Mahmood Khan
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নতুন একটি পরিসেবা চালু করেছে রাজধানীতে। ‘ও পুলিশ, ও বন্ধু আমার’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় এখন থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করা যাবে ঢাকার থানাগুলোতে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, সহজে কেউ থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হতে চান না। তাছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে সময় এবং দূরত্বও একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় পুলিশের সাহায্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে থানা-পুলিশের পরিসেবা পাওয়ার বিষয়টা নিঃসন্দেহে আধুনিক, ঝক্কি-ঝামেলামুক্তÑ সর্বোপরি ‘মেঘ না চাইতেই জল’-এর মতো ঘরে বসেই সেবাপ্রাপ্তি।
দুই মাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরা থানায় এ কার্যক্রম চালু হলেও ইতিবাচক অভিজ্ঞতার আলোকে ডিএমপি এ সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আপাতত পাসপোর্ট, সনদপত্র, পরিচয়পত্র, চেকবই হারানোসহ ছোটখাটো ছিনতাই, গৃহকর্মী-দারোয়ানের পালিয়ে যাওয়া, ভাড়াটে সংক্রান্ত তথ্য, প্রবাসীদের সমস্যা ইত্যাদি সাত ধরনের বিষয়ে জিডি করা যাবে বলে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ এও বলেছে, খুব জরুরি নয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশি সহায়তার প্রয়োজন নেইÑ আপাতত অনলাইনে এ ধরনের বিষয়েই কেবল জিডি করা যাবে। তাৎক্ষণিক পুলিশি সহায়তার প্রয়োজন হলে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে ফোনে অথবা সশরীরে থানার সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর প্রতিটি থানায় দৈনিক গড়ে প্রায় দেড় হাজার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অ্যান্ট্রি হয়।
এর মধ্যে ব্যস্ততম থানাগুলোতে কোনো কোনোদিন সাধারণ ডায়েরির সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যায়। অনলাইন পদ্ধতি চালু হলেও রাজধানীর থানাগুলোতে হাতে লেখা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পদ্ধতিও চালু থাকবে। সূত্র জানায়, প্রতিদিন সাধারণ মানুষ হারানো সংক্রান্ত কারণ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করে থাকেন। এ ছাড়া পুলিশের ডিউটি বণ্টন ও অস্ত্র জমা দেয়া-নেয়া সংক্রান্ত কাজেও থানায় জিডি অ্যান্ট্রি হয়ে থাকে। এসব সাধারণ কাজে হাতে লেখা জিডির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
জিডি এবং মামলার মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা না থাকায় আইনগত জটিলতা বাড়তে পারে এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানার ওসি শাহ আলম বিপিএম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুললে পারলে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। সাধারণ ডায়েরির তদন্তভার কোন কর্মকর্তাকে দেয়া হবে সে বিষয়টি মূলত প্রতিদিন রাতে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অনলাইনে জিডির তদন্তের বিষয়টিও রাতে নির্ধারণ করা হবে। রমনা জোনের ডিসি কৃষ্ণচন্দ্র রায় জানান, যেসব থানায় কম্পিউটার নেই সেসব থানায় জোনাল উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তাদের কম্পিউটারে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, অনলাইনে সাধারণ মানুষের জন্য এ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দেয়ায় সাধারণ ডায়েরির যথেচ্ছ ব্যবহার হবে।
আর তদন্ত করতে গিয়ে বাড়তি ঝামেলায় পড়বে পুলিশ। তবে এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক জানান, প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে তা কেটে যাবে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় আইনি সেবা পৌঁছে দিতে এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডিএমপি হেড কোয়ার্টার ডিসি হাবিবুর রহমান জানান, মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তো কেবল কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং নথিপত্রসহ যে কোনো কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা এবং ব্যবস্থা গ্রহণই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। অনলাইনে জিডির ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে কাজ করতে হবে প্রতিটি থানা-পুলিশকে।
একই সঙ্গে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে কেউ যেন কাউকে ব্ল্যাকমেইল অথবা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্তা ও হয়রানি করতে না পারেÑ সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। যে ব্যক্তি জিডি করবে অবশ্যই তার পূর্ণ নাম-ঠিকানা তথা বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানাসহ প্রয়োজনে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিতে হবে। মোট কথা, এই আইনি অবাধ সুযোগ যেন হিতে বিপরীত না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই তথ্যপ্রযুক্তি রাজধানীর সব থানাসহ দেশের সব থানা ও পুলিশি কার্যালয়কে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা গেলে সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ উপকৃত হবে দেশবাসী। তবে অনলাইন জিডি করতে হলে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইট http://www.dmp.gov.bd-এ প্রবেশ করলে Citizen Help Request নামে একটি লিংক পাওয়া যাবে।
লিংকটিতে ক্লিক করে অনলাইনে জিডি সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করার তালিকা আসবে। যে ধরনের তথ্য দিয়ে জিডি করতে চান তা নির্বাচন করতে হবে। এবার তথ্য পূরণ করার খালি বক্স আসবে। তথ্যাবলি যথাযথ পূরণ করে ঝঁনসরঃ বাটনটি চাপলে সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছে যাবে আপনার তথ্য। আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি শনাক্তকরণ নাম্বার পাবেন।
নাম্বারটি সংগ্রহ করুন। আপনার সাধারণ ডায়েরি বা জিডির কপি পেতে পরবর্তী সময়ে নাম্বারটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করুন। চাইলে আপনার কোনো মতামত নিয়ে সরাসরি পুলিশের ঠিকানায় মেইলও পাঠাতে পারবেন। আর ফ্যাক্স করতে পারবেন ৮৮০-২-৯৫৫৮৮৮ নাম্বারে। আর জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল করতে পারেন ০১৭১৩৩৭৩১০৯।
সংগ্রহ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।