আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৪ বছর পর ক্ষমতায় নওয়াজ, সামনে নানা চ্যালেঞ্জ

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ঘোষিত বেসরকারী ফলে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) আবার দেশটির ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। দলটির প্রধান নওয়াজ শরিফ তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
পাকিস্তানের ইতিহাসে নওয়াজই প্রথম তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনাও চলছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর নওয়াজকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

কারণ, লাগাতার বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে শুরু করে তালেবান তৎপরতাসহ নানা সমস্যা সামনে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছেন তিনি।
নওয়াজ নিজেও নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শেষ দিনগুলোতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানা সমস্যাকে ‘বিশাল চ্যালেঞ্জ’ বলে স্বীকার করেছিলেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী হামলার ১২ বছর পর ক্ষমতায় আসার কারণে নওয়াজের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুমুখী। কারণ, এ কয়েক বছরে বিশ্ব রাজনীতিসহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটটাও অনেকখানি বদলে গেছে।
নওয়াজ ইতোমধ্যেই বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে সহায়তা বন্ধ করবেন।

আবার তালেবান এবং আলকায়েদার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাবেন কিনা সে সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। জঙ্গিদের প্রতি তার নমনীয় মনোভাবের কারণে দেশে উগ্রপন্থীদের সামাল দেওয়া এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা তাঁর জন্য সমস্যাশঙ্কুল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। নওয়াজের ইসলামিক মূল্যবোধ পশ্চিমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, ১৯৯১ সালে তিনি শরিয়া আইনকে দেশের সর্বোচ্চ আইন করতে চেয়েছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের শুরু থেকে এখন বিশ্বের অন্যতম সন্ত্রাস কবলিত দেশে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান।

প্রতিদিনই তালেবান হামলায় মানুষ মরছে। কাবুলের সঙ্গে চলছে ইসলামাবাদের নানা টানাপড়েন। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব প্রায় প্রতিদিনই ক্ষুন্ন হচ্ছে মার্কিন চালক বিহীন বিমান (ড্রোন) হামলায়।
ফলে নওয়াজ শরীফ যখন ক্ষমতা ছেড়েছিলেন তখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পাকিস্তানের পরিস্থিতির মিল নেই। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতির মধ্যে এবারের নির্বাচনে শক্তিশালী দল হিসাবে উঠে এসেছে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই ইনসাফ বা পিটিআই।

আর তৃতীয় শক্তি হিসাবে আছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি। সেক্ষেত্রে নওয়াজকে পার্লামেন্টে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে। আগামী দিনগুলোতে মোকাবেলা করতে হতে পারে ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা ইমরানকে। ইমরান ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি নওয়াজের সঙ্গে জোট করবেন না বরং তিনি দুর্নীতিমুক্ত নতুন পাকিস্তান গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগুবেন।
শাসনক্ষমতায় চ্যালেঞ্জের এ হুমকি ছাড়াও পাকিস্তানে রয়েছে বেলুচিস্তানের নানা সঙ্কটসহ মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট বিশেষ করে বিপর্যস্ত জ্বালানি খাত।

জাতীয় পর্যায়ে জেঁকে বসেছে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি। দেশকে দুর্নীতি মুক্তকরা এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একগাদা সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে নওয়াজকে। নিতে হতে পারে সরকারের ব্যয় ৩০ শতাংশ কাটছাঁটের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপও।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় নওয়াজ পাকিস্তানিদের ভাগ্যে রাতারাতি পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার করার কারণে এখন শরিফ কী করেন ভোটাররা সে দিকেই তাকিয়ে থাকবে৷তার ওপর এটি নিঃসন্দেহে এক ধরনের চাপ।
তাছাড়া, নওয়াজের জন্ম লাহোরের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে তিনি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারেন৷ এতে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কোন্নয়ন হতে পারে৷কিন্তু মনমোহন দু’দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সূচনার যে আশা প্রকাশ করেছেন তা বাস্তবায়ন করতে হলে বাড়তি চাপ নিয়েই এগুতে হবে নওয়াজকে।

১৯৯৯ সালে সেনাপ্রধানের পদ থেকে পারভেজ মুশাররফকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টার কারণেই নওয়াজকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল। আর তাই পাকিস্তানের বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে হলে আবারো ওই ভুল না করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে তাকে, বিশেষ করে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে। কারণ, পাকিস্তানে এবারই প্রথম এক নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেক নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হলেও শরীফকে প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। তিনি কীভাবে এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যান তাই এখন দেখার বিষয়।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।