যাদের সন্তানের কাছে বেশী কিছু চাওয়ার নেই। শেষ বয়সে আদরের সন্তানের কাছে এক সাথে, একই ছাদের নীচে সুখ-দুঃখ ভাগ করার ইচ্ছা নিয়ে প্রতিটি পিতা-মাতা প্রহর গুনে। কিন্ত অনেকেরই সেই সন্তানের কাছে আশ্রয় না হয়ে আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এ কেমন নিয়তি?
কলম সৈনিক নূরুল ইসলাম (৮২) সংবাদপত্রে চাকরি জীবনে কত অসহায় মানুষের জীবন কাহিনী লিখেছেন। তার সহযোগিতা ও লেখনির মাধ্যমে কত মানুষ ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
তিনি কোনদিন ভাবেননি বৃদ্ধ বয়সে আপনজনের বোঝা হবেন। কোনদিন ভাবতেও পারেননি জীবনের অন্তিম সময়ে এতটা ছন্নছাড়া হবেন । চাকরি জীবনে কত লোক তার কাছে আসতো, আপনজনরা কতই সম্মান করতো। বাড়িতে একটু দেরি করে ফিরলে তাকে কৈফিয়ত দিতে হতো। আরও কত আদর-যত্ম, তা তিনি বলে শেষ করতে পারছেন না।
তাই জীবনটা আজ সাংবাদিক নূরুল ইসলামের কাছে মনে হচ্ছে কঠিন, বাস্তবতার ইট-সুরকির ইমারত। জীবনের শেষ বেলায় নূরুল ইসলামের শেষ ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রমে হবে, এটা তার নিয়তির লিখন বলে অঝোরে চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে থাকেন। ঐ সময় তিনি ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি ও গাজীপুর সংবাদদাতা মজিবুর রহমানকে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই লাইন কবিতা-‘যৌবনের শেষে শুভ্র শরৎকালের ন্যায় একটি গভীর প্রশান্ত প্রগাঢ় সুন্দর বয়স আসে, যখন জীবনের ফল ফলিবার এবং শস্য পাকিবার সময়,’ বলে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ফেলেন। এক পর্যায়ে বলে উঠেন, আপনজন থেকে পর ভাল, পরের চেয়ে বৃদ্ধাশ্রম শ্রেয়।
গাজীপুর মনিপুর বিশিয়া বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১০৪ জন বৃদ্ধের সঙ্গে সাংবাদিক নূরুল ইসলাম একজন।
তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সংবাদপত্র জগতে সুনামের সঙ্গে চাকরি করেছেন। তার ভাষায় সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ বলে বুদ্ধিজীবী, সরকার, সুশীল সমাজসহ সকল পেশার মানুষ টাইটেল দিয়ে থাকেন। সেই দর্পণের নিষ্ঠা ও আদর্শের সৈনিকরা বৃদ্ধ হলে সমাজ দুঃস্থ বলে অবহেলা করে থাকে। ঐ সমাজের তারা অবহেলিত। অন্তিম সময়ে আপনজন দ্বারা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে নাড়িছেঁড়া ধন ছেড়ে বের হয়ে পড়েন।
পরে ঠাঁই পেলেন হৃদয়বান ব্যক্তি খতীব আব্দুল জাহিদ মুকুল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বৃদ্ধাশ্রমে। এখানে এসে দেখেন উল্টো ব্যবস্থা। আপনজন অন্তিম সময় সেবা-যত্ম ও সম্মান না করলেও বৃদ্ধাশ্রমে সবই পাচ্ছেন নূরুল ইসলাম। আপনজনের নিপীড়ন ও নির্যাতনের কথা তিনি ভুলে গেছেন।
নূরুল ইসলাম বলেন, তার একমাত্র পুত্রের আশায় ঈদুল ফিতরের সময় বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় সারাদিন পায়চারি করেছেন।
কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি। ঈদের দিন তার কাটে চোখের জলে। ঈদের দিন চিরদিনের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রমের মনোরম ও ছায়াঘেরা পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত কবরস্থানের পাশে গিয়ে কিছু সময় কাটান। এখানে চিরদিনের মত সকলকে ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকতে হবে। কেউ তার সঙ্গে যাবে না।
এই কথা ভেবে তিনি পুনরায় থাকার কক্ষে ফিরে আসেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।