সামু ব্লগ ভালবাসি। নিয়মিত ব্লগ পড়ি।
আমার মেয়ে ঐশী এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম হয়ে স্বর্ণ জিতেছে। ক্লাশ টেন পড়ুয়া আমার মেয়েটি বিশ্বের সব প্রতিযোগীদের মধ্যে সবোর্চ্চ নম্বর পেয়েছে। ওর ছোট ভাই ওহী পড়ে ক্লাস ফাইভে।
২জন ই খুব ভাল স্টুডেন্ট। নিজের মেয়ে/ছেলে বলে বলছিনা, সত্যিই ওরা মেধাবী!
পুলিশের চাকরি অনেক পরিশ্রমের, রাত-দিন ছুটাছুটি। ওদের মা স্কুল টিচার। আমি যা বেতন পাই তা দিয়ে ঢাকায় একটি ছোটখাট ফ্লাট কেনা হতনা। ২জনই পয়সা জমিয়ে এতটুকু করতে পেরেছি।
জীবন চলতে আর কতই বা লাগে। উপার্জনের সাথে চাহিদার সম্পর্ক আমরা দু'জন ই হিসাব করি। দু'জন এর ব্যস্তাতার মাঝেও আমরা ঐশী-ওহীর দেখাশোনায় কোনা ত্রুটি রাখিনা। গত ঈদে ঐশীর মা অনেক আবদার করেছিল ১টা গলার হার কেনার জন্য; আমি বলেছিলাম , 'তোমার সন্তানেরাই তোমার গয়না, ওদের যত্ন নাও, মরচে পড়তে দিওনা। '' মরচে পড়ার কথা কেন বললাম? হ্যা, ঠিক ধরেছেন।
আজকের যুগের ছেলেমেয়েরা অনেক সুযোগ পাচ্ছে দেশ-বিদেশকে চেনার, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছু হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে তাদের। কিন্তু এসবের ভাল দিকের সাথে সাথে খারাপ দিক ও রয়েছে। এখনকার ছেলেমেয়েদের মোবাইল জিনিসটি ভয়ংকর ব্যাপার বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়াদের হাতে। রাতে নিজের রুমে হঠাৎ দরজা বন্ধ করে থাকে এবং জিজ্ঞেস করলে বললো যে, পড়াশুনা করছে। কম্পিউটার ছেড়ে যে কি পড়াশোনা করে ছেলেমেয়েরা!! ...
ঐশীকে ও মোবাইল, ল্যাপটপ কিনে দিয়েছি।
তবে যন্ত্রগুলোর ব্যবহারে আমরা নিয়ন্ত্রণ রাখি। ঐশী মোবাইলে কার সাথে কথা বলছে, কোন বন্ধুর বাসায় যাচ্ছে বা কারা বাসায় এলো এসব ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট খোঁজ রাখি। কারণ এইসময়টাতে সন্তানের প্রতি অধিক মনযোগী হওয়া প্রয়োজন নাহলে বিপথে পরিচালিত হতে পারে তারা।
ক্লাস সিক্স এ থাকতেই ঐশী কোরআন পড়া শিখেছে। এখন ওহীকে বাসায় এসে পড়ায় হুজুর।
আমি যেমন ওহীকে নিয়ে মসজিদে নিয়ে যাই, তেমনি ঐশী ওর মায়ের সাথে নামায পড়ে।
একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি ঐশী একজন ভাল বিতার্কিক এবং স্কাউটিং সাথে যুক্ত ছিল স্কুলে। ওহীও স্কাউটে আছে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ায় ওদের আগ্রহ বরাবরই। পত্রিকায় মাদকের ভয়াবহতা দেখে ভয় পেত ঐশী।
কারণ সারাদেশেই আজ মাদকের ছড়াছড়ি, এমনকি শিশু- কিশোররাও জড়িয়ে পড়েছে এতে। সীসা- ইয়াবা যেন গ্রাস করছে সমাজকে। এসব চিন্তা করে ঐশী একটু শঙ্কিত বটে। তাই ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়, ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি ওর ইচ্ছে একটি মাদকমুক্ত দেশ গড়ার। আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট মাদকের প্রসার নিয়ন্ত্রণ, পাচার রোধে কাজ করে যাচ্ছে।
নানারকম সীমাবদ্ধতা আছে কাজে, তা আপনাদের আরেকদিন বলি!..
ঐশী-ওহীর পড়াশোনা এবং ফলাফলের খবর জানতে আমরা প্রায়ই স্কুলে যাই। টিচাররাও আমাদের নিয়মিত অবহিত করেন ওদের ব্যাপারে। সবমিলিয়ে আমরা ২ভাই-বোনের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। গোল্ডেন ৫ আর ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি যেন মিস না হয় ওদের!! ওদের যেন মানুষের মত মানুষ করতে পারি এ চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি আর আমার স্ত্রী।
আজ সাংবাদিক আসবে আমার বাসায় ঐশীর সাক্ষাৎকার নিবে বলে।
তাই ঐশী-ওহী একটু উত্তেজিত, সাথে সাথে সুমিটাও (কাজের মেয়ে)। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি গর্বিত। ঐশী আমার আদরের মেয়ে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।