দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট ও তার সমাধান প্রসঙ্গে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের কজন প্রতিবেদক। বিশেষ করে তাদের মত জানতে চাওয়া হয়েছে কীভাবে আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করা সম্ভব? কীভাবে রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করা যাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তারা সবাই দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দুই শীর্ষ নেত্রীর মধ্যে সংলাপ ছাড়া সংকট সমাধানের কোনো বিকল্প নেই বলে সুদৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন দুই দলের সুমতি প্রার্থনা করেছেন। স্বনামখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, সুস্থ মস্তিষ্কে সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের অভিমত : দুই দল অনড় থাকলে সংঘর্ষ অনিবার্য।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরীর বক্তব্য : সংলাপ ছাড়া সমাধানের কোনো বিকল্প পথ নেই।
সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক আহমদ সেলিম রেজা,
জুলকার নাইন,
বাদল নূর এবং জিন্নাতুন নূর
দুই দলের সুমতি প্রার্থনা করি- ড. কামাল
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সুমতি প্রার্থনা করছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন দুই দলের নেতাদের মানসিক সুস্থতা দান করেন। যাতে তারা দলীয় স্বার্থের ঊধের্্ব উঠে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ও জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা যেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সুমতি দেন, যাতে তারা দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার পক্ষে কাজ করতে পারেন।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন এ প্রার্থনা করেন। আমরা জানতে চাই, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় আগামী সংসদ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দায়িত্বে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, শেখ হাসিনার অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আপনি কী মনে করছেন? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনবিদ ড. কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্র কার্যকর রাখতে হলে জনগণকে সচেতন হতে হবে।
জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। তৃণমূল থেকে গণতন্ত্র কার্যকর করতে হবে। অসুস্থ ও দুর্নীতিবাজ লোক দিয়ে সুস্থ রাজনীতি হয় না। সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকে না। এ জন্য আমি বার বার বলে আসছি, সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার জন্য ভোটের সময় জনগণকে সুস্থ ও সৎ লোক বেছে নিতে হবে।
কিন্তু লোকেরা কেন যে আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় জানি না। সৎ বা যোগ্য লোক নয়, মার্কা দেখে কেন যে দুর্নীতিবাজদেরই লোকেরা ভোট দেয়- বুঝি না। কার্যত এভাবেই কালো টাকা ও পেশি শক্তির কাছে বর্তমান ভোট ব্যবস্থা আজ জিম্মি হয়ে পড়েছে। ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, কালো টাকা ও ভোটের রাজনীতি অব্যাহত রাখতেই লোকেরা নানাভাবে দুর্নীতি করে টাকা বানায়। ভোটের সময় কোটি টাকা খরচ করে।
ভোটের পর আবার দুর্নীতির মাধ্যমে সে টাকা সুদে-আসলে তুলে নেয়। ফলে দেশ ও জাতির কল্যাণের রাজনীতি আর থাকে না। জনগণের স্বার্থে দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের কোয়ালিটি রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব দলেই কম-বেশি অনেক কোয়ালিটিসম্পন্ন লোক আছে। তাদের সামনে এনে দেশে এখন কোয়ালিটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দলীয় স্বার্থে নয়, গণতন্ত্রের স্বার্থে বর্তমান ভোট ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান আরও বলেন, আমরা দেখলাম নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রয়োজন। আমরা দেখছি, আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আইনানুগ ও স্বচ্ছভাবে জাজ নিয়োগ না দিয়ে পাইকারি ও দলীয়ভাবে নিয়োগ চলছে। এসব অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
প্রশাসনে দলীয়করণ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। মোটকথা, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, পাকিস্তান আমলে আমরা যারা রাজনীতি শুরু করেছি, তারা রাজনীতি করেছি পাকিস্তানের ২২ পরিবারের শোষণ ও লুটপাটের বিরুদ্ধে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন আজ বিলীন হতে চলছে।
দিন দিন জনগণের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের তত্ত্বের মতো সামাজিক বৈষম্য আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সমাজের এলিটরা শ্রেণী স্বার্থ রক্ষার জন্য একে-অন্যের বিরুদ্ধে বলছে। কিন্তু বৈষম্য নিরসনে কেউ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে না। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশে আদৌ কোনো নির্বাচন হবে কিনা, না হলে দেশ কোন পথে যাবে জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, নির্বাচন হবে না কেন? হতে হবে। নির্বাচন না হলে তো দেশে গণতন্ত্র থাকে না। থাকবে না।
সুস্থ মস্তিষ্কে সমস্যার সমাধান করতে হবে- ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
দেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে সংসদ বা সংসদের বাইরে দুই নেত্রীকে সাহস করে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সংলাপ বা অন্য যে কোনোভাবে সমঝোতা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, প্রধান দুই দলের অংশগ্রহণেই একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে না গিয়ে সুস্থ মস্তিষ্কে, সুস্থভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য অবশ্যই দুই দল গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু এখনো এই শেষ সময়ে ক্ষমতাসীন দল যতটা একরোখা অবস্থানে আছে তা চলতে পারে না।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তা চলতে থাকলে দেশের জন্য খুবই দুঃসময় অপেক্ষা করছে।
ওয়ান-ইলেভেনের অভিজ্ঞতা থেকে বলাই যায়, সেটা হবে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এখন দুই নেত্রী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও এর নেতাদের একটা বৈঠক অনুষ্ঠান খুবই জরুরি, তা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই হোক বা বিরোধী দলই ডাকুক। এই বৈঠক করে পরিস্থিতির আশু সমাধান এবং মোকাবিলা করা দরকার। রাজনীতিবিদ- যারা সত্যিকারের রাজনীতিবিদ, তাদের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, সামান্য বিষয় নিয়ে এই দেশের মানুষ এত বেশি সেনসেটিভ হয়ে পড়ে, কোনো একটি ইস্যু পেলেই তা নিয়ে হৈচৈ-হুল্লোড় শুরু করে দেয়।
