আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিংহ-বন্দনা



'সিংহমামা সিংহমামা করছো তুমি কি? এই দেখনা কেমন তোমার ছবি এঁকেছি শিশুতোষ এই ছড়াই বলে দিচ্ছে, গেদাকালে সিংহ আমাদের মামা থাকে। চাঁদকেও শিশুরা 'মামা' ডাকে। কিন্তু বড় হলে মার্জার পরিবোরের সবচেয়ে ডাঙর সদস্য সিংহমামাকে সবাই ভুলে যায়! তবে সিংহের মামা কিন্তু ভাগ্নেকে মোটেও ভুলে না। ভাগ্নের পিছে পিছে এই মামা ছোটে। এই মামার সাহিত্যিক নাম 'ভোম্বল দাস'।

এটা জাতে শেয়াল!!! বলা হয়ে থাকে, ৫ মাইল দূর থেকেও সিংহের ডাক শোনা যায়। সত্যমিথ্যা জানি না। তবে আকাশ গর্জন করলেও সিংহ যে সেদিকে ছুটে যেতে চায়, তার সাক্ষ ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যে রয়েছে বলে চিন্তাহরণ চক্রবর্তী তার বইতে লিখেছেন। অবশ্য প্রাণিবিজ্ঞানীরা এটা স্বীকার করে নিয়েছেন, বনরাজ এ প্রাণির চোখের দৃষ্টি মানুষের চেয়ে ৫ গুণ বেশি। সিংহ শব্দটির প্রথম অস্তিত্ব দেখা যায় যজুর্বেদে।

ঋগ্বেদে সিংহ শব্দটি নেই। ওখানে সিংহের প্রতিশব্দ হিসেবে রয়েছে হিনস ও হিংস। ভাষাবিদদের ধারণা, সংস্কৃত 'হিনস' ধাতুর সঙ্গে 'অ' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে এবং পরে বর্ণবিপর্যয়ে 'হিনস' শব্দটি হয়ে গেছে 'সিংহ'। সিংহ শব্দের অর্থ হচ্ছে 'হিংসক'। হিংসক আর হিংসুক এক জিনিস নয়।

টীকাকাররা হিংসক শব্দের একাধিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে গেছেন। এক ভাষ্যে বলা হয়েছে, 'প্রাণিটি আগে শিকার তাক করে নেয়, হঠাৎ টার্গেটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে না'। এখানেও সিংহের রাজসিক মেজাজের পরিচয় পাওয়া যায়। অন্য এক ভাষ্যে বলা হয়েছে, সিংহ যখন তার টার্গেট করা শিকারের পানে ছুটে যায়, তখন তার দেহ আকারে-প্রকারে বড় হয়ে উঠে। এটাই হিংসক।

আরেক ভাষ্যে বলা হয়েছে, হিংসক মানে 'যে অন্যের হত্যা করা পশু খায় না, নিজে হত্যা করে খায়'। এটাও সিংহের বৈশিষ্ট্য। এটা ঠিক যে, শিকারে বাঘ বা চিতা বাঘের মতো সিংহ দক্ষ নয়। তারপরও এটা পশুরাজ। চালচলন সত্যি রাজসিক।

কাজেকর্মেও রয়েছে চমৎকার পারিপাট্য। মহর্ষি চাণক্যের উপদেশ : সিংহের কাছ থেকে মানুষ যে গুণটি গ্রহণ করতে পারে, সেটি হচ্ছে 'কোনো কাজ যতই ছোট হোক না কেন, যত্ন নিয়ে তা করা। অবিবেচকের মতো কাজ করে অযথা বিপদ ডেকে আনার স্বভাব সিংহের নেই। ' সিংহ হিন্দু ধর্মের সঙ্গেও জড়িত। কারণ সিংহের পিঠে চেপেই দশভুজা দুর্গাদেবী মহিষাসুর বধ করেছিলেন।

মূলত রাতের বেলায় শিকারে নামলেও সুযোগ পেলে দিনেও বেশ দাপটের সঙ্গে সিংহ শিকার করে বেড়ায়। এ কারণেই এটার নাম মৃগেন্দ্র বা মৃগরাজ। উল্লেখ্য, মৃগ শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে, যারা দিনে অন্বেষণ করে জীবিকা অর্জন করে। আবার অন্য প্রাণিদের প্রধান শত্রু বলে সিংহ 'মৃগরিপু'। সঙ্গমেচ্ছা জাগলে এটা মুখ বন্ধ রেখেই এক ধরনের গম্ভীর শব্দ উচ্চারণ করতে পারে।

প্রাণিবিদদের মতে, শিকারের মূল দায়িত্ব সিংহীর। আর সিংহের মূল দায়িত্ব দলকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচানো। দলের সদস্য সংখ্যা ৪০ পর্যন্ত হতে পারে। । তবে চ্যাংড়া সিংহকে দল থেকে ধীরে ধীরে ভাগিয়ে দেয়া হয়।

ওই চ্যাংড়া সিংহ তখন এদিক সেদিক ঘুরে নিজেই একটি দল বানায়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।