগুলোর তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মধ্যে পরিবহন খাতের কোম্পানি ও আবাসন খাতের কোম্পানিই বেশি। পরিবহন খাতের কোম্পানিগুলো হচ্ছে ফ্রেন্ডস ক্যাব লিমিটেড, রেইজিং বাংলা ক্যাব, বাজেট ক্যাব, অটোস্ক্যান ক্যাব, ওয়েলকাম ক্যাব, ক্যাব বাংলা, উইলো ক্যাব, ক্যাব খুলনা, পথিক ক্যাব, ওপেনওয়ে বাংলাদেশ ও কেয়ার ট্রান্সপোর্ট ক্যাব।
অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে কপোতাক্ষ মার্কেটিং কোম্পানি, সিএমএস ইন্টারন্যাশনাল, বিডিলিংক সিস্টেমস, সানল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোপার্টিজ, শাহানা এক্সপ্রেস, আল-বারাত কমিউনিকেশনস, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, ইন্টারমিনেট সার্ভিসেস, ম্যাজিকবাংলা টেলিমিডিয়া, শেখ ব্রাদার্স শিপিং করপোরেশন, লাইফটাইম কনসেপ্ট, সেলফ ড্রিম, স্পাইডারস নেট ওয়ার্ল্ড ট্রেডার্স লি., ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন টেকনোলজি সলিউশন লি., সরকার অর্গানিক শ্রিম্প সার্ভিস সেন্টার লি., উইস্টার্ন স্টিচ (বিডি) লি., সুইস ডিসিহাইফেলি ফ্যাশন লি., ফ্যামিলি মার্ট সুপারশপ লি., অ্যাপার্টমেন্ট মার্কেটিং লি., কৃষ্ণচূড়া লি., অ্যাসুরেন্স (বিডি), টার্গেট নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, পারফেক্ট গেটওয়ে বাংলাদেশ, পেন্টা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, আইডিয়া মার্কেটিং করপোরেশন, শেফা টপস ও গ্লোবাল ২০২০ মার্কেটিং।
তবে কোম্পানি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও কোম্পানি আইনের ৩৪৬(৫) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পরিচালক বা সদস্যের কোনো ধরনের দায়-দেনা থাকে, তাহলে সেটি অব্যাহত থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দুই দফা পরিদর্শন করে কোম্পানিগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ার পরই সরকার এগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। জানা গেছে, আইনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোম্পানিগুলো রেজসকোতে রিটার্ন বা বিবরণী দাখিল করেনি।
বিলুপ্তির জন্য আরও কয়েকটি কোম্পানি পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান রেজসকোর নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্য।
পরিবহন ও আবাসন খাতের কোম্পানিগুলো কীভাবে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা করছে, জানতে চাইলে রেজসকোর কর্মকর্তারা জানান, তারা মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে গাড়ি কেনার কথা বলে এবং মাসে মাসে মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
আর আবাসন খাতের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি হচ্ছে এককালীন বা মাসিক ভিত্তিতে অর্থ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় শেষে ফ্ল্যাট বা প্লট দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসায়ের দিন শেষ হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ আর এই পদ্ধতির ব্যবসায়ে আস্থা রাখতে পারছে না। এমএলএম আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকে এ বিষয়ে মতামত এসেছে।
তার পরও এমএলএম আইন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, আইন না থাকারই সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কিছু এমএলএম কোম্পানি।
সরকারের দায়িত্ব তাই আগে আইন প্রণয়ন।
বাণিজ্যসচিব বলেন, প্রতারণা বন্ধেই আইন করা হচ্ছে। আইন পাস হলে কোনো ধরনের পিরামিডসদৃশ কার্যক্রম আর চলতে পারবে না। অদৃশ্য বা অলীক কোনো পণ্য নিয়েও ব্যবসা করা যাবে না।
ডেসটিনি ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী, মসজিদের ইমাম, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং গ্রাম্য মাতব্বরসহ সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কৌশলে ও লোভ দেখিয়ে ব্যবসায় জড়িয়ে ফেলে এমএলএম কোম্পানিগুলো।
যে এমএলএম আইন করা হচ্ছে, তাতে কারা এমএলএম ব্যবসা করতে পারবে আর কারা পারবে না, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে এমএলএম কোম্পানির নেতিবাচক কার্যক্রমের কারণে চীনে দাঙ্গা হয়েছিল। চীন একটি এমএলএম আইন করলেও এতে চিকিৎসক, শিক্ষক, বিচারক, ছাত্রছাত্রীসহ সমাজে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ও পেশাজীবীরা এই ব্যবসা করতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।