এটা দেশের জন্য ভালো নয়। কারও জন্যই ভালো নয়। সুস্থ মস্তিষ্কে সুস্থভাবে সমস্যার সমাধান করা উচিত।
দলীয় বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ইস্যুতে শেষ মুহূর্তেও দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান সম্পর্কে এই বিশিষ্ট আইনজীবী বলেন, যে অবস্থা চলছে, তা চলতে থাকলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।
কারণ গণতন্ত্র ছাড়া তো দেশের কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেই হবে। বর্তমান দুনিয়ায় গণতন্ত্র ছাড়া কোনো বিকল্প পন্থা নেই। বর্তমানে যেভাবে চলছে, সেভাবে চলবে না বলেই আশা করি। কারণ বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হলে ক্ষতি আওয়ামী লীগেরই হবে।
আর আওয়ামী লীগ তা করবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক কিংবা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেও জনমত বিএনপির পক্ষে যেতে পারে। সুতরাং গণতন্ত্রের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে সংলাপে বসতে হবে। আর না বসলে পরিণতি কী হবে সময়ই তা বলে দেবে। তিনি বলেন, সমঝোতা না হওয়ার কারণ, আপনি-আমি সবাই জানি।
দুজনই অনড় অবস্থানে আছেন। কিন্তু আবারও বলছি, দুই নেত্রীকে সাহস করে এগিয়ে আসতে হবে, সাহস করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সমঝোতা হতেই হবে।
দুই দল অনড় থাকলে সংঘর্ষ অনিবার্য- ড. আকবর আলি খান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে দুই দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে সংঘাত, সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
এটি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে যথা সময়ে নির্বাচন হতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিরোধী দল এটি মেনে নিলে সংলাপ হবে আওয়ামী লীগের এ প্রস্তাব কতটুকু যুক্তিসংগত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এ প্রস্তাব কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বিরোধী দল তাদের প্রস্তাব মেনে নেওয়া এবং না নেওয়ার ওপর নির্ভর করে। তবে বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন করা উচিত।
বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সে নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। উভয় দলের সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন না হলে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে, হতাশা বৃদ্ধি পাবে। রাজনীতিকদের ওপর মানুষের ক্ষোভ বাড়বে। এ সংকট উত্তরণে দুই দলের সমঝোতায় আসতে হবে।
তিনি বলেন, দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে সরকারি দল এবং বিরোধী দলের নমনীয় হতে হবে। খোলা মন নিয়ে সংলাপে বসে তাদেরকেই সমস্যা সমাধান করতে হবে। দেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতা না হলে ফের ওয়ান-ইলেভেন হবে কি না জানতে চাইলে ড. আকবর আলি খান বলেন, ইতিহাসে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে সমঝোতা না হলে আগামী দিনে কী হবে তা এখন বলা যাবে না। তবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দুই দলের সমঝোতা হতে হবে।
অন্যথায় গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলের আমাদের দেশে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে সাধারণ মানুষ অতীতে হুমকির মুখে ছিল এখনো আছে। যথা সময়ে নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দুই দলের শীর্ষ দুই নেত্রীর সংলাপের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সমঝোতাই সমাধানের একমাত্র পথ।
দুই দলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন রাজনীতিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থাকে এখনো আছে। তবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করেই ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ দেখতে হবে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া উচিত নয়।
সংলাপ ছাড়া বিকল্প নেই- রাশেদা কে চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা উদ্ভাবনে সংলাপ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
সংকটময় পরিস্থিতি এড়াতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নমনীয় হতে হবে। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তার মতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কিছু না কিছু ছাড়ের মাধ্যমেই সংলাপ ফলপ্রসূ হবে। তবে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে গত নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে তাদের দায়িত্ব বেশি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের কল্যাণে দুই দলেরই কিছু না কিছু ছাড় দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নমনীয় না হয় তবে দেশের ক্ষতি হবে বলে তিনি ধারণা করছেন। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। আর জনগোষ্ঠীর মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়লে সে সময় স্বার্থান্বেষী মহল মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
সংকটময় এ পরিস্থিতি এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ সাবেক উপদেষ্টা বলেন, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্প কোনো পথ নেই। তবে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গতবার যারা সরকার গঠন করেছিল তাদের দায়িত্ব বেশি। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদের শেষ অধিবেশনে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কোনো সমঝোতায় আসতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নে ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আশা করছি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সমঝোতায় আসবে এবং একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানতে চাইলে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আমি সরাসরি কিছু বলতে ইচ্ছুক নই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার কারণে সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ছিলেন তাদের সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমরা সাবেক উপদেষ্টারা মিলে একটি দল গঠন করেছি! তাই তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমার ধারণা ইতিবাচক। এ বিষয়ে আমি এখনো হতাশ নই।
চলমান রাজনৈতিক সংকটের মেঘ কেটে গিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্যে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেই মনে করছেন রাশেদা কে চৌধুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।