যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক ,তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে । ২৫৭ , সুরা বাক্বারা । প্রতিবারই রাহেলার মেয়ে হয় । এটা তার ৮ নম্বর মেয়ে । বলল রুপা ।
আমি তাজ্জব হয়ে বলি ৮ নম্বর ? আজকাল এতগুলো বাচ্চা কেউ নেয় ? বুঝাই যাচ্ছে ছেলের আশায় আশায় এত গুলো মেয়ে হয়েছে ।
রুপা আমার নতুন রোগী । আমাকে নানা রকম গল্প বলেই যাচ্ছে । প্রতিবেশীর গল্প , স্বামীর গল্প , শাশুড়ির গল্প ।
পড়ন্ত বিকেল ।
জানালা দিয়ে গোধূলীর আলো এসে ঢুকে পড়েছে । হরতাল , রোগী পত্র কম । জানালা দিয়ে কাছের একটি সরকারি ভবনের চারপাশের গাছপালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ওখানে বাঁশঝাড় আছে , যেগুলি বাতাসে আর মায়াবী রোদে কেমন এক হৃদয় আকুল করা পরিবেশ তৈরী করেছে । হঠাৎ চোখ চলে গেল , বাঁশঝাড়ের সংগে থাকা দুটি তালগাছের দিকে ।
কচি তাল চকচক করছে । আজ জৈষ্ঠের ১ তারিখ । জৈষ্ঠ মাস মধু মাস । সব ফলফলালি এখন পেকে যাবে । কিন্তু তাল পাকার জন্য ভাদ্রের গরম চাই ।
কচি তালের ডাব , কচি তালের ডাব খেতে চাওয়া, ঘর ভরে যাওয়া তালের ডাবে এসব নিয়ে আমি আনন্দময় অতীতে ডুবে যাচ্ছিলাম , সে সময় রুপা র আগমন ।
রুপা কাছে ঘনিয়ে এসে বেশ আগ্রহ নিয়ে গল্প করে যাচ্ছে ।
আমি মনে মনে বললাম , রুপা বলে যাও , তোমার মনে যা যা আছে । স্বামীর গল্প ,শাশুড়ির অবহেলার গল্প , পাড়া প্রতিবেশীর গল্প , যা ইচ্ছা । আজ হাতে সময় আছে , শুনি তোমার গল্প ।
>> হু , তার ৮ নম্বরটাও মেয়ে হইল ।
রুপার মুখে এই কথা শুনলে আমি অবাক হলাম ।
ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট । বরঞ্চ এখন বলা হয় , ১ টি সন্তান হলে আরো ভাল হয় । ৮ নম্বর সন্তান হয়েছে শুনে আমি যে তাজ্জব হলাম , এটা দোষের মধ্যে পড়েনা ।
রুপা এরপর কি বলবে ? ৮ নাম্বারটাও মেয়ে হওয়ার পর রাহেলার স্বামী , ছেলের আশায় আরেকটা বিয়ে আনার চেষ্টা করছে , এরকম কিছু শুনার মানুষিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রুপার মুখের দিকে তাকালাম ।
রুপা সেদিকে না গিয়ে বলল , রাহেলার স্বামী প্রতিবার মেয়ে হওয়ার পর আঁজ ঘরে রেখেই ( আঁতুড় ঘরে ) রাহেলারে দেয়া শুরু করে মাইর ।
>ওহ ,ওহরে আল্লাহ । তারপর ?
>>তারপর মেয়েগুলাকে পালক দিয়ে আসে ।
আমি এক ধাক্কা খেলাম যেন তাই আর কি বলব ভেবে পেলাম না ।
রুপা এবার তার স্বামীর প্রসংসা মুলক ঘটনা হাজির করল । বলা বাহুল্য আমিও রুপার স্বামীর কাজের প্রসংসা না করে পারলাম না ।
রুপার স্বামী ই রাহেলাকে এবার মেয়ে হবার পর মারার হাত থেকে রাহেলাকে বাঁচাল ।
>> আমার স্বামী গিয়ে তাকে গিয়া বুঝাইছে , মহিলারা ছেলে বা মেয়ে পাবে কোথায় , আমরা যা দেই তাই তারা পায় । তুই ব্যাটা এই সব এইসব মারমারি বন্ধ কর ।
রুপার স্বামী এই কথা বলেছে ? ভাবার কোন কারণ কোন কারণ নেই যে রুপার স্বামী শিক্ষিত মানুষ । তাই একজন অশিক্ষিত মানুষের মুখে এরকম সায়েন্টিফিক কথা?
আমি কি সত্যি শুনলাম?
>কি বলছে তোমার স্বামী ? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম ।
>> মহিলারা ছেলে বা মেয়ে কোথায় পাবে , আমরা ছেলেরা যা দেই তাই তারা পায় ।
> রুপার স্বামী তো একেবারেই ঠিক কথাটাই বলেছে । এই কথা কিন্তু সত্যি ।
আহারে যদিও ছেলে মেয়ে হওয়া আল্লাহর কাছ থেকে নির্ধারিত , তবুও বাঁচতে হলে জানতে হবে মহিলাদের কোন ভুমিকাই নেই । এরকম জ্ঞানী স্বামীই যেন সব মেয়ে পায় ।
>> আপা আমার কি বাচ্চা হবে ?
