বছর কয়েক আগে একবার লোকাল বাসে উঠেছিলাম নিতান্ত বাধ্য হয়ে। আমি সাধারনত লোকাল বাস এড়িয়ে চলি। দূরত্ব অল্প হলে হঠাৎ হঠাৎ লোকাল গাড়িতে চড়ি । বেশিরভাগ সময় তা ও না, বরং আদম গাড়ি ব্যবহার করাটা আমার কাছে অনেক বেশি আকর্ষনীয়। কারণ ওরা যে পরিমানে সময় নষ্ট করে যাত্রী ওঠানোর অজুহাতে সেটা সহ্য করা এক কথায় অসম্ভব।
তাছাড়া ভাড়া নিয়ে গেজাগেজি-খেচামেচি তো লেগেই থাকে।
তো যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় সরকার জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষনা দিয়েছে মাত্র। কাগজে কলমে বাড়েনি। কিন্তু বাসের কন্ডাকটর সবাইকে বলছে, যেখানেই যান না কেন ভাড়া ১ টাকা বেশি দিতে হবে। অনেকেকেই দেখলাম নির্বিকার ভাবে দিয়ে দিল।
ঝামেলা লাগল বরিশালের (কথার টান শুনলে বোঝা যায় ঐ এলাকার বা আশেপাশের, কিন্তু থাকে ঢাকাতেই) এক যাত্রীকে নিয়ে। সে কোন ভাবেই ১ টাকা বেশি দেবে না। কন্ডারটর ও বেশি না নিয়ে ছাড়বে না। বিশাল হাউকাউ।
এরি মাঝে আরেক যাত্রী বলা শুরু করল যে এই কারণেই সে বরিশাইল্লাদের দেখতে পারে না।
১ টাকা দিয়ে দিলে কি হয়, ১ টাকা কি কোন টাকা, ইত্যাদি ইত্যাদি। তার সাথে আরো কয়েকজন যোগ দিলে তা মুহূর্তের মাঝে গালাগালিতে পরিনত হল। চুড়ান্ত বাজে অবস্থা। বরিশালের ওই লোক তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বোকার মত দাড়িয়ে আছে। তার উদ্দেশ্যে গালি থামছেই না।
কাউকে নাস্তানাবুদ করার এই সহজ সুযোগ কেইবা ছাড়তে চায়?
কিছুক্ষণ দেখার পরে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। শুরু করলাম এই বলে যে ”১ টাকাকে টাকা মনে না করার কারণ কি ঘুষের টাকা?” কোন কষ্ট না করে টাকা কামাই করলে যা হয় আরকি, পরের টাকা পরকে দিতে গায়ে লাগার কথা না, ইত্যাদি। প্রথমে গালাগালি করা লোকগুলো আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে মারমুখী ভঙ্গি নিয়ে ফিরলেও বুঝতে পারলো যে সেদিকে খুব একটা সুবিধা হবে না। আমার আকার আকৃতি আবার নেহাত ছোটখাট না। তাছাড়া গালাগালিতে যোগ না দেওয়া বাকী যাত্রীরা গালাগালী করনেওয়ালা দের নধরকান্তি ভূড়িগুলো দেখে ফেলেছে।
আমি ততক্ষণে ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ, শক্তের ভক্ত নরমের যম এরকম হাজার শব্দের মালা গেথে পড়িয়ে দিয়েছি।
পুরা বাস কবরের মত নিস্তব্ধ। আমি মোটামুটি খুশি মনে আমার গন্তব্যে নেমে গেলাম।
টীকা: আমি নিজে তো ১ টাকা বেশি কোনভাবেই দেইনি। কন্ডাকটর বাধ্য হয়েছিল সবার কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে।
সেই সঙ্গে কন্ডাকটরকে ফ্রী উপদেশ দিয়েছিলাম গালিবাজ লোকগুলোর কাছ থেকে যেন কম করে হলেও ১০ টাকা করে বেশি আদায় করে, কারণ ঘুষের টাকা পানিতে ফেলতে তাদের অন্তত গায়ে বাধবে না
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।