ঈদের দুইদিন আগে আমি ও আমার এক বন্ধু ট্রান্স সিলভায় চড়ে এলিফ্যান্ট রোডে যাচ্ছিলাম। নিজের গাড়ি না থাকায় পাবলিক বাসই একমাত্র ভরসা। শাহবাগের মোড়ে ট্রাফিক সিগনালের আগ পর্যন্ত কোথাও তেমন কোন জ্যামের মাঝে পড়তে হয়নি। জানি ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য, কিন্তু এটাই সত্যি।
ট্রাফিক সিগনালে পড়ার পরে দু বন্ধু মিলে আলাপ শুরু করলাম কিছু বিষয় নিয়ে।
টাইম পাস করার জন্য আমাদের বন্ধুদের কিছু টপিক আছে যা নিয়ে কথা শুরু করলে সময় যে কোন জায়গা দিয়ে চলে যায়, আমরা অন্তত ঠাহর করতে পারি না। তবু তার ও একটা লিমিট আছে, এক সিগনালে প্রায় ১২০ মিনিট বসে থাকা হাসি-ঠাট্টার বিষয় না। তার ওপর প্রচন্ড গরম।
তো আমি এক সময় ক্লান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে যতখানি পারা যায় হেলান দিলাম, যদি সামান্য একটু আরাম পাওয়া যায় এই আশায়। হয়তো একটু তন্দ্রাও এসেছিলো।
হঠাৎ ধড়মড় করে সচকিত হয়ে উঠলাম, কারণ ঠিক পেছনের সিটে বসে থাকা এক ভদ্রলোক চুড়ান্ত শাপ-শাপান্ত শুরু করলো যারা প্রাইভেট কারে চড়ে ঘোরে তাদের উদ্দেশ্যে। তার বক্তব্যের সারাংশ ছিলো যে, টাকা থাকলেই সেটা অন্যদের দেখানোর জন্য যারা ফ্যামিলির প্রত্যেক জনের জন্য গাড়ি কেনে তাদের উপর সরকারের এত ট্যাক্স বসানো উচিৎ যাতে করে তারা ওই ট্যাক্ম দিতে দিতে মারা যায়।
এক পর্যায়ে বাস চলা শুরু হলো। ভদ্রলোকের মুখ মেশিনগানের মত চলছেই আর আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম টাইপের হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা কথাবার্তা। ঠিক যেন নন স্টপ ডোর লক বাস সার্ভিস।
আমরা বাটা সিগনালে নেমে যাব। এই সময় বাসের হেলপার এলো তার কাছে ভাড়া চাইতে এবং সে হেলপারের সাথে দর কষাকষি শুরু করলো যাতে ১৪ টাকার ভাড়া ৮ টাকা দিয়ে পার পাওয়া যায়।
আমি ভযংকর একটা ধাক্কা খেলাম, যে লোকের নিজের কোন নীতি নেই, যে বিনা টিকেটে বাসে ওঠে সে কিনা নীতিকাব্য গায়! তাও ইয়ং ছেলেপুলে না, রীতিমত পাকা দাড়িওয়ালা বয়স্ক ভদ্রলোক(!)। এই পর্যায়ে ওই ভদ্রলোককে কিছু বোনা কচু উপহার দেয়ার জন্য মনের ভেতরে আইঢাই করে উঠলো। তাও যেই সেই কচু না, আমার সাথে যে বন্ধু ছিলো ওর বাড়ি মুন্সীগঞ্জে, ক্ষেতের জমি নিচু হওয়াতে বর্ষাকালে পানি জমে আর সেই পানিতে এক রকম কচু জন্মায় যা কেউ খেতে পারে না, কারণ এত চুলকানী হয় যে বিষের মত লাগে।
সেই কচুই দিতে মন চাইছিলো।
পরে চিন্তা করলাম এই লোকের সাথে যদি কথা বলতে যাই তাহলে যে সময়টা নষ্ট হবে তার মূল্য নেহাত কম না। কথা বলে মেজাজ আরো খারাপ করে লাভ নাই।
বাস থেকে নেমে যেতে যেতে এই ভেবে সান্তনা পেলাম যে, ঈশপের “আঙ্গুর ফল টক” গল্পটা আসলেই সার্থক। এই ভদ্রলোককে ভেবেই তিনি বোধহয় গল্পটা লিখেছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।