প্রত্যেকটি মানুষকেই একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। শেষ বয়সে সে মৃত্যু যেন আদরের সন্তানের মুখ দেখে হয়। এটাই কমনা থাকে প্রত্যেকটি বাবা-মায়ের। কিন্ত সে আশা পূরন হয়নি কুলসুম বিবির। মাত্র কয়েক দিন আগে ছেলের অত্যাচারে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেয়া কুলসুম বিবি প্রবীণ দিবসে আপন জনের অপেক্ষায় থেকে না ফিরার দেশে চলে গেলেন।
আদরের সন্তান মায়ের লাশটিও দেখতে আসেনি। এ কেমন সন্তান?
কেটে গেল আরো একটি প্রবীণ দিবস। এইদিনও কুলসুম বিবি কাছে পাননি তার আদরের সন্তানদের। গত বৃহস্পতিবার প্রবীণ দিবসে বৃদ্ধাশ্রমে অন্যের সন্তানের মুখ দেখে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন তিনি। কি আশ্চর্য ! মৃত্যুর খবরে ঠিকই লাশ দেখতে এলো তার একমাত্র বিত্তবান পুত্রের শিশু পুত্র ও কন্যারা।
তাহলে কি মায়ের মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিল তারা? কুলসুম বিবির মতো বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটাচ্ছেন এমন অনেক মা-বাবা। তাদের অধিকাংশের সন্তান আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। প্রবীণ দিবসে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেয়া কোন মা-বাবাকেই সন্তানরা দেখতে আসেনি। খোঁজ নেয়নি তাদের। জানতে চায়নি মা তোমার শরীর কেমন? বাবা তোমার শারীরিক অবস্থার খবর কি? তবে এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখতে এসেছিলেন বিত্তবান সমাজের অনেকেই।
তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তাদের সন্তান এবং নাতি নাতনীদের। বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা অন্যের সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের বুকে জড়িয়ে ধরে আপনজনকে কাছে না পাওয়ার বেদনা ভুলে কেঁদে উঠেছিলেন।
প্রবীণ দিবসে গাজীপুরের মনিপুর বিশিয়া বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল ‘গেট টুগেদার’ এবং বিশেষ খাবারের। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেয়া ১০৫ বছরের কুলসুম বিবি সকালে ঘুম থেকে ওঠে আপনজনের সঙ্গে দেখা হবে এমন আশায় বসে ছিলেন। ভেবেছিলেন তার সন্তানরা দেখতে আসবে।
ঘুম থেকে উঠে কুলসুম বিবি অপর বাসিন্দার নিকট এই তথ্য জানান।
কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও কেউ আসেনি। কুলসুম মনের কষ্টে খেতে গেলেন বৃদ্ধাশ্রমের খাবার ঘরে। হঠাৎ বুকে ব্যথা ওঠে ঘটনাস্থলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। খবর দেয়া হলো নারায়ণগঞ্জের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ছেলেকে।
লাশ দেখতে আসেনি একমাত্র ছেলে। মেয়ে ও নাতী-নাতনীরা এসেছেন লাশ দেখতে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই আদরের ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ছাড়তে হয় কুলসুম বিবিকে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধাশ্রমে।
জানা গেছে, কুলসুম বিবি এক ছেলে এবং তিন কন্যার জননী।
তার বাড়ি গাজীপুরের পুবাইলে। কুলসুম বিবির স্বামী মারা যাওয়ার পর পরম মমতায় তিনি তার সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করেছেন। ছেলে মেয়েরাও সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তবে তাদের সংসারে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধা মায়ের। আপনজনদের মানসিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে মৃত্যুর কদিন আগে বৃদ্ধাশ্রমে আসেন কুলসুম বিবি।
এমন সন্তানের কাছে যেন তার মৃত্যু না হয়। এই প্রার্থনাই যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে করেছিলেন। বৃদ্ধাশ্রমের রেজিস্টারে নাম ঠিকানা লেখার সময় এক ছেলে ও তিন কন্যা থাকার পরও কুলসুম বিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেন, তার কোন সন্তান নেই। এ দুনিয়ায় তার আপনজন বলতে কেউ নেই। রেজিস্টারে এই তথ্যই লেখা ছিল।
কয়েকজন বৃদ্ধা বলেন, আমাদের তো আপনজন বলতে কেউ নেই, বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারাই তাদের আপনজন। কুলসুম বিবির মৃত্যুতে বৃদ্ধাশ্রমের এই বৃদ্ধারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।