রুপার অবস্থান এখন আল্ট্রাসনোর প্রবের নিচে । জানতাম এই প্রশ্নই ও করবে । সব্বাই এই প্রশ্ন করে ।
যে সব মহিলা জীবনে ডাক্তারের কাছে আসেনি , তারাও জানে ৭ মাসে খুব ভাল ভাবে বাচ্চার সেক্স বুঝা যায় । তারা নিজেরা নিজেরা আল্ট্রাসনো করাতে চলে আসে । ছেলে কি মেয়ে এটা জানার জন্য । অতি উৎসাহী মা বা শাশুড়িও চলে আসে ।
শাশুড়ি বলতে থাকে
কন না আফা , কন , কি বাচ্চা হইব ।
আমাদের আল্লাহ যেইটা দিব , আমরা তাতেই খুশি । আমরা কি ছেলে বা মেয়ে বানাতে পারুম নি । আল্লাহ ই তো দিব । যাই হোক আমাদের কোন সমস্যা নাই ।
এইসব মিষ্টি কথা বলে তারা আসলে ডাক্তারের মন ভুলানোর চেষ্টা করে ।
তারা ডাক্তার কে নিশ্চিত করতে চায় , মেয়ে হলেও এই বউ টাকে তারা কোন গালমন্দ করবেনা । ।
কিছু রোগী আবার এক কাঠি বাড়া ।
>> আপা রিপোর্টে XX লিখে দিলে মেয়ে , XY লিখলে ছেলে , ঠিক না আপা ?
কোন কোন ডাক্তার লিখে দেন ।
আমারো ছেলে হলে বলতে সমস্যা নাই ।
কিন্তু যখনমেয়ে , তখন বাসায় গেলে তার কি অবস্থা করবে এটা নিয়ে ভেবে খারাপ লাগে । মেয়ে হবে এটা বলতে গেলে গলায় আটকে যায় । যদি বলতেই হয় তখন বিরাট ভূমিকা করতে হয় ।
গ্রামের এই অল্প শিক্ষিত মেয়েরা আজ ক্রোমজমের ব্যাপারটা বুঝতে পারে । সবাই কে তাহলে সবকিছু বুঝানো যায় , সায়েন্স কি বলে ।
মেয়ে সামাজিক অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে ছেলে বা মেয়ে তোমার কারণে হয়না । তোমার দুটি ক্রোমোজম থকে দুটোই XX , কিন্তু তোমার স্বামীর দুটি ক্রোমোজম আলাদা ধরনের XY । তোমার স্বামীর X তোমার সাথে মিললে তোমার মেয়ে হবে আর Y মিললে ছেলে হবে ।
এই কথা বুঝতে হবে । শুধু নিজে বুঝলে হবেনা ।
স্বামীকে বুঝতে হবে শাশুড়িকে বুঝতে হবে । বা যারা সমস্যায় আছে , তাদের ও বোঝাতে হবে ।
রুপা তুমি আর তোমার স্বামী যেটা জান এটা ছড়িয়ে দাও , সবাই জানুক । এইটুকু অনেক বেশী , অসহায় মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ।
>> আপা বিয়ের ৯ বছর পর্যন্ত আমার কোন বাচ্চা হয়নি ।
আমার শাশুড়ি বলছে আমাকে বিদায় করে দিতে ।
আমার স্বামী বলল , না , আমার যা কর্তব্য আমি তা করব । আমি ডাক্তার দেখাবো ।
তারপর আমার সন্তান হল । ছেলে হোক , মেয়ে হোক আমার কোন আফসোস নাই ।
আমার স্বামীটা ভাল । শাশুড়ির জ্বালা সহ্য করে পড়ে আছি , স্বামী ভালর গতিকে ।
>> হুম , কি আর বলব । সামাজিক ভাবেই মহিলাদের আসলে অটোইমুন ডিজিজ আছে । এক মহিলা আরেক মহিলাদের দেখতে পারেনা ।
এর কারণ টা কি ? মা হিসেবে অসাধারন কোন মহিলা , যখনি শাশুড়ি হন , ছেলের জীবনের সাথে জড়ানো মেয়েটাকে দেখতে পারে না । শিক্ষিত , অশিক্ষিত সবজায়গাতেই এই ।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মা দিবসের সাথে সাথে বউ মা দিবস পালন করা উচিত । বউ মা দিবসে আধুনিক শাশুড়ি ফেসবুকে পুত্রবধূর প্রশংসা করে নানা রকম স্ট্যাটাস দিবে । আর হোম পেইজ ভরে যাবে অন্য শাশুড়িবউ এর ছবি দিয়ে ।
শাশুড়ি গোপনে তার জন্য গিফট কিনে এইদিনে বউ কে দিয়ে অবাক করে দিবে ।
গ্রামের শাশুড়ি সেদিন বউ কে খাওয়ানোর জন্য ভালমন্দ রান্না করবে । আহ্লাদ করে বলবে , তুই নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখতে পারছ না ? কেমন শুকাই গেছে চেহারা । আয়নায় দেখছোছনি ?
হাহাহা , এরকম দিন আসতেও পারে । আশা করতে দোষ কি ।
ভালবাসায় ভরে যাক সবার জীবন । । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।