আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধান গবষেণায় ব্রি’র সাফল্যের চার দশক



১৯৭০ সালের ১লা অক্টবর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে চার দশকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এদেশের ক্রমর্বধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে। বিগত চার দশকে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি অর্থাৎ ১৯৭০ - ১৯৭১ সালে এদেশে চালের উৎপাদন ছিল প্রায় ১কোটি টন। ২০০৯-২০১০ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩কোটি ৩৫ লক্ষ টনে। ২০০৯-২০১০ সালে দেশে আবাদকৃত উফশী ধানের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত চাষ করা হয়েছে এবং এ থেকে পাওয়া গিয়েছে দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৮৭ ভাগ। আর এসব সম্ভব হয়েছে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ও ধান চাষের আধুনিক কলাকৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে।

এ পর্যন্ত ব্রি ৪টি হাইব্রিডসহ ৫৭ টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত এবং শতাধিক ধান চাষের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সর্বাধিক ফলনশীল জাত ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯, মঙ্গা পীড়িত এলাকার জন্য ব্রি ধান৩৩, জোয়ার-ভাটা এলাকার উপযোগী জাত ব্রি ধান৪৪, বন্যা প্রবণ এলাকার জন্য নাবি জাত ব্রি ধান৪৬, লবণ সহনশীল জাত ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, জলমগ্নতা সহনশীল জাত ব্রি ধান৫১ ও ব্রি ধান৫২। ধান গবেষণায় ব্রি’র সাফল্য জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ব্রি উদ্ভাবিত ধানের আবাদ শুধু বাংলাদেশের সীমাবদ্ধ থাকেনি। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে যেমন ভারত, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, চীন, কেনিয়া, ইরাক, ঘানা, গাম্বিয়া, বুরুন্ডি ও সিয়েরালিয়েন সহ অনেক দেশে ব্রি উদ্ভাবিত বেশকিছু উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত আবাদ হচ্ছে।

বিজ্ঞান ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রি ও ব্রি’র কয়েকজন বিজ্ঞানী তিনবার স্বাধীনতা দিবস স্বর্ণপদক ও তিনবার প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, পরিবেশ পদকসহ জাতীয় ও আর্ন্তজার্তিক পর্যায়ে ১৫টি পুরস্কার লাভ করে। একুশ শতকের উষালগ্নে দাড়িয়ে একদিকে যেমন ব্রি’র চার দশকের সাফল্যগুলো আমরা পুলকিত চিত্তে স্বরণ করছি অন্য দিকে তেমনি আগামী দশকগুলোর চ্যালেন্স মোকাবেলায় নতুন নতুন লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দৃপ্ত শপথ নিতে হবে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ ১৭ কোটি মানুষের জন্য চালের উৎপাদন বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ২৫ ভাগ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। খড়া, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা, ঠান্ডা, সহিষ্ণু উন্নত জাত ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়নের তাগিদ এখন আরও তীব্র হয়েছে।

এক্ষেত্রে আশা ব্যঞ্জক তথ্য হলো, ইতোমধ্যে লবণাক্ত ও জলমগ্নতা সহনশীলজাত উদ্ভাবনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। একুশ শতক হচ্ছে প্রযুক্তি উষ্মেষের শতক। এ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি, কলাকৌশল ও জ্ঞান বিজ্ঞানে সজ্জিত হতে হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রযুক্তি গত দিক থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও আর্ন্তজাতিক গবেষনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। কিন্তু একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের ল্যাবরেটরী ও গবেষণা উপকরণ যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরী।

বিজ্ঞানীদের মেধা ও যোগ্যতা বিকাশের জন্য যথাযথ মুল্যায়ন ও প্রতিবেশী দেশ সমুহের বিজ্ঞানীদের ন্যায় পদন্নোতি পদ্ধতি ও আলাদা বেতন কাঠামো দরকার। তাতে বিজ্ঞানীদের কর্মস্পৃহা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি নতুন নতুন ত্বড়িৎ উদ্ভাবিত হবে। আমরা অত্যান্ত আনন্দিত যে, অবিরাম খাদ্য ঘাটতির আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বযংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌছতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি এ সাফল্যের প্রথম কাতারের অংশীদার হিসাবে গর্ববোধ করছে। অবশ্য আগামী দিনেও এ সাফল্যকে ধরে রাখতে আমাদের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।