অন্ধকার দেয়ালে তোমার আলো জন্ম দেয় মিথ্যে ছায়াকে.....
সপ্প্রতি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) যেতে হয়েছিল আমার একাডেমিক কাজে। এই বছর এপ্রিলে পাস করার পর এই প্রথম গেলাম কুয়েটে। বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পেলাম যা জানানোর জন্যই মূলত এই লেখা।
কুয়েট সম্পর্কে বলে নিই। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি গুলার মাঝে কুয়েটেই সবচেয়ে দ্রুত বিএসসি কোর্স শেষ হয়।
আমার এখনো মনে আছে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সময় কুয়েটের যে জিনিসটা আমাকে সবচে আকৃষ্ট করেছিলো তা হচ্ছে ক্যাম্পাসটা ছিলো খুবই পরিপাটি। কোনো রাজনৈতিক ব্যানার ছিলো না,ছিলো না যত্র-তত্র দেয়াল লিখন বা পোস্টার। অন্যান্য ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সময় রাজনৈতিক দল গুলোর মিছিল দেখতে পেতাম। কিন্তু কুয়েটে সেটা লক্ষ্য করিনি। বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতি আর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় খুব সুন্দর একটা ভর্তি পরীক্ষা লক্ষ্য করেছিলাম।
পরবর্তিতে যথাসময়ে ভর্তি হলাম। এখানে ভর্তি হওয়ার পেছনে সাধারন ছাত্ররা ৩ টি বিষয় মুলত গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলে মনে হয়েছে-
১। ঠিক সময়(৪ বছরে) এ বিএসসি কোর্স শেষ করা,মানে এখানে কোনো সেশন জট বলে কিছু ছিলো না।
২। রাজনৈতিক কলহ মুক্ত।
আমরা প্রবেশের সময় রাজনৈতিক ততপরতা বলতে গেলে একদমই ছিল না।
৩। শক্ত প্রশাসন। বড় ভাইদের কাছে শুনেছিলাম হরতাল হোক আর যাই হোক,রাত করে হলেও ডিউ টাইমে পরীক্ষা দিতে হত,এমন কি শুক্রবারে হলেও পরীক্ষা নিয়ে ডিউ টাইমে সেমিষ্টার শেষ করে দেয়া হত। মানে পুরা ব্যবস্থাটা ছিলো খুবই গতিশীল।
সত্যিকথা বলতে কি,বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দেড় বছর কোনো রাজনৈতিক মিছিল দেখি নি। ব্যানার পোষ্টার দূরে থাক।
আমি প্রকৃত ছাত্ররাজনীতিকে খারাপ বলব না। কিন্তু আমাদের দেশে যে ছাত্র রাজনীতি চালু আছে তা কেউ ভালো বলতে পারবে না। আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতি স্রেফ তোষামোদ আর লেজুরবৃত্তির রাজনীতি।
কাজেই আমরা কখনও চাই নি কুয়েটে এহেন রাজনীতি প্রবেশ করুক। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখতে পেলাম কুয়েটে রাজনীতি ঢুকে পড়ছে এবং সেটা নোংরা রাজনীতি। মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক আর ছাত্রের মাধ্যমে রাজনীতি ঢোকা শুরু হল। ফাইনাল ইয়ারে (২০০৯ সাল) তা চূড়ান্ত ভাবে দেখতে পেলাম। যথারীতি হানাহানি শুরু হয়ে গেলো এবং ফলশ্রুতিতে কয়েক বার ভার্সিটি বন্ধও ঘোষিত হল।
আগামী দিন গুলোতে এভাবে গন্ডগোলের কারনে পরীক্ষা পেছানো আরও বাড়বে এবং অবশ্যম্ভাবিরূপে সেশন জট হবে তা মোটামোটি বলা যায়।
যাইহোক,প্রথমেই বলেছিলাম ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসের যা আমাকে সবচে আকৃষ্ট করেছিলো তা হলো সেখানে কোনো রাজনৈতিক ব্যানার ছিলো না। এবার কুয়েটে গিয়ে দেখলাম পুরা ক্যাম্পাস ব্যানারে ব্যানারে ভরে গেছে। সর্বত্র ছাত্রলীগের ব্যানার। বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রতি মোড়ে মোড়ে।
দেখে মনে হয় এখানে সবাই মূলত বঙ্গবন্ধুকে জানতে আসে,যেন এটা একটা মিউজিয়াম,কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সস্টিটিউট নয়!আসুন কয়েকটি দেখে নেয়া যাকঃ
১। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ছাত্রলীগের ব্যানার( তাদের নেতা দের শুভেচ্ছা জানিয়ে)
২। অডিটরিয়ামের সামনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের পোষ্টার
৩। অডিটরিয়ামের গেটে বঙ্গবন্ধুর ছবি
৪। ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের সামনে ছবি
৫।
প্রতিটা হলের সামনে এরকম বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগানো(মনে হল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে)
৬। এরকম অসংখ্য ব্যানার পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে
৭। প্রশাসনিক ভবনের পাশে বংবন্ধুর মৃত দেহের ছবি। এই ছবিটাতে আমার সবচে আপত্তি।
আমাদের দেশের একজন মহান নেতা,তার মৃত দেহের ছবি এভাবে প্রদর্শনের মানে কি? এটা আমার কাছে অপমানজনক লেগেছে।
বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে-এমন যে কারোর কাছেই তাঁর এমন মৃত দেহের ছবি টাঙ্গিয়ে রাখাটা অশোভন মনে হবে। আসলে যারা টাঙ্গিয়ে রেখেছে তারা তো বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে না। তারা শুধু মুনাফাটা নিতে চায় আর কিছু না।
দুঃখের বিষয় হবে যখন ক্ষমতার পালা বদলে অন্য দল যখন ক্ষমতায় আসবে তখন এসব পোষ্টার আর ছবি ছিড়ে ফেলা হবে। আর এরকম অন্য নেতার ছবি লাগানো হবে।
পরের দফায় হয়ত সেই ছবিও ছেড়া হবে। আমরা আমাদের নেতাদের সম্মান করতে চাই,কিন্তু এভাবে বাড়াবাড়ি করে সম্মান দেখানো যায় না। তরুন প্রজন্মকে তাদের জাতীয় নেতা সম্পর্কে জানানো উচিত এবং সেটা হওয়া উচিত গঠনমূলক ভাবে। এভাবে যত্র-তত্র ছবি টানিয়ে শুধু কিছু মানুষের রাজনৈতিক অভিলাষই পূরন করা হয়। একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে কই দেয়ালে দেয়ালে টেকনলজীর কথা লেখা থাকবে, সেমিনারের ব্যানার থাকবে,আবিস্কারের সাফল্যের কথা লেখা থাকবে-তা না।
আমদের উল্টা পথে হাটা কি শেষ হবে